Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

কানু অধুনা বিদায়ী, এখন রাম বিনে গীত নাই

ধর্মীয় জামাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে এ যাবৎ দূরে সরিয়ে রাখা এ বঙ্গভূমি এ বার তাকেই সাদরে বরণ করে নিল প্রথমে বিরোধী পরে শাসকের হাত ধরেই।

কেন রাজনৈতিক ভাবে পঞ্চেন্দ্রিয় গোচর করে রামনবমী পালনের দরকার পড়ল? ছবি: এএফপি।

কেন রাজনৈতিক ভাবে পঞ্চেন্দ্রিয় গোচর করে রামনবমী পালনের দরকার পড়ল? ছবি: এএফপি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

হে রাম!

আপাতত এই শব্দবন্ধ ছাড়া আর কোনও ভাবে বর্ণনা করা যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের রামনৈতিক পরিস্থিতিকে। যে দেশে রাজনীতি রামকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, সেখানে রাজনীতি শব্দটা পড়ে পিছিয়ে, সামনে উঠে আসে রামনীতি। আপাতত যে খেলায় পশ্চিমবঙ্গীয় মল্লভূমিতে বিজেপি এবং তৃণমূল রণমূর্তিতে। রামরাজ্য বইয়ের কথা, আপাতত রামের দখলদারিই নিশানা দুই যুযুধান শিবিরের। উন্নয়ন বা অনুন্নয়ন, দুর্নীতি বা সুনীতি, সিন্ডিকেট না-সিন্ডিকেট— এই সব দূরে সরিয়ে রেখে প্রধান দুই শিবির এখন রামগানে মত্ত। কানু অধুনা বিদায়ী, এখন রাম বিনে গীত নাই।

অতঃপর, এ বঙ্গীয় সুজন, যিনি রামে ও রহিমে, ঈশ্বরে ও আল্লায়, শিবে ও কৃষ্ণে পার্থক্য করতে শেখেননি জন্মাবধি, যিনি সহাবস্থানকে ঈশ্বরের অনুজ্ঞা হিসাবে শিরোধার্য করেছিলেন এ যাবৎ— তিনি ঈষৎ হতভম্ব। হতভম্ব এই দেখেও, তৃণমূল নামে একটি দল, যারা ক্রমাগত ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ উইকেটে ব্যাট করতে অভ্যস্ত, তারা হঠাৎ এমন রামনামে পাগলপারা হয়ে বিজেপি-র অনুকূল অঙ্গনে ব্যাট করার ঝুঁকি নিল কেন? এ নিয়ে সংশয় নেই, ঈশ্বর বা আল্লা সর্বজনের। কিন্তু এই তত্ত্বে রামও কারও একার নয়, এই হুঙ্কার দিয়ে হারে রে রে বলে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার কেন পড়ল তৃণমূলের? রামনবমী যদি চিরকালীন হয়ে থাকে এবং তার পালনও যদি চিরকালীন ভঙ্গিতেই হত, তাতেই বা অসুবিধা কী ছিল? কেন রাজনৈতিক ভাবে পঞ্চেন্দ্রিয় গোচর করে রামনবমী পালনের দরকার পড়ল?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ কথা বলা যেতে পারে, এ রাজ্যে ক্রমউদীয়মান শক্তি হিসাবে বিজেপি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী রামনবমী পালনের এ ধারাকেও নিয়ে এল বঙ্গীয় ভূমে। বলতে দ্বিধা নেই, গত কয়েক বছর ধরে একে অত্যন্ত অকুশলী ভঙ্গিমায় মোকাবিলা করার পর তৃণমূল কংগ্রেস এ বার অধিকতর অকুশলী আচরণের পরিচয় দিল রামনবমী উদ্‌যাপনের সামূহিক সিদ্ধান্তে।

আরও পড়ুন: প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিলীপের, কার গলা কাটবেন? প্রশ্ন মমতার

আরও পড়ুন: ভোটের তাপ রামনবমীর শোভাযাত্রায়

এবং ধর্মীয় জামাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে এ যাবৎ দূরে সরিয়ে রাখা এ বঙ্গভূমি এ বার তাকেই সাদরে বরণ করে নিল প্রথমে বিরোধী পরে শাসকের হাত ধরেই। অতঃপর সাইকেল বা চাল নয়, আয়ুষ্মান বা স্বাস্থ্যবিমা নয়, এ পশ্চিমবঙ্গ বিদীর্ণ হবে ধর্মীয় উচ্চারণের সরব ঘোষণায়, মন্ত্রের চ্যালেঞ্জে এবং তলোয়ার গদা নিয়ে হোক বা না নিয়ে, রামের অধিকারের প্রশ্নে তুমুল প্রতিযোগিতায়।

এর পরেও বলব না, হে রাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE