স ম্প্রতি এমসিআই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, চিকিৎসক-শিক্ষকরা ৭৫ বছর পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করতে পারবেন। এ ব্যাপারে কিছু বিতর্ক শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার আপত্তি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এর ফলে জুনিয়র শিক্ষকরা প্রমোশন পাবেন না, তাঁদের কেরিয়ার নষ্ট হবে। এমসিআই অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা সব রাজ্য সরকারের মত নিয়েই নতুন নিয়ম চালু করবে।
আমার মনে হয়, এই নীতি নিয়ে জুনিয়রদের ভয়ের কারণ নেই। বর্তমানে ভারতে ৪১৪টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রয়োজনের থেকে অনেক কম সংখ্যক চিকিৎসক-শিক্ষক আছেন। এমসিআই-এর এপ্রিল ২০১০ আদেশ অনুযায়ী চালু কলেজে চিকিৎসক-শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় ১০ শতাংশের কম থাকা চলবে না। আর যে-সব কলেজ নতুন, তাদের শিক্ষকের সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া আছে।
মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের অভাব গোটা দেশেই। অনেক ‘চিকিৎসক-শিক্ষক সাপ্লাই এজেন্সি’ গড়ে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তারা শিক্ষক সাপ্লাই করে সব বেসরকারি কলেজে। শুধু এমসিআই পরিদর্শনের সময় নয়, সারা বছরের জন্যও চিকিৎসক-শিক্ষক ওদের কাছে পাওয়া যায়। তাই হয়তো বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো ছাড়া এমসিআই-এর আর কোনও উপায় থাকছে না। প্রসঙ্গত, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক সময় অবসরের বয়স ছিল ৫৮ বছর, পরে সেটা বেড়ে হয় ৬০, আরও পরে ৬৫। বর্তমানে এমসিআই-এর বয়সসীমা ৭০ বছর, এখন প্রস্তাবিত হচ্ছে ৭৫।
জোড়াতালি দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ চালালে চলবে না, সব শিক্ষক-চিকিৎসক পদ পূরণ করতেই হবে। সরকারকে ‘ডায়নামিক ডেটা বেস অব ফ্যাকাল্টি’ রাখতেই হবে, যা থেকে জানা যাবে এই রাজ্যে কোন মাসে, কোন সাবজেক্টে কত জন অবসর নেবেন এবং ওই সময়ে সেই সাবজেক্টে কত জন নতুন চিকিৎসক-শিক্ষক যোগ দেবেন। সারা রাজ্যের তথ্য এই তথ্যভাণ্ডারে থাকবে। যদি দেখা যায়, কোনও অধ্যাপক অবসর নিচ্ছেন এবং অন্য কোনও শিক্ষক নিয়ম অনুযায়ী সেই পদে যেতে পারছেন না, তখন সেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে রেখে দেওয়া হবে, যত দিন সেই রাজ্যে সেই সাবজেক্টের অধ্যাপক পাওয়া না যায়। সবার সরকারি চাকরির মেয়াদ ৬৫ থেকে ৭০ বা ৭৫ হল, এমন নয়। এই বাড়তি বছর ‘বাফার জোন’ হিসেবে কাজ করবে সিনিয়রদের জন্য।
এম সি আই-এর নতুন আইন অনুযায়ী (জুলাই ২০১৫) অনেক শিক্ষকের পদ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের অনেক পদ বাতিল হয়েছে। সরকার সেই সব বাড়তি হয়ে যাওয়া শিক্ষকদের রাতারাতি তো ফেলে দিতে পারবে না, তবে ভবিষ্যতে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকতে পারে। বাড়তি শিক্ষকদের নতুন নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চাকরি দেওয়া সম্ভব।
বেসরকারি কলেজের ছবিটা আলাদা। অনেক কলেজেই যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক-চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু, এমসিআই শিক্ষকের পদ কমিয়ে দেওয়ায় তার মধ্যেও অনেকেই উদ্বৃত্ত হবেন বলে আশঙ্কা। তাঁরা কী করবেন? কারণ, প্রাইভেট ম্যানেজমেন্ট তো অপ্রয়োজনীয় বা বাড়তি সংখ্যক চিকিৎসক-শিক্ষকদের বসিয়ে বেতন দিয়ে রাখবেন না। যত জন এম সি আই-এর দরকার, তত জনই তাঁরা রাখবেন। এটা একটা বড় সমস্যা হবে। আর যাঁরা বিশেষত প্রি ও প্যারাক্লিনিক্যালে এম ডি করেছেন বা সদ্য পাশ করেছেন, তাঁরা কী করবেন? কারণ এই ছবিটা তো সারা ভারতের।
আগামী দিনে মনে হয় শুধু খুব ভাল ছাত্র ও গবেষকই চিকিৎসক-শিক্ষক থাকবেন। এখন ভারতে ৪১৪টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। বাড়তি শিক্ষকদের নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy