Advertisement
E-Paper

মোদীর সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি করে এলেন মমতা

ভয় পাননি মমতা। বরং জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো সক্রিয় তিনি। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৬
হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

বেশ অনেক দিন পর এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এলেন। তিন দিন থাকলেন এবং কলকাতা ফিরে গেলেন। অনেকে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিকে টাটা বাই বাই করে এখন শুধুই জেলা সফর করছেন। মূল ধারণাটি ছিল, সারদা ও নারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের ভয়ে মমতা নিজেকে এ বার গুটিয়ে নিয়েছেন। তিনি দিল্লি আর আসবেন না। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপুল জয়ের পর মমতা এখন গর্তে ঢুকে গিয়েছেন। শেখ হাসিনার তিস্তা চুক্তির জন্য মমতা এলেন বটে, কিন্তু তখনও এই প্রচারের মুখপাত্রেরা বললেন, তদন্তের চাপে মমতার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই তিনি দিল্লি আসতে বাধ্য হয়েছেন। ধারণা ছিল, মমতা সুড়সুড় করে তাই তিস্তা চুক্তিতে রাজি হয়ে যাবেন, আর নারদা তদন্তও আপাতত শিকেয় ঝুলবে।

বাস্তবে কী দেখলাম? সেটাই কি দেখলাম! না, বরং মনে হল মমতা মমতাই। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, হার্ড নাট টু ক্র্যাক। এতটাই যদি মমতা ভীত সন্ত্রস্ত হতেন তা হলে তিস্তার বদলে তোসার্র বিকল্প প্রস্তাব দেন কোন সাহসে? এই বিকল্প প্রস্তাবে শুধু শেখ হাসিনা নন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুশি হতে পারেন না। রাষ্ট্রপতির কথা তো ছেড়েই দিলাম, তিনি তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময় মমতাকে এড়িয়ে মন্ত্রিসভায় তিস্তা পাস করিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আর নরেন্দ্র মোদী নিজে তিস্তা করতে চাইছেন না, এমনটা তো এ দেশের কোনও কূটনীতিকেরই মনে হয় না। পাকপন্থী জঙ্গিরা যে ভাবে বাংলাদেশে সক্রিয় হতে চাইছে, যে ভাবে বাংলাদেশের জমিকে ব্যবহার করে ভারতবিরোধী কাযর্কলাপ চলছে তা রুখতে হাসিনার সরকার বিশেষ ভাবে চেষ্টা করছে। অজিত ডোভালের মতো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চাইছেন তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে আরও শক্তিশালী করা।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

কিন্তু মমতা এবং বাংলাদেশ, এটি যেমন একটি বিষয়, তার সঙ্গে অন্য আর একটি বিষয় হল, মমতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক। আমার মনে হয়, মমতা নিজে শতকরা একশো ভাগ রাজনীতিক। তাঁকে অত সহজে ভয় দেখানো যায় না। বরং মায়াবতীর মতো নেত্রী সিবিআই তদন্ত দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছেন, কিন্তু মমতা ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বলেছেন, উনি খুব ভাল ব্যবহার করেছেন। আমিও ওঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছি। কিন্তু তার মানে এই নয়, ভবিষ্যতে বিজেপি সিবিআই-কে দিয়ে রাজনৈতিক কুৎসা প্রচারের কাজ করবে না। তাই মমতার সঙ্গে মোদীর হল সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।

এক কদম এগিয়ে মমতা দু’কদম পিছোবেন। কিন্তু তাঁর রাজ্যে শতকরা ৩০ ভাগ মুসলমান জনসংখ্যা। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপুল সাফল্যের পর এখন যে খুব তাড়াহুড়ো করে পাল্টা আক্রমণ হানার সময় নয় সেটা মমতাও জানেন। তার মানে কিন্তু এ-ও নয় যে মমতা জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নন। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে ফোনে কথা বলা, আহমেদ পটেল এবং গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে বৈঠক করা, অখিলেশ যাদব-তৃণমূলনেত্রী বৈঠক, অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে বৈঠক— এ সব জাতীয় রাজনীতি নয় তো কী! আসলে মমতা জানেন রাজনীতিতে টাইমিং হল আসল। এখন বিরোধী দল সার্বিক ভাবে চাপের মুখে। পা ভেঙে গিয়েছে। প্লাস্টার রয়েছে। এ অবস্থায় কোনও বিরোধী দলেরই দৌড়নোটা উচিত কাজ নয়। রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা বড় জিনিস। প্রতিপক্ষের ত্রুটির জন্যও অপেক্ষা করতে হয়। প্লাস্টার কাটার পরও কিছু দিন ফিজিওথেরাপি করতে হয়, তার পর আবার দৌড়নো উচিত।

তবে মমতার এই সাম্প্রতিক সফরে একটা ব্যাপার হয়তো হল যে মোদী-মমতার মধ্যে একটা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বরফ গলেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অদূর ভবিষ্যতে মোদী-বিরোধী মঞ্চ গঠনের রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসবেন মমতা।

political leaders Prime Minister Narendra Modi Mamata Banerjee Chief Minister West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy