পাহাড়ি অঞ্চল ও জঙ্গলমহলে মন্ত্রিসভার বৈঠক করিবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাগত সিদ্ধান্ত। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ পৌঁছাইতে পারে না প্রশাসনের নিকট। তাই প্রশাসনকেই আসিতে হইবে তাঁহাদের কাছে। তাহার প্রয়োজন কতখানি, ব্যারাকপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক প্রশাসনিক বৈঠকেই তাহার নিদর্শন মিলিয়াছে। বন্ধ কারখানা খুলিতে জবরদখলকারীদের তুলিবার নির্দেশ সে কাজ হয় নাই, এবং এ বিষয়ে পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই লয় নাই, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের সম্মুখে সে সত্য স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, পুলিশ অভিযোগ পাইয়াও কোনও কাজ করে না বলিয়াই কেহ তাহাদের নিকট অভিযোগ করে না। ইহা অতি মূল্যবান উপলব্ধি। স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত নেতা প্রশাসনকে দাবাইয়া রাখিতেছে। অন্যায় ও অবহেলার প্রতিকার পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারা সম্ভব নয় জানিয়া তাহাদের নিকট আবেদন বা অভিযোগ করেন না নাগরিকরা। নীচের স্তরের সরকারি আধিকারিকরা যে জানিয়া-বুঝিয়াও আবশ্যক কর্তব্য না করিয়া বসিয়া থাকিতে পারেন, তাহা শীর্ষ কর্তাদের দূরত্বের কারণে। ফাইলে তাঁহারা যাহা লিখিয়া দিবেন, তাহাই স্থানীয় পরিস্থিতির একমাত্র বয়ান, জানিয়া ব্লক ও জেলাস্তরের কর্তারা নিশ্চিন্ত থাকেন।
প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সহিত স্থানীয় কর্তাদের দূরত্বের সুযোগ লইয়াই দুর্নীতি শিকড় বিস্তার করে, আলস্য জাঁকিয়া বসে, স্বজনপোষণ নিয়ম হইয়া ওঠে। সেই দূরত্ব ভাঙিলে এই বৃত্তগুলিও ভাঙিবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রহিয়াছে। নিয়মিত নজরদারিরও একটি চাপ রহিয়াছে। তাহার ফল ইতিমধ্যেই মিলিয়াছে। কোন প্রকল্পের কী অগ্রগতি হইতেছে, সে বিষয়ে সরকারি কর্তাদের বক্তব্য এলাকার নেতা ও নাগরিকের বক্তব্যের সহিত মিলাইয়া দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন হইয়া যায়। পরীক্ষায় পাশ না করিলে তাৎক্ষণিক ভর্ৎসনাও জোটে। মুখ্যমন্ত্রীর নিয়মিত জেলা সফর এবং প্রশাসনিক বৈঠক জেলা প্রশাসনকে সতর্ক ও তৎপর করিয়াছে। নীতি হিসাবে তাহা সমর্থনযোগ্য, কার্যক্ষেত্রে ফলপ্রসূও। এ দেশের রাজ্যগুলিতে ইহার নজির খুব বেশি নাই।
লক্ষণীয়, মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণায়’ তাঁহার মন্ত্রী-সাংসদরা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করিলেও, জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকের দৃষ্টান্তটি তাঁহাদের অধিকাংশই অনুসরণ করেন নাই। কিছু নির্দিষ্ট বৈঠক করিতে তাঁহারা জেলায় যান ঠিকই। কিন্তু নিয়ম করিয়া নিজের দফতরের নানা প্রকল্পের কাজের মূল্যায়ন করিতে জেলায় প্রশাসনের নানা স্তরের কর্তাদের লইয়া বৈঠক করিবার যে কাজটি করিবার কথা, মন্ত্রীরা এড়াইয়া গিয়াছেন। তাহার ফলে দুই মিনিটে যে সকল প্রশাসনিক সমস্যার সমাধান হইতে পারিত, তাহার জন্য দুই বৎসর ফাইল চালাচালি হইতে থাকে। নিম্নস্তরের সরকারি কর্মীদের সমস্যা শুনিবার, তাঁহাদের কাজে উৎসাহ দিবার প্রয়োজনও চাপা পড়িয়া থাকে। আশা করা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হইয়া শুধু বৈঠক করিয়া ফিরিবেন না মন্ত্রীরা। প্রত্যন্ত এলাকায় নিজের দফতরের কাজ স্বচক্ষে দেখিয়া, সরকারি কর্মীদের সহিত কথা বলিবার সুযোগটিও গ্রহণ করিবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy