Advertisement
E-Paper

বাংলার প্রশাসনকেও রাজধর্মের কথা মনে করানো দরকার

শবের মিছিল চলছে যেন রাজ্যে। চার দিনে ন’টি রাজনৈতিক খুন হয়ে গিয়েছে। জখম আরও কত, হিসেব নেই। কত বাড়ি ভাঙল, কত ঘর পুড়ল, কত সংসার উজাড় হল— হিসেব রাখার সময়ই যেন নেই কারও।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৬
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দেশ জুড়ে, বিশেষত বিজেপি শাসিত প্রান্তগুলিতে গণতন্ত্রের অবক্ষয় এবং ধ্বংসপ্রাপ্তির অভিযোগ তুলে বার বার সরব হচ্ছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর নিজের রাজ্যে গণতন্ত্র কতটা সুস্থ রয়েছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা রাজ্যটিতে কি দিন দিন গণতন্ত্রের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে? বাংলায় দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন কেউ তুলুন বা না তুলুন, বাংলার শাসককুলের এখন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানো উচিত।

এক পঞ্চায়েত নিয়ে আর কত অশান্তি দেখতে হবে? আর কত দিন ধরে নিজেদের চারপাশে চাপ চাপ রক্ত দেখতে হবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে? প্রথমে মনোনয়ন পর্ব ঘিরে রক্তের স্রোত, তার পরে প্রচার পর্বে একের পর এক শব, অবশেষে ভোটগ্রহণের দিনে হিংসার পূর্ণগ্রাস! এ বার বোর্ড গঠন শুরু হতেই খুনের পর খুন!। আর কত বিস্মিত হব আমরা? আর কত আশ্চর্য হয়ে তাকাব হিংস্রতায় রক্তাপ্লুত হতে থাকা বঙ্গভূমির দিকে? কোথায় এর শেষ?

শবের মিছিল চলছে যেন রাজ্যে। চার দিনে ন’টি রাজনৈতিক খুন হয়ে গিয়েছে। জখম আরও কত, হিসেব নেই। কত বাড়ি ভাঙল, কত ঘর পুড়ল, কত সংসার উজাড় হল— হিসেব রাখার সময়ই যেন নেই কারও। বোমার ঘন ধোঁয়া, গুলির শব্দ, বারুদের কটূ গন্ধে ভারী হয়ে থাকা বাতাস— সব যেন অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহের অঙ্গ। আতঙ্কে চেয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য! কী হচ্ছে এটা? বিস্মিত প্রশ্ন গোটা বাংলার। কিন্তু বাংলার নিয়ন্ত্রক বা প্রশাসকদের কোনও ভ্রূক্ষেপ রয়েছে কি না, থাকলেও কতটা, ঠিক স্পষ্ট নয়। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে এ রকম তো হবেই— অনেকে আবার হাবেভাবে এমনটাই বোঝাতে চাইছেন সম্ভবত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কোথাও তৃণমূল আর বিজেপি-তে সংঘর্ষ। কোথাও আক্রান্ত কংগ্রেস। কোথাও শাসকের সশস্ত্র সঙ্ঘাত বামেদের সঙ্গে। কোথাও আবার তৃণমূলই তেড়ে যাচ্ছে তৃণমূলের দিকে, তৃণমূলই মারছে, তৃণমূলই মরছে, তৃণমূলই বোর্ড দখল করছে, তৃণমূলই বোর্ড হারাচ্ছে। এ কোন রাজনীতির সাক্ষী হচ্ছি আমরা? একে কি আদৌ রাজনীতি বলা যায়?

কোন দলের কর্মী মরলেন, কোন দলের কর্মী মারলেন, প্রশ্নটা কিন্তু তা নিয়ে নয়। প্রশ্নটা এই সামগ্রিক মরা আর মারা নিয়ে। আরও উন্নততর জীবনের জন্যই তো রাজনীতি। যে কোনও রাষ্ট্রের জন্যই এ কথা সত্য। নাগরিক জীবনের অগ্রগতির জন্যই তো পঞ্চায়েত। কিন্তু আমরা তো ঠিক উল্টো পথে এখন। জীবনের দিকে নয়, রাজনীতির নামে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি আমরা রোজ। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছি প্রতিদিন। হিংসা পরিব্যাপ্ত হচ্ছে দিগ্বিদিকে।

আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হামলা আমডাঙায়, হত তিন

এ রাজ্যের বা এ দেশের রাজনীতিতে হিংসা একেবারে আনকোরা কোনও দৃশ্য নয়। কিন্তু হিংসার সাক্ষী একবার হওয়ার পরে তো সাবধান হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের। রাজনৈতিক হিংসার ভয়াবহতা উপলব্ধি করার পরে তো তার থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত ছিল। তা না করে হিংসায় আরও বেশি করে ডুবে যাচ্ছি আমরা যেন।

এর দায় কার? দায় পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের একাংশের তো বটেই। গণতন্ত্রের এই জরাজীর্ণ দশার দায় বাংলার শাসকদেরও। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয়ের কথা না হয় মানা গেল। কিন্তু সে অবক্ষয় রোখার দায় তো শাসকেরই সবচেয়ে বেশি। অবক্ষয় রোখার দায়টাকে যদি এক পাশে সরিয়েও রাখা হয়, তা হলেও তো শাসকের দায়মুক্তি ঘটে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বটাও তো শাসকেরই। রাজধর্মে অবিচল থেকে সেটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখলেই তো এই অবাধ রক্তস্রোতের পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যের প্রশাসন কি আদৌ ভাবছে এই কথাগুলো?

আরও পড়ুন: নির্বাচন এলেই রক্তে ভেসে যায় আমডাঙা

দেশ জুড়েই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে বলে প্রতীত হচ্ছে। অসহিষ্ণুতার বাড়বাড়ন্ত, কট্টরবাদীদের দাপাদাপি, সে সবের জেরে খুন-জখমের সংখ্যা তো বাড়ছিলই। এ বার অঘোষিত জরুরি অবস্থার ঢঙে দেশ জুড়ে এক ঝাঁক সমাজকর্মীর গ্রেফতারি স্তম্ভিত করে দিল গোটা ভারতকে। তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে তার। বাংলার শাসকরাও দেশের শাসকের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। খুব ভাল কথা। নিন্দনীয় কাজের নিন্দা করা ভাল কথা। কিন্তু বাংলায় আইনের শাসনে যে ভয়াবহ অবক্ষয় নেমে এসেছে, যে ভাবে গণতন্ত্র প্রতি পদক্ষেপে বিধ্বস্ত হচ্ছে, তা রোখার চেষ্টা কোথায়?

মুখ্যমন্ত্রী হিংসার নিন্দা করেছেন। রাজ্যের কোনও প্রান্তে কোনও হিংসাত্মক ঘটনা তাঁর পছন্দ নয় বলে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে এত রক্তপাত কেন হবে? তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তো থামছে না রক্তস্রোত। এ কার ব্যর্থতা? প্রশাসনের? না কি রাজনীতির? উত্তরটা পাওয়া জরুরি।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Violence Bengal Panchayat অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত রাজনৈতিক হিংসা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy