Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

অবস্থান স্পষ্ট করুক বিজেপি

এই ধরনের উদ্‌যাপনে যাঁরা মাতেন, তাঁরা কতখানি সামাজিক তত্ত্ব, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ যথেষ্টই।

প্রজ্ঞা ঠাকুর। ছবি পিটিআই।

প্রজ্ঞা ঠাকুর। ছবি পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৭০ বছর পেরিয়ে এসে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! মহাত্মা গাঁধীকে হত্যা করা হয়েছিল যে তারিখে, সেই ৩০ জানুয়ারি তারিখটিও যে কখনও আনন্দের দিন হিসেবে উদ্‌যাপিত হবে ভারতে, আগে কখনও ভাবতে পারিনি, কল্পনার কোনও সুদূর পরাহত দিগন্তেও এ আশঙ্কা আগে কখনও উঁকি দেয়নি। কিন্তু আমরা দেখলাম মহাত্মার পুতুল বানিয়ে তাতে নকল পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হল, নকল রক্ত গড়িয়ে পড়ল, উল্লসিত হয়ে উঠলেন আয়োজকরা।

Advertisement

এই ধরনের উদ্‌যাপনে যাঁরা মাতেন, তাঁরা কতখানি সামাজিক তত্ত্ব, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ যথেষ্টই। ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদের রং গেরুয়া হয়ে যাওয়ার পর থেকে যে এই সব তত্ত্ব বেশি উৎসাহিত বোধ করছে, তা বেশ স্পষ্ট। সেই প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনও চেষ্টা যে আদৌ হয়নি, তা আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এখন সাধ্বী প্রজ্ঞারা।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি যতটা গভীর ক্ষতস্থান তৈরি হয়েছিল ভারতের বুকে, গত সাত দশকে আর কখনও ততটা হয়নি সম্ভবত। নাথুরাম গডসের বন্দুক থেকে ছিটকে বেরনো গুলির অভিঘাতে কেঁপে গিয়েছিল ভারতের গোটা অস্তিত্ব। সে ধাক্কা সামলাতে বোধ হয় অনেকগুলো বছর সময় লেগে গিয়েছিল আমাদের। কিন্তু এত বছর পরে এসে সেই পুরনো ক্ষতে উপর্যুপরি আঘাত হচ্ছে। গাঁধী হত্যার পরে গোটা জাতি যে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছিল, সেই অনুশোচনার আগুন অনেক বছর ধরে পুড়িয়ে পুড়িয়ে বিনষ্ট করেছে আমাদের পাপকে— ভেবেছিলাম আমরা এ রকমই। কিন্তু সাত দশক পেরিয়ে এসে মনে হচ্ছে, ভুল ভেবেছিলাম। কোথায় অনুশোচনা! কোথায় দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা! কোথায় অপরাধবোধ! পাপ এখনও বইছে শিরায় শিরায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে দেশপ্রেমিক ছিলেন, থাকবেন! ফের বিতর্কিত মন্তব্য প্রজ্ঞার

ভোপাল সংসদীয় আসনের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর বিতর্কিত মন্তব্য এবং ভয়ঙ্কর কার্যকলাপের অভিযোগে কুখ্যাত। তিনি আবার এক ভয়ঙ্কর মন্তব্য করলেন। বললেন, নাথুরাম গডসে দেশপ্রেমিক।

খুব আশ্চর্য হতে হচ্ছে, স্তম্ভিত হতে হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় দল তথা শাসক দল এমন এক জনকে প্রার্থী করেছে লোকসভা নির্বাচনে, যিনি গাঁধী হত্যাকারীকে 'দেশপ্রেমিক' আখ্যা দিচ্ছেন জোর গলায়। আবার সেই দলেরই কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নাম তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী যখনই সুযোগ পাচ্ছেন, নিজেকে গাঁধীর পরম ভক্ত হিসেবে তুলে ধরছেন বা চরকা কাটছেন। এই চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোনও স্থান থাকতে পারে না। বিজেপি-কে অবস্থান স্পষ্ট করতেই হবে। না হলে গোটা দেশকে বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে হবে এবং সেই বিভ্রান্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছড়ানো হচ্ছে বলেই আমাদের ধরে নিতে হবে। সাধ্বী প্রজ্ঞা যে মন্তব্য গডসে সম্পর্কে করেছেন, বিজেপি তা অনুমোদন করেনি এবং সাধ্বীর সমালোচনা করেছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু সাধ্বীদের মতো তত্ত্বকে যে সচেতন ভাবেই বিজেপি-তে ঠাঁই দেওয়া হয়ে আসছে বরাবর, এ কথাও অনস্বীকার্য। এই দ্বিমুখী রাজনীতি চিরন্তন গতিতে চলতে পারে না। হয় এসপার না হয় ওসপার জরুরি। এবং তা এখনই জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.