Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Turkey

সংহতির শপথ

পরিহাস ইহাই যে, ইস্তানবুল কনভেনশন স্বাক্ষরিত হইয়াছিল তুরস্কের মাটিতেই, ২০১১ সালে।

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

পছন্দ আমাদের, সিদ্ধান্ত আমাদের, এই রাত আমাদের, এই পথও আমাদের”— দাবি তুলিয়াছেন তুরস্কের মেয়েরা। অগস্টের এক সন্ধ্যায় পথে নামিয়াছিলেন তাঁহারা, রাজধানী আঙ্কারা-সহ বিভিন্ন শহরে। মুখে মাস্ক, হাতে ব্যানার— মেয়েরা আর চুপ থাকিবে না, দীর্ঘজীবী হউক নারী সংহতি। প্রতিবাদের কারণ, প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ইস্তানবুল কনভেনশন হইতে সরিয়া আসিতে চাহেন। সেই ইস্তানবুল কনভেনশন, যাহা হিংসার হাত হইতে দেশের মেয়েদের রক্ষা করিবার এক প্রতিজ্ঞাপত্র স্বরূপ। রাষ্ট্রের প্রতিজ্ঞা। তুরস্ক রাষ্ট্র সেই প্রতিজ্ঞা পালন করিতে পারে নাই। সেখানে গার্হস্থ্য হিংসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই রূপ পরিস্থিতিতে মেয়েদের সুরক্ষাকবচটি সরাইয়া, কার্যত তাঁহাদের অগ্নিমধ্যে নিক্ষেপের ব্যবস্থাটি পাকা করিতে চাহিতেছেন ক্ষমতাসীনরা। মেয়েরা রাস্তায় নামিয়াছেন রাষ্ট্রের এই ভয়ানক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেই।

পরিহাস ইহাই যে, ইস্তানবুল কনভেনশন স্বাক্ষরিত হইয়াছিল তুরস্কের মাটিতেই, ২০১১ সালে। নব্বইয়ের দশক হইতে ইউরোপের মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অব ইউরোপ পারিবারিক হিংসা এবং মেয়েদের উপর নির্যাতন প্রতিরোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা করিয়াছিল। কিছু কালের মধ্যেই স্পষ্ট হয় যে, সর্বত্র নির্যাতিতারা যাহাতে একই ধরনের সুরক্ষা পাইতে পারেন, তাহার জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রবর্তনের প্রয়োজন। ইস্তানবুল কনভেনশনের বীজটি এই উপলব্ধির মধ্যেই নিহিত। ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪৫টি দেশ ইহাতে স্বাক্ষর করে। ২০১২ সালেই তুরস্ক গার্হস্থ্য হিংসা এবং নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আইন প্রণয়ন করিয়াছিল। অথচ, সেই পথপ্রদর্শকই এখন পূর্বোক্ত ঘোষিত নীতি হইতে সরিয়া আসিবার পথে। কারণ হিসাবে দেখানো হইতেছে, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং পশ্চিমি ভাবধারার অত্যধিক বিস্তারকে। পরিবর্তে সরকারের পক্ষ হইতে ইহার এক নূতন সংস্করণ প্রবর্তনের কথা বলা হইতেছে, যাহা নাকি তুরস্কের সমাজ ও ঐতিহ্যের উপযোগী হইবে। মেয়েরা, যাঁহারা প্রতিনিয়ত নির্যাতন এবং হিংসা প্রত্যক্ষ করিতেছেন, এই অসার যুক্তিটিকে গ্রহণ করিতে রাজি নহেন।

তবে ইস্তানবুল কনভেনশন হইতে সরিয়া আসিবার সিদ্ধান্তটি একা তুরস্ক লয় নাই। শুনা যাইতেছে, অচিরেই স্পেন-সহ আরও কিছু দেশ সেই পথের পথিক হইবে। হয়তো সেই দেশগুলিতেও ‘বিকল্প’ ভাবনার কথাটি শুনানো হইবে। কিন্তু সমস্যা যেখানে দেশ-কাল নির্বিশেষে এক, সেখানে প্রতিকারের রাস্তাটিই বা দেশভেদে ভিন্ন হইবে কেন? নারী নির্যাতন রোধে ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রসঙ্গ আসিবে কেন? আসিবে, কারণ মেয়েদের গায়ে হাত তুলিবার স্বঘোষিত অধিকারটি আইনের চক্রে হারাইতে চাহে না পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এই মানসিকতাই বিশ্বের নানা প্রান্তে ডালপালা মেলিয়া আছে। তফাত ইহাই, কোনও দেশ সরাসরি আইনি সুরক্ষা না-দিবার পথে হাঁটে, কেহ নির্দিষ্ট আইন সত্ত্বেও তাহাকে অনায়াসে অগ্রাহ্য করে। কোনও মেয়ে নির্যাতিত হইলে তাঁহারই চরিত্র, আচরণ লইয়া প্রশ্ন তুলিয়া থাকে, অথবা পারিবারিক হিংসাকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবেই স্বীকার করিতে চাহে না। এই দম্ভের বিরুদ্ধে স্বর তুলিতে হইলে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE