Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সহাবস্থান

বিশ্ব পরিবেশের হাল ভয়ঙ্কর বলিলেও কম বলা হয়।

 সেই দৃশ্য। ওক গাছের চারা পুঁতছেন ট্রাম্প এবং মাকরঁ। ফাইল চিত্র

সেই দৃশ্য। ওক গাছের চারা পুঁতছেন ট্রাম্প এবং মাকরঁ। ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

শুধুমাত্র চারাগাছ রোপণ করিলেই হইবে না, তাহার যত্ন লইতে হইবে, যাহাতে সে একটি বৃক্ষে পরিণত হইতে পারে— সাম্প্রতিক বার্তাটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর, পরিবেশ দিবস উপলক্ষে। কথাটি সুশ্রাব্য। কিন্তু যে কোনও সুশ্রাব্য কথাই মূল্যহীন হইয়া পড়ে, যদি না তাহাকে কার্যে পরিণত করা যায়। প্রসঙ্গত, হোয়াইট হাউসের প্রাঙ্গণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ গত বছর যুগ্ম ভাবে যে ওক গাছের চারাটি ঘটা করিয়া রোপণ করিয়াছিলেন, সে মারা গিয়াছে। সে একা মারা যায় নাই। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচুর চারাগাছ রোপণ করা হয়, কিন্তু তাহার সামান্য অংশই বাঁচিয়া থাকে। প্রতিটি চারাকে উপযুক্ত যত্নে লালন করিয়া বৃক্ষে পরিণত করিবার মতো ধৈর্য মানবসমাজ হারাইতেছে।

ভাবিয়া দেখিলে, পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতাও এখন চারাগাছের স্তরে। আড়ম্বরের সঙ্গে একটা আস্ত দিন উপহার দিয়া তাহার সূচনা হইয়াছে ঠিকই, কিন্তু বৃক্ষে পরিণত হয় নাই। সর্বাঙ্গে তাহার অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। পরিবেশ লইয়া গুরুগম্ভীর আলোচনার মেয়াদ বৎসরে বড়জোর একটি সপ্তাহ। অন্য সময় সেই চিন্তাকে লালন করিবার মতো মানসিকতা কই? অথচ, পরিবেশসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক লইয়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং পরিবেশের নিয়মিত ক্ষতিসাধন করিতেছে এমন বিষয়গুলির মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রথম পরিবেশ দিবসের ঘোষণা করিয়াছিল ১৯৭৪ সালে। অতঃপর প্রতি বৎসর ৫ জুন দিনটিকে পৃথিবীব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া পালন করা হয়। পরিবেশ দিবস পালনের সেই উদ্দেশ্যটি যদি মানবসমাজ যথাযথ আত্মস্থ করিত, তাহা হইলে অনুষ্ঠানটি নিছক বাৎসরিক কর্তব্যে পরিণত হইত না।

অথচ বিশ্ব পরিবেশের হাল ভয়ঙ্কর বলিলেও কম বলা হয়। এই বৎসর পরিবেশ দিবসের দিনই প্রকাশিত হইয়াছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেকথ্রু ন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট রেস্টোরেশন নামক সংস্থার এক রিপোর্ট। রিপোর্টে বলা হইয়াছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর নব্বই শতাংশ মানুষ বিলুপ্ত হইবে। রিপোর্টের বক্তব্য: পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) শেষের সে দিনের ছবিটি যথেষ্ট নরম ভাবেই প্রদর্শন করিতেছে। প্রকৃত ছবি অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এই রিপোর্ট অতিরিক্ত ভয় দেখাইতেছে কি না, সেই প্রশ্ন উড়াইয়া দেওয়া যায় না। কিন্তু বিপদ যখন শিয়রে, তখন ভয়ের মাত্রায় অধিকন্তু ন দোষায়। কিন্তু ভয়ের কারণগুলি দূর করিবার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পরিবেশ দিবসে মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উভয়কেই প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের আদর্শটি স্মরণ করাইতে হইয়াছে। অথচ, কিছু কাল পূর্বেও তাহা দেশবাসীর দিনযাপনেরই অঙ্গ ছিল। তাহার জন্য ‘পরিবেশ দিবস’-এর প্রয়োজন হয় নাই। বর্ষার প্রারম্ভে নূতন চারা রোপণে, লৌকিক পূজা-আচার, ব্রত-পার্বণে প্রকৃতির সঙ্গে অন্তরঙ্গতার সুরটি ধরা পড়িত। ইদানীং দেশজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রসঙ্গ অহরহ টানিয়া নিজেদের দেশপ্রেমিক প্রতিপন্ন করিবার প্রয়াস দিকে দিকে প্রকট। প্রকৃতিচেতনার দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি নাগরিকরা মনোযোগ করিলে পরিবেশের কিঞ্চিৎ উপকার হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Tree Saplings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE