Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

যাকে-তাকে চড় মারতে পারা বা দু’চারটে বোম ছুড়তে পারা চাট্টিখানি ক্ষমতার কথা নয়।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

গুন্ডারা ও বিদ্যাসাগর

বছর কুড়ি আগে ঘটা প্রান্তিক গ্রামের পঞ্চায়েত ভোটের একটি স্মৃতি আজ খুব মনে পড়ছে। ভোট চলাকালীন লাইনের পাশে দুটো বোমা ফেলে ছুটে পালাল ফড়িং। মানুষ ফাঁকা হয়ে যেতে সারা গায়ে পুকুরের পাঁকমাটি মেখে বুথে ঢুকেছিল চুনে আর লেলো। ভয়ে কাঁপতে থাকা হোমগার্ডকে সরিয়ে দিয়ে বুড়ো প্রিসাইডিং অফিসারকে মেরেছিল এক চড়। মাস্টারমশাই কাঁদতেও সাহস করছিলেন না। সমস্ত ব্যালটে ছাপ মেরে মুড়ি বই সমেত বাক্সবন্দি করে দিয়েছিল চুনে। বুথটিতে রিপোল হয়েছিল। কিন্তু চুনে, ফড়িং বা লেলোর কোনও শাস্তি হয়নি। ওরা কেউ ক্লাস সিক্সের ও-পারে যেতে পারেনি। কারণ বাংলা যুক্তাক্ষর আর নামতা শয়তানের মতো চোখ পাকাত ওদের দিকে। ব্ল্যাকবোর্ডে পাটিগণিতের ঐকিক নিয়ম না বুঝতে পারার অপমান চুনেকে যেন কামড়ে ধরে আছে। বুথ থেকে বেরোনোর সময় একটা আস্ত ব্ল্যাকবোর্ড ফার্স্ট পোলিং-এর এর মাথায় ভেঙেছিল সে। তার পর এক দিন পাশ-ফেল বাসি কথা হয়ে গেল। চুনেরা আর ফেল করে না। সবাই এখন কলেজে। যাকে-তাকে চড় মারতে পারা বা দু’চারটে বোম ছুড়তে পারা চাট্টিখানি ক্ষমতার কথা নয়। কলেজ ইউনিয়ন দখল নিতে গেলে এদের কত দরকার! মেধাবী মার্কা ছেলেদের দিয়ে কি এ সব কাজ হয়? লেলো-চুনে-ফড়িংদের বাজারদর দিনে দিনে বেড়ে গিয়েছে।

বিদ্যাসাগর মশাইকে পাশ কাটিয়ে ওরা কলেজের দাদা, যুবনেতা। এখন যদি ওই যুক্তাক্ষর আর বর্ণপরিচয়ের মাস্টার কলেজের সামনে বসে পথ আগলে দাঁড়ায়, তা কি মানা যায়! অমান্য আর অগ্রাহ্য করার ক্ষমতাতেই লেলো-চুনেদের স্বীকৃতি আর প্রতিপত্তি। ভাঙতে পারার ক্ষমতাই তাদের মর্যাদা দেয়। এখন বিদ্যাসাগর সামনে পড়ে গিয়েছেন হয়তো দৈবাৎ। কিন্তু, অবচেতনের একটা সায় যেন কোথাও রয়ে গিয়েছে। তাই মনে হয়, মূর্তিটা তো মূর্তি নয়, উনি এখন ক্ষমতার শত্রু।

স্বপনকুমার মণ্ডল

কলকাতা-৩১

খুলব নাকি

‘প্রমাণ ছাড়া ওঠবোস কান ধরে’ (১০-৫) শীর্ষক খবর পড়ে কয়েকটি গোপন দুর্নীতি বিষয়ে ইঙ্গিত পেলাম। এক দিকে মোদীর কাছে প্রমাণ আছে, তৃণমূলের লোকেরা কয়লা মাফিয়ার কাজে যুক্ত। অন্য দিকে মমতার কাছে পেন ড্রাইভ আছে, যাতে প্রমাণ আছে, বিজেপি মন্ত্রী ও সাংসদরা গরু পাচার, গ্যাস কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। কিন্তু দু’জনেই ‘‘খুলব নাকি’’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেই দুর্নীতি-গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়েছেন। ভোটের মরসুমে এ হেন তথ্যপ্রমাণসমৃদ্ধ ফাইল বা পেন ড্রাইভ বদ্ধ আলমারিতে না রেখে, মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করাই দস্তুর। এ তথ্য এত দিন সামনে আনা হয়নি কেন, এ নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলেরা প্রশ্নও করতে পারে। প্রমাণ থাকলেও চেপে যাওয়ার পিছনে স্বার্থটাই বা কী?

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

পুনঃরায়!

১০-৫-১৯ তারিখের পৃ ১০-এ ‘পায়ে পায়ে’ শীর্ষক ছবিতে দেখলাম, পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে, আগরতলায় মিছিল করছে বামফ্রন্ট। মিছিলের একেবারে সামনে ধরা লম্বা ব্যানারে বড় বড় হরফে লেখা ‘‘পুনঃরায় ভোট চাই।’’ চমকে উঠলাম। প্রকাশ্য রাজপথে এমন দুঃসাহসিক বানান প্রদর্শন! হয় ‘পুনঃ’, নাহয় ‘পুনরায়’, কিন্তু ‘পুনঃরায়’?

কল্যাণ বসু

কলকাতা-১০৯

বেগার খাটনি

১৩-৩-১৯ তারিখে, নির্বাচনের ট্রেনিংয়ের দিন, দ্বিতীয় পোলিং অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হয়ে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে থাকা অবাস্তব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের দিকে আমি আধিকারিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। (ইউবিআই-এর ১৩ সংখ্যার পরিবর্তে ১৪ সংখ্যার অবাস্তব সংখ্যা)। তাঁদের কথামতো অ্যাকাউন্ট নম্বরটি লাল কালি দিয়ে কেটে, সঠিকটি লিখে জমা দিই। তাঁরা আশ্বাস দেন, দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। এর পর দ্বিতীয় ট্রেনিংয়ের আগেই সকলের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গেলেও, আমার টাকা ঢোকেনি। দ্বিতীয় ট্রেনিংয়ে এই ব্যাপারে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বললে, তাঁরা বলেন, ভাবনার কিছুই নেই। ডিসিআরসি অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও ব্যাঙ্কের পাশবইয়ের ফটোকপি জমা করলেই, নগদ হাতে পাওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী ৫ মে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ডিসিআরসি অফিসে যোগাযোগ করলে, এআরও (অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার) জানান, আমার ইউবিআই-এর সঠিক ১৩ সংখ্যার অ্যাকাউন্ট নম্বরের পরিবর্তে, প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে যে ভুল ১৪ সংখ্যার অ্যাকাউন্ট নম্বরটি ছিল, তাতেই নাকি টাকা ঢুকে গিয়েছে! আমার অ্যাকাউন্টে যে কোনও টাকা জমা পড়েনি, তার প্রমাণস্বরূপ তিনি আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও ব্যাঙ্কের পাশবইয়ের ফটোকপি জমা নিয়ে বলেন, দু’দিনের মধ্যে টাকা ঢুকে যাবে। কিন্তু আজও (১২ দিন হয়ে গিয়েছে) টাকা ঢোকেনি। যে সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম, সে দিন ওইখানে একই সমস্যার আরও অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগী ছিলেন। যাঁরা ভোট করাচ্ছেন তাঁদের প্রতি উচ্চ আধিকারিকরা এত উদাসীন দেখে বড় কষ্ট পেয়েছিলাম।

সায়ন মুখোপাধ্যায়

নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

আলতো করে

আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ(?) অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের এক ভোটার। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা খরচ করে যে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে, তাতে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু ফণীর তাণ্ডব থেকে রেহাই পেলেও ভোটের তাণ্ডব থেকে কি আমরা রেহাই পাব?

কিছু স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছি। ওই দিন ছেলের হেলমেটটা মাথায় দিয়ে যাব। গিন্নির পুরনো কুলো পিঠে বাঁধব, কারণ এখন লাঠি এমপি বা সিনিয়র সিটিজ়েন কাউকেই বাদ দিচ্ছে না। পায়ে ছেলের রানিং শু।

জামাকাপড়ের রং কী হবে? গিন্নি বলেছেন সাদা ছাড়া কোনও রং চলবে না। আমার অসুবিধে নেই। কিন্তু মুশকিল গিন্নির। ওঁর সব শাড়ি রঙিন, বা তার ওপরে লতাপাতা, পদ্মফুল বা গোলাপ ফুল আঁকা। গিন্নির ইচ্ছে ছিল গোলাপ ফুলের শাড়িটা পরার। কিন্তু দেখলাম, গোলাপের কাঁটাগুলো অনেকটা ঘাসফুলের ডাঁটার মতো লাগছে। কে ঝুঁকি নেবে? শেষে বললাম, ধুতি পরো, মানে ধুতিকেই শাড়ির মতো করে পরো। আমি বেঁচে থাকতে গিন্নির ধুতি পরতে আপত্তি। অতএব একটা শাড়ি কিনতে হবে।

গত ভোটের সময় আমার ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশ হয়েছিল। পুজো করতে এসেছিলেন এক যুবক। পরেছিলেন লাল গরদ। পুজোর মধ্যে বার বার তাঁর মায়ের ফোন। শেষে আমি ধরতে, উনি বললেন, আমার ছেলে লাল রং পরে আছে। আজ ভোট। তাই আমার খুব চিন্তা। ওকে বলবেন, পুজো হলেই রাস্তার ধার দিয়ে দিয়ে যেন আলতো করে চলে আসে।

আমার প্রশ্ন, আলতো করে বা আলগোছে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে ভিতুর জীবন আর কত দিন? আমরা কেন রুখে দাঁড়াতে পারি না? আমরা কেন বলতে পারি না, আমাদের কোনও দাদা-দিদির দরকার নেই। আমাদের কোনও রাজ্য বা সেন্ট্রাল পুলিশের দরকার নেই। আমজনতা এক হলে কোনও অশুভ শক্তি কাছে আসতে পারবে না।

রঞ্জন মুখোপাধ্যায়

গড়িয়া, কলকাতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE