Advertisement
E-Paper

উৎসবের এই ভাষা এই রকম হয় কি?

নির্বাচনের সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। অতএব সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন করে পরস্পরকে আক্রমণ করার পরিস্থিত এদেশে নতুন নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০০:৫৭
রাজীব গাঁধীর প্রতি কদর্য আক্রমণ এখনও অব্যাহত। ফাইল চিত্র।

রাজীব গাঁধীর প্রতি কদর্য আক্রমণ এখনও অব্যাহত। ফাইল চিত্র।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসব হিসেবে আমরা আখ্যা দিচ্ছি ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে। যে জনগোষ্ঠী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, সেই জনগোষ্ঠীর আকার বিচার করলে আমাদের এই নির্বাচন অবশ্যই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে উৎসব হিসেবে আমরা আখ্যায়িত করতে পারব কি? উৎসবের আবহ বা উৎসবের ভাষা কি এই রকম হয়?

কখনও দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ‘এক নম্বরের দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে আক্রমণ করছেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। কখনও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘তোলাবাজ’ বলে ডাকছেন তিনি। কখনও প্রধানমন্ত্রীকেই ‘তোলাবাজ’ বলে ডাকছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতেই শেষ নয়। অকালি দলের জাতীয় মুখপাত্র দাবি করছেন দেশের সবচেয়ে বড় গণ-হত্যাকাণ্ডের মদতদাতা ছিলেন রাজীব গাঁধী। কখনও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, মাটি ও কাঁকর মেশানো এমন মিষ্টি নরেন্দ্র মোদীকে পাঠাবেন, যা খেয়ে নরেন্দ্র মোদীর দাঁত ভেঙে যাবে। কেউ বলছেন ‘স্পিডব্রেকার’। কেউ বলছেন ‘এক্সপায়ারি’। রাজনৈতিক পরিভাষাকে এত সস্তা স্তরে নামানো কি উচিৎ হচ্ছে?

নির্বাচনের সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। অতএব সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন করে পরস্পরকে আক্রমণ করার পরিস্থিত এ দেশে নতুন নয়। কিন্তু নীচের স্তরের নেতা বা রাজনৈতিক কর্মীরা যে স্তরে গিয়ে উত্তেজিত আদান প্রদানে জড়িয়ে পড়তে পারেন, সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে মানায় না। তাঁদের কাছ থেকে এমনটা প্রত্যাশিতও নয়। এ বারের নির্বাচনে সে কথা কেউ খেয়াল রাখছেন বলে মনে হয় না।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

শুধুমাত্র পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের আয়োজন করলেই কি গণতন্ত্র হয়? নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের উৎসব হয় তা হলে উৎসবের আবহ ধরে রাখাটাও কি জরুরী নয়? সৌজন্য, শিষ্টাচার, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি— সবকিছু ভুলে গিয়ে যদি পরস্পরকে আক্রমণ করতে হয়, তা হলে ভোটাভুটির মত জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার দরকার কী? পাঁচ বছর অন্তর নিজেদের মধ্যে ধুন্ধুমার যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে বিজয়ীকে শাসক হিসেবে মেনে নিলেই তো কাজ মিটে যায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গণতন্ত্রটা কিন্তু গণতন্ত্রই। গণতন্ত্রটা কোন যুদ্ধ নয়। গণতন্ত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু শত্রুতা থাকতেই পারে না। কারও বিরুদ্ধে কারও যুদ্ধ থাকতেই পারে না। যুদ্ধ ঘোষণার ফল কী হয়, তা আমরা জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে দেখতে পাচ্ছি। আগের নির্বাচনেও ২৮ শতাংশ নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন যে অনন্তনাগে, সেখানে এ বার ভোট দিয়েছেন মাত্র ৯ শতাংশের মত ভোটদাতা। যুদ্ধ ঘোষণার ফল কী হয়, অনন্তনাগ বোধ হয় তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভারতে সব থেকে বড় গণহত্যার মদতদাতা রাজীব গাঁধী, বললেন অকালি নেতা

গণতন্ত্রের নামে কোনও প্রহসনের পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি না তো? বহিরঙ্গে গণতন্ত্রের বিপুল আড়ম্বর, অন্তরে অনেকটাই ফাঁপা— পরিস্থিতি এই রকম হয়ে যাচ্ছে না তো? নিজেদেরকেই প্রশ্ন করার সময় এসেছে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Lok Sabha Election 2019 Akali Party Narendra Modi Congress BJP Rajiv Gandhi Mamata Banerjee লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy