Advertisement
০৭ মে ২০২৪
London diary

লন্ডন ডায়েরি

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:২৮
Share: Save:

শিখদের নিয়ে মন্তব্য, বিপাকে লরেন্স ফক্স

‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’খ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা জেমস ফক্সের ছেলে লরেন্স ফক্স। শিখদের নিয়ে আলটপকা মন্তব্য করে বিপাকে তিনি। দশটা নমিনেশন নিয়ে অস্কার-দৌড়ে রয়েছে স্যাম মেন্ডিস পরিচালিত ‘১৯১৭’। লরেন্স এই সিনেমাকেই সমালোচনায় বিঁধেছেন। বলেছেন, ছবিটি বেখাপ্পা। ছবিটির একটি দৃশ্যে ক্ষণিকের জন্য দেখা গিয়েছে শিখ সিপাই জলন্ধর-কে (নভান রি‌জ়ওয়ান)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের একটি ট্রাকে এক দল শ্বেতাঙ্গ এবং শিখ সৈন্যের মাঝে রয়েছেন তিনি। সংলাপও সামান্য। লরেন্স এই প্রসঙ্গে বলেছেন, সিনেমাটা দারুণ চলছিল। হঠাৎ মনে করিয়ে দেওয়া হল শিখরাও কিন্তু যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তার জন্য মূল কাহিনি থেকে নজর ঘোরানো কেন? লরেন্সের কথায়, এ ভাবে দর্শকের উপর জবরদস্তি বর্ণবৈচিত্র চাপিয়ে দেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবিদ্বেষেরই লক্ষণ।

এই মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। #শিখস এখন ইংল্যান্ডে ‘ট্রেন্ডিং’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের বুকে শিখ সৈন্যদের কুচকাওয়াজ, পাগড়িতে বাঁধা গ্যাস মুখোশ, পরিখায় নেমে যুদ্ধের ছবির বন্যা বইয়েছেন শিখ ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাব্রতীরা। ভারতীয় শিখ বিমানচালকের ছবি ভাইরাল। বলা হয়েছে, ১৫ লাখ ভারতীয় সৈন্য বিশ্বযুদ্ধে লড়েন, তাঁদের অধিকাংশই শিখ। বিব্রত লরেন্স শিখদের উদ্দেশে টুইটারে লিখেছেন, ‘বর্ণজাতিনির্বিশেষে সকল শহিদের মৃত্যুতেই আমি ব্যথিত। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আনতাবড়ি কথা বলে ফেলেছি। মাপ চাইছি।’ এখন বেশ কিছু দিন লরেন্স অন্তত জাতিগত বিষয়ে মুখ খুলবেন বলে মনে হয় না।

ধন্যবাদ অমিকা

অমিকা জর্জের জন্ম লন্ডনে, তবে তাঁর বাবা-মা কেরলের। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অমিকা বোঝেন যে ব্রিটেনে প্রতি দশ জন মেয়ের এক জন স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে না পেরে স্কুলছুট হয়ে যান! পরিবর্তে কাগজ, মোজা ব্যবহার করেন! খাস ব্রিটেনে এই ঘটনায় বিচলিত অমিকা স্কুলে বিনামূল্যে ন্যাপকিনের দাবিতে, ২০১৭-য় শুরু করেন #ফ্রি পিরিয়ডস ক্যাম্পেন। ১০, ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে প্রতিবাদ করেন অমিকা। প্রায় ২,০০০ মানুষ ছিলেন তাঁর সঙ্গে, তাঁদের অঙ্গে লাল রঙের পোশাক। অমিকার দাবি প্রথম মেনে নেয় স্কটল্যান্ড। ২০১৮-র অগস্টে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্কটল্যান্ড শপথ নেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ঋতুকালীন বন্দোবস্ত রাখবে। ইংল্যান্ড ২০২০-র জানুয়ারি থেকে প্রাদেশিক স্কুলে বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণ শুরু করে। অমিকা এখন ১৯, কেমব্রিজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দ্য গার্ডিয়ান-এ লেখেন, রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তৃতা করেন। বলেছেন, এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া অধিকাংশ দেশেই নিষিদ্ধ বলে দাগানো, এর জন্য মেয়েদের কতই না শাস্তি! ২০১৮-য় অমিকার প্রচার ‘গোলকিপার্স গ্লোব’ পুরস্কার পেয়েছে। বিল ও মেলিন্ডা গেটস-এর এই পুরস্কার সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নোবেলের তুল্য। অমিকা এখন গ্রেটা থুনবার্গ, মালালা ইউসুফজাইদের কিশোরী-প্রতিবাদী বৃত্তের উজ্জ্বল নাম।

যুদ্ধযাত্রা: ‘১৯১৭’ ছবির একটি দৃশ্যে শিখ সিপাই জলন্ধর

কালী ও বিপ্লব

ব্রিটিশ মিউজ়িয়ামে ‘তন্ত্র’ নিয়ে প্রদর্শনী আগামী এপ্রিলে। ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত তন্ত্রের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা, আধুনিক নারীবাদে কালীতত্ত্বের প্রভাব প্রদর্শনীর উপজীব্য। ছাপা কাগজ, বই, ক্যালেন্ডারে দেখানো হবে, কী ভাবে সাধক রামপ্রসাদের চোখে মা কালী একই অঙ্গে নিঠুরা ও করুণাময়ী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে রামপ্রসাদি পদেই গর্জে উঠেছিল বাংলার মানুষ। তখন কালীভক্তি ছিল শৌর্যের দ্যোতক। বিপ্লবীরা কালীরূপে ভারতমাতাকে পুজো করেছিলেন। ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের সময় কালীর ছবি হাতে হাতে ঘুরত। এক ঔপনিবেশিক প্রভু কালীর হাতে কাটা মুন্ডুতে ব্রিটিশ সাদৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিলেন। ছবিটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। ব্রিটিশ মিউজ়িয়াম জানিয়েছে, পশ্চিম তন্ত্রকে শুধুই ইন্দ্রিয়পরায়ণ যোগচর্চা মনে করে। কিন্তু তন্ত্র এ ভাবনার বহু ঊর্ধ্বে। এই একচোখো ধারণার সংশোধন এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য। প্রদর্শনীতে সপ্তম শতাব্দীর ভারত, নেপাল, তিব্বত, জাপান ও ইংল্যান্ডের ভাস্কর্য, ছবি ও পূজা-সামগ্রী থাকছে।

কালিকা: ‘তন্ত্র’ প্রদর্শনীর একটি ছবি

লিসা নন্দীর প্রতীক্ষা

জেরেমি করবিনের উত্তরসূরি হতে এখন লিসা নন্দীর মূল লড়াই কির স্টার্মারের সঙ্গে। লিসা ভোটাভুটিতে কিরের থেকে পিছিয়ে থাকলেও দলের ভিতর তাঁর সমর্থন বাড়ছে। শেষমেশ আধাবাঙালিনি লিসা (তাঁর বাবা কলকাতার) কি প্রথম মহিলা এবং জাতিগত ভাবে সংখ্যালঘুর প্রতিনিধি রূপে লেবার পার্টির শীর্ষ আসনে বসবেন? উত্তর আসছে এপ্রিলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

London Diary James Fox
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE