Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪
Editorial News

মুখে মুখে হয় না, সত্যের মধ্যে বাঁচতে হয়

যা বলছি, তাতে বিশ্বাসও রাখতে হয়। সেই বিশ্বাসকেই আজীবন যাপন করতে হয়। তা না হলে সত্য আমাদের সঙ্গ ছেড়ে দেয়, আমরা ভণ্ডামির মধ্যে বাঁচতে শুরু করি। আমাদের অতিপরিচিত কলকাতাও যেন সেই ভণ্ডামিতে গা ভাসাচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৫
Share: Save:

সত্য বড় সরল। কিন্তু সত্য বড় সহজ নয়। সত্য সরল, কারণ সত্যে কোনও জটিলতা নেই। কিন্তু সত্য সহজ নয়, কারণ সত্যের পথে অবিচল থাকা বেশ কঠিন। মুখে সত্যের উপাসক হলেই চলে না। যা বলছি, তাতে বিশ্বাসও রাখতে হয়। সেই বিশ্বাসকেই আজীবন যাপন করতে হয়। তা না হলে সত্য আমাদের সঙ্গ ছেড়ে দেয়, আমরা ভণ্ডামির মধ্যে বাঁচতে শুরু করি। আমাদের অতিপরিচিত কলকাতাও যেন সেই ভণ্ডামিতে গা ভাসাচ্ছে।

কলকাতাকে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বলা হয় কলকাতার নাকি এমন একটা হৃদয় আছে, যা এই উপমহাদেশের অন্য কোনও শহরের নেই। কলকাতার উদারতা, কলকাতার আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা, কলকাতার সহিষ্ণুতা, কলকাতার বহুত্ব প্রশংসিত হয়েছে বার বার। সেই কলকাতা এখন সহজে ঘর ভাড়া দেয় না ভিন্‌ ধর্মীকে। কলকাতা এখন ঘর দিতে চায় না একা মহিলাকে। তাই লিভ-ইন করতে চায় যে যুগল, এই একবিংশ শতকের কলকাতা সেই যুগলকেও বাড়িতে থাকতে দিতে চায় না ঝুট ঝামেলার ভয়ে। এ কোন কলকাতা! নিজেদের শহরের মুখটাকে আয়নায় কখনও এত বিশ্রী লাগেনি দেখতে।

আবার বলি, শুধু মুখে বললেই হয় না, কাজেও করে দেখাতে হয়। ২০০২ সালে গোধরা কাণ্ড এবং গুজরাত দাঙ্গার প্রেক্ষিতে কলকাতার নামটা দেশের মধ্যে খুব উজ্জ্বল ভাবে প্রতিভাত হয়েছিল। গুজরাতের দাঙ্গা পীড়িতদের মুখ হয়ে উঠেছিলেন যিনি, সেই কুতুবুদ্দিন আনসারিকে সে সময় আশ্রয় দিয়েছিল কলকাতা। শুধু কুতুবুদ্দিন নন, তাঁর গোটা পরিবারের গ্রাসাচ্ছদনের ব্যবস্থা করেছিল এই শহর, বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল আনসারিকে। আজকের কলকাতায় শামিম খান নামে নিজের পরিচয় দিলে, ব্রোকার নাকি বলছেন, সব এলাকায় ঘর মিলবে না, একটু অন্য এলাকায় দেখতে হবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এই তিলোত্তমাকে কি আমরা আদৌ চিনি? এই শহরকে কি আদৌ আর তিলোত্তমা নামে ডাকা যায়? সংশয় তৈরি হয়। খুব অচেনা লাগে এই শহরকে। নিজের উদার-উদাত্ত চরিত্র কি হারিয়ে ফেলছে কলকাতা? যদি হারিয়ে ফেলতে থাকে, তা হলে সে বড়ই দুর্ভাগ্যজনক হবে। তবে কলকাতাকে বদলে যেতে দেখে শুধু হা-হুতাশ করাই যথেষ্ট নয়। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার, প্রয়োজনে প্রতিরোধও হওয়া দরকার। চেনা শহর তথা প্রিয় শহরটাকে দেখে যাঁদের মনে হচ্ছে, শহর অচেনা-অপ্রিয় হয়ে উঠছে, তাঁদের সবার সক্রিয় হওয়া উচিত। সচেতনতার লক্ষ্যে নিজের নিজের মত করে কাজ শুরু করা উচিত।

আরও পড়ুন: নিত্যনতুন সঙ্গী নিয়ে আসবেন নাকি! তা হলে ঘর ভাড়া হবে না

এ শহরে বসেই কেউ এক সময় স্বপ্ন দেখতেন গোটা পৃথিবীকে নবজাতকের কাছে বাসযোগ্য করে তোলার। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে, সেই স্বপ্নকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে হবে। নিজেদের শহরটাই নবজাতকের কাছে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে না তো? আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, উদারতা, সহিষ্ণুতা, বিশ্বজনীনতার কথা। শুধু মুখে বললে চলবে না। সে সত্যে বিশ্বাস রাখতে হবে, সে সত্যকে সঙ্গী করেই বাঁচতে হবে। তবেই কলকাতা স্বকীয়তায় অমলিন থাকবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Live in Anjan Bandyopadhyay Couple Goals অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Social Acceptance Newsletter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy