Advertisement
E-Paper

ঝিলে-বিলে ক্রমশ কমে যাচ্ছে শীতের অতিথি

চোরাশিকারিদের হাত থেকে ওদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তবেই বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে পশুপাখি, রক্ষা পাবে আমাদের এই বসুন্ধরা। লিখছেন আবু তাহেরচোরাশিকারিদের হাত থেকে ওদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তবেই বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে পশুপাখি, রক্ষা পাবে আমাদের এই বসুন্ধরা।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫১

শীতের শুরুতেই আনাগোনা শুরু হয় ওদের। তার পরে জাঁকিয়ে শীত পড়তেই ওরা কাতারে কাতারে এসে হাজির হয় সুদূর সাইবেরিয়া, রাশিয়া থেকে। ওদের কোনও পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। প্রকৃতির টানে বছরের এই বিশেষ সময়ে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে ওরা চলে আসে আমাদের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ কিছু জায়গায় এই শীতে ওদের দেখা মেলে। তার পরে আবার ওরা হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চলে যায় সেই সাইবেরিয়ার উপকূলে। আমরা ওদের গালভরা একটি নাম দিয়েছি; ‘পরিযায়ী’।

সেই পরিযায়ী পাখিদের ভিড়ে এক সময় এ রাজ্যে সাজো সাজো রব চলত। কিন্তু দিন দিন তাদের এই ভিড়টা ক্রমশ কমে আসছে। নেপথ্যে ক্রমাগত বেড়ে চলা দূষণই যে দায়ী তা আজ আমাদের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আমরাও বনাঞ্চল জবরদখল করে ধ্বংস করেছি। পশুপাখিদের‌ও আমাদের মতো স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। চোরা শিকারিদেরকে হাতেনাতে ধরার ব্যপারে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে আর‌ও তৎপর হতে হবে।

মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শীতকালের এই দু’তিন মাস পরিযায়ী পাখিদের ঢল দেখা যায়। মতিঝিলের পাড়, লালগোলার চর, সুতির বংশবাটির বিল হচ্ছে শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের অস্থায়ী আবাস। তারা নিশ্চিন্তে এই দু’-তিন মাস সময় একটু গেঁড়ি-গুগলি খেয়ে-দেয়ে আরাম আয়েসে থাকতে আসে। কিন্তু এই শীতের অতিথিরাও রেহাই পাচ্ছে না চোরা শিকারিদের হাত থেকে। জলের সামান্য নীচে বড়শি রেখে তাতে টোপ হিসেবে ছোট ছোট কীটপতঙ্গ কিংবা মাছ লাগিয়ে রাখা হয়। আর তাতেই পাতা হয়ে যায় পাখিদের মরণ ফাঁদ। এক বার এই ফাঁদে পা দিলেই গলার নলিতে আটকে যায় ওই বড়শি। অনেক ক্ষেত্রে আবার শিকারির দল এক প্রকার ভাসা জাল ব্যবহার করে। মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রামের রাস্তার ধারে কিংবা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ম করেই বিক্রির পসরা চলে এই পরিযায়ী পাখিদের। কেজি প্রতি দু’থেকে তিনশো টাকার মতো দাম যেমন রয়েছে তেমনই সাইজ বুঝে বেশি দর হাঁকানো তো রয়েছেই। বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনের তরফে বিশেষ হেলদোল নেই এই চোরা শিকারিদের হাত থেকে পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করার জন্য। ওদের শুধু পরিযায়ী পাখি ভাবলেই হবে না। ওরাও যে আমাদের প্রকৃতির সম্পদ সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই পাখিরাও আমাদের জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এক সময় শীতের সকালে বেড়াতে গেলে কলকাতা ও হাওড়ার বেশ কিছু জায়গায় প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মিলত। সুভাষ সরোবর, রবীন্দ্র সরোবর, চিড়িয়াখানা, হাওড়ার সাঁতরাগাছি ঝিল উল্লেখযোগ্য। শীত এলেই পরিযায়ী পাখিতে ভরে যেত রাজ্যের বেশকিছু অঞ্চল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই ছবিটা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। এখন শীত আসে তবে কলকাতায় তাদের আনাগোনা এক প্রকার নেই বললেই চলে।

পরিবেশবিদদের মতে, শুধু ঝিল বা জলাশয় দূষিত হচ্ছে তাই নয়। আবর্জনা ফেলে বহু ঝিল বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এ দিকে পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে গবেষণা শুরু করেছেন তাঁরা। পাখিদের আনাগোনা এতটাই কমে গিয়েছে যে, মানুষ আলাদা করে আর পাখি দেখার জন্য চিড়িয়াখানায় আসেন না। এক সময় যেখানে পাখির আওয়াজে কান পাতা যেত না এখন সেই চিড়িয়াখানায় পাখি নেই। কোনও বাইরের পাখিও আসে না। একই সঙ্গে শহরের বাকি জলাশয়গুলি নিয়েও যাতে এই গবেষণা চলে সে জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

তা হলে দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র জেলাগুলিতেই নয়, শহরের আনাচকানাচেও পরিযায়ী পাখিদের বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমরা এখনও যদি সচেতন না হ‌ই তাহলে জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস অনিবার্য। আবহাওয়া ক্রমশই বদলে যাচ্ছে আমাদের কাজকর্মে, আমাদের দোষে। এত এত গাছপালা নিধন করেইমারতের পর ইমারত তোলা হয়েছে যে এখন প্রায় নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। শীতকালীন আয়ু কমে যাচ্ছে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে। সারা বিশ্ব ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’-এর কবলে চলে যেতে বসেছে।

সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিবেশবিদরা যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে পারবো তো আমরা একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিন্তা থেকেই বৃহত্তর পৃথিবীর চিন্তা আমাদের মাথায় আনতে হবে। নিজের বাড়ি থেকে শুরু করতে হবে আমাদের এই পরিবেশ রক্ষার কাজ। তারপর আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে তার গণ্ডী। পশুপাখিদের রক্ষার ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। পরিযায়ী পাখিদের উপযুক্ত বিচরণক্ষেত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। চোরাশিকারিদের হাত থেকে তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তবেই বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে পশুপাখি আর রক্ষা পাবে আমাদের এই বসুন্ধরা।

চিকিৎসক

Migratory birds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy