Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তফাতটা কী হল

কোনও কোনও অ্যাপ-ক্যাবের চালকের ব্যবহারও বেশ খারাপ। গানের আওয়াজ কমাতে বললে রেগে যান, এসি বন্ধ করতে বললে আপত্তি করেন, গাড়ি চালাতে চালাতে ক্রমাগত মোবাইলে কথা বলেন, বেপরোয়া গতিতে চালান।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৩
Share: Save:

অ্যাপ-ক্যাব যখন এসেছিল, কলকাতা শহরের অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বার হলুদ ট্যাক্সির জুলুম থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যেখানে হলুদ ট্যাক্সির চালকেরা পঞ্চাশ টাকা বেশি চাইলেই আমরা তাঁদের ঔদ্ধত্য ও অন্যায় দেখে অবাক হয়ে যাই, অ্যাপ-ক্যাব বুক করতে গেলে প্রায় সব সময় ন্যায্য ভাড়ার দ্বিগুণ, আড়াই গুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।

কোনও কোনও অ্যাপ-ক্যাবের চালকের ব্যবহারও বেশ খারাপ। গানের আওয়াজ কমাতে বললে রেগে যান, এসি বন্ধ করতে বললে আপত্তি করেন, গাড়ি চালাতে চালাতে ক্রমাগত মোবাইলে কথা বলেন, বেপরোয়া গতিতে চালান।

কিন্তু যেটা অবাক লাগে, যখন শহরের যাত্রীরা কোনও কারণে সঙ্কটে পড়েন, হয়তো বন্‌ধ হয়েছে কিংবা হঠাৎ প্রচণ্ড বৃষ্টি বা ঝড়ে সবাই আটকে পড়েছেন, তখন কী অনায়াসে অ্যাপ-ক্যাবের ভাড়া প্রচণ্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ‘তোমরা বিপদে পড়েছ, আমরা তার সুযোগ নিয়ে মুনাফা লুটব’। বাজারের শর্ত হয়তো এমনই, কিন্তু সেই শর্ত না মেনে, যদি সঙ্কটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত সংস্থাগুলি, অর্থাৎ ন্যায্য ভাড়াটা চাইত, তবে শহরবাসী তাদের প্রকৃত বন্ধু মনে করতেন।

রুমা সরকার কলকাতা-৩৩

রক্তাল্পতা

মহিলাদের রক্তাল্পতা বিষয়ে আমাদের রচনাটি (২৪-৩) যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত পত্রগুলি থেকে বোঝা যাচ্ছে। পত্রলেখকদের বেশ কিছু বক্তব্যের সঙ্গে যদিও আমাদের বিরোধ নেই, কয়েকটি বিষয়ে সহমত হতে পারছি না, কারণ বিজ্ঞানীমহলে গ্রাহ্য যে সব প্রামাণিক তথ্যের উপর আমাদের বক্তব্যগুলি দাঁড়িয়ে, তাদের সঙ্গে সেগুলি মেলে না।

শ্যামল চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘শাকপাতা খেয়ে অ্যানিমিয়া সারানোর ধারণা ক্ষতিকর অপবিজ্ঞান’’ কারণ ‘‘উদ্ভিদে থাকে যে লোহা তা অন্ত্র শোষণ করতে পারে না’’। উদ্ভিদে থাকা লোহা অন্ত্র একেবারেই শোষণ করতে পারে না এমন কথা আমরা কোথাও পাইনি। পাওয়ার কথাও নয়, কারণ গবেষণালব্ধ তথ্য সে কথা বলছে না।

জনস্বাস্থ্যের যে কোনও উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তক খুললেই দেখা যাবে হিম (haeme) ও নন-হিম আয়রনের মধ্যে নানা পার্থক্য বিশদ ভাবে বর্ণিত আছে। হিম-লৌহ মাছ-মাংস থেকে পাওয়া যায়, যা শাকসব্জিতে থাকে না। আবার শাকসব্জি থেকে পাওয়া যায় শুধুই নন-হিম-লৌহ। কোন ধরনের লোহা মানবশরীরে কতটা শোষিত হতে পারে, তা নিয়ে নানাবিধ হিসেব পাওয়া যায় গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলি থেকে। মোটামুটি বলা যায়, হিম-লৌহের শোষণের হার যেখানে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ, নন-হিম-লৌহের শোষণের হার অনেক কম। অর্থাৎ গড়পড়তা হিসেবে শাকসব্জি থেকে প্রাপ্ত লোহা শোষিত কম হয়, মাছ-মাংস থেকে প্রাপ্ত লোহার তুলনায়। কিন্তু নন-হিম-লৌহের শোষণের হার শূন্য এমন তথ্য এ যাবৎ কেউ দেয়নি। আবার মাছ-মাংস থেকে প্রাপ্ত লোহার শোষণের হার ৪০ থেকে ৯০ শতাংশ— শ্যামলবাবুর এ তথ্যও গবেষণালব্ধ ফলের সঙ্গে মেলে না। গবেষণায় আরও পাওয়া যাচ্ছে, শরীরে লোহার ঘাটতি বেশি থাকলে নন-হিম লোহার শোষণের হারও বেশি হয়। তার পর যখন ঘাটতি কমে আসে, নন-হিম লোহার শোষণের হার কমে আসে। তবে বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু হয় না। গবেষকরা স্বীকার করেন, লোহা শোষণের বিষয়টি অতিশয় জটিল, এবং তা একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এক দিকে যেমন ভিটামিন সি এবং প্রোটিন লোহা শোষণে সাহায্য করে, অন্য দিকে চা, কফি, এমনকী দুধ বা ডিমও শোষণে বাধা দিতে পারে। শাকপাতার মধ্য দিয়ে নন-হিম লোহা গ্রহণে কারও আপত্তি থাকতেই পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীমহলে স্বীকৃত প্রামাণিক তথ্যকে অস্বীকার করে একে ‘ক্ষতিকর অপবিজ্ঞান’ বলে দেগে দেওয়াও অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।

আশ্চর্যের বিষয়, একাধিক পত্রলেখক আমাদের অভিযুক্ত করেছেন: আমরা লোহাযুক্ত বড়ি বর্জন করে কুলেখাড়া শাক খেতে বলছি। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এই অভিযোগ। শিরোনামেই ছিল ‘আয়রনের বড়ি দিন, কিন্তু মিড-ডে মিলে কুলেখাড়া শাকও থাক’। তবে মিড-ডে মিলে কুলেখাড়া শাকের জায়গায় মাছ-মাংস-ডিম দেওয়া যে অনেক ভাল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একাধিক পত্রলেখকের সঙ্গে আমরা সহমত, খাদ্যবস্তুর সঙ্গে প্রয়োজনীয় লোহা শরীরে নিতে হলে তা প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে যাওয়া অনেক ভাল, যা আমরা নিবন্ধটিতে উল্লেখ করেছি। এও জানি ডাক্তারবাবুরা তসলিমা বা পূজাদের বেশি বেশি মাছ-মাংস-ডিম খেতে বলে তাঁদের কর্তব্য পালনও করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন গরিষ্ঠ মানুষের কাছে সহজলভ্য না হলেও শাকপাতায় লোহার খোঁজ করা যাবে না, জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখলে এ বক্তব্য বিপজ্জনক। ভারত সরকারের ‘গাইডলাইনস ফর কন্ট্রোল অব আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া’ লোহার বড়ির সঙ্গে লোহা-সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকায়ও যথোচিত গুরুত্ব দিয়েছে, আর সে তালিকায় বেশ কয়েকটি ‘শাকপাতা’রও উল্লেখ আছে। সরকারের সব কথায় সর্বদা যে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে তা জোর দিয়ে বলা যায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আছে, অন্তত এ যাবৎ প্রাপ্ত প্রামাণিক তথ্য তাই বলে।

পরিশেষে জানাই, কুলেখাড়া শাকের প্রচার এই রচনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এ রাজ্যে রক্তাল্পতার ব্যাপ্তি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং প্রসূতিদের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগের কারণে রক্তাল্পতা যতটা কমেছে, অন্যদের ক্ষেত্রে যে ততটা কমেনি, এ বিষয়টিতে নজর টানা।

অচিন চক্রবর্তী, সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায় ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতা

স্কুলছুট

‘‘তফসিলি, জনজাতি স্কুলছুট সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ’’ (২-৪) প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিনামূল্যে বই, খাতা, সাইকেল, মিড-ডে মিল দিয়েও ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ের শেষ স্তর পর্যন্ত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার সুবাদে কয়েকটি কারণ অনুধাবন করতে পেরেছি। ইনফ্যান্ট বা নার্সারিতে প্রাথমিক শিক্ষাটুকু না নিয়েই শিশুরা প্রথম-দ্বিতীয় প্রভৃতি শ্রেণিতে ক্রমান্বয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। বইয়ের ভার বাড়ে; কিন্তু ছাত্রছাত্রী কিছুই পড়তে পারে না। পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতেও দেখেছি ছেলেমেয়েরা অক্ষর চেনে না, আ-কার, ঔ-কার জানে না। ফলে পাঠের কাঠিন্য তাদের ক্রমশ ক্লান্ত করে তোলে। যে ছাত্র যুক্তাক্ষর কী জানে না, সে কী করে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়বে ক্লোরোফিল কিংবা সিরাজউদ্দৌলা? দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অভিভাবকদের কাছ থেকে এরা কোনও সহযোগিতা পায় না। ক্লাসে উঠে গেলেই অভিভাবক সন্তুষ্ট হয়ে যান। তা ছাড়া টিউশনি নামক ব্যাধি নিজে শেখার সময়টুকুও হরণ করে। সপ্তাহে পাঁচ দিন টিউশনি সকাল-বিকাল, দুপুরে স্কুল। শিক্ষার্থী নিজে শিখবে কখন? বই ও শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে তার শত্রুতা বা অবন্ধুত্ব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক নয় কি? চারিদিকে কত মজার বিষয়— মোবাইল, টিভি, ফুটবল, ক্রিকেট! এ সব বাদ দিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের সামনে প্রতি দিন পড়তে না পারার বেইজ্জতি, নামতা না জানার লজ্জা কত সহ্য করা যায়? মা-বাবার জোর সিক্স-সেভেন অবধি চলে। এইট-নাইন থেকে অধিকাংশই নিজ দায়িত্বে শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে দেয়। বয়সের সঙ্গে চাহিদা বাড়ে। বই তার কোনও চাহিদাই পূরণ করতে অক্ষম। অতএব স্কুল ছেড়ে দিয়েই সে তার নিজের পছন্দের পথ বেছে নেয়।

স্বপনকুমার মণ্ডল কলকাতা-৩১

ভ্রম সংশোধন

‘‘দু’হাজার পদের জন্য ১৪ লক্ষ’’ খবরে (২৩-৪, পৃ ১৩) লেখা হয়েছে, রেলের নিয়োগের পরীক্ষায় না-বসলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আসলে, পরীক্ষায় বসলে তবেই ফেরত পাওয়া যাবে টাকা। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

App Cab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE