Advertisement
E-Paper

অধিকার

নরেন্দ্র মোদীর ভারত তো নহেই। বিরোধী মতপ্রকাশ দূরস্থান, সরকারকে প্রশ্ন করাই এই ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

জাতির নিরাপত্তা কেবল দুর্গপ্রাকারে নির্ধারিত হয় না। নিরাপত্তার চাবিকাঠি রহিয়াছে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির মর্যাদাতেও। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জানিবার অধিকার প্রতিরক্ষা অপেক্ষাও অধিক মূল্যবান। যাঁহারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তাঁহারা যদি সেই স্বাধীনতা এবং অধিকারকে রক্ষা করিতে চাহেন, তবে ‘কলহপরায়ণ সংবাদপত্র, নাছোড়বান্দা সংবাদপত্র, সর্বত্রগামী সংবাদপত্র’কে সহ্য না করিয়া তাঁহাদের উপায় নাই— ১৯৭১ সালে ‘পেন্টাগন পেপার্স’ নামে খ্যাত মামলার প্রথম পর্বে কথাগুলি বলিয়াছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক। ওই মামলার চূড়ান্ত রায়েও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা বলিবার পরে বিচারপতির মন্তব্য ছিল: এখানেই প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা, সাংবিধানিক সরকারের ভিত্তি। অর্ধ শতাব্দী পরেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে বারংবার সেই মামলার কথা স্মরণ করা হয়, তাহার কারণ দুইটি। এক, একটি গণতান্ত্রিক পরিসরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কত দূর অবধি যাইতে পারে, মার্কিন বিচারবিভাগ তাহা প্রবল প্রত্যয়ে সুস্পষ্ট করিয়া দিয়াছিল। দুই, আজও গণতান্ত্রিক বলিয়া পরিচিত নানা দেশের রাষ্ট্রচালকরা প্রায়শই জাতীয় নিরাপত্তার নামে সংবাদমাধ্যমের সেই স্বাধীনতাকে খর্ব করিতে তৎপর হইয়া ওঠেন। ভারত ব্যতিক্রম নহে।

নরেন্দ্র মোদীর ভারত তো নহেই। বিরোধী মতপ্রকাশ দূরস্থান, সরকারকে প্রশ্ন করাই এই ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। সুতরাং স্বাধীন সংবাদমাধ্যম অনিবার্য ভাবেই তাঁহাদের চক্ষুশূল। রাফাল যুদ্ধবিমান কিনিবার ব্যাপারে সরকারের, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ভূমিকা লইয়া নানাবিধ প্রশ্ন উঠিবামাত্র সপারিষদ প্রধানমন্ত্রী রে রে করিয়া বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দাগিতে শুরু করেন যে, যাঁহারা এই বিষয়ে সরকারি আচরণে সংশয় প্রকাশ করিতেছেন বা যুদ্ধবিমানের দাম ইত্যাদি জানিতে চাহিতেছেন, তাঁহারা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করিতেছেন। কী ক্ষতি? কেন ক্ষতি?

একমাত্র উত্তর: দেশবিরোধী প্রশ্ন তুলিলে পাকিস্তানের সুবিধা হইবে, ইতি জাতীয়তাবাদ! রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হইবার পরে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতে অভিযোগ করে, ওই নথিপত্র অন্যায় ভাবে হস্তগত করিয়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হইয়াছে, সুতরাং উহা গ্রাহ্য হইতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট বুধবার এই দাবি সরাসরি খারিজ করিয়া দিয়াছে। রাফাল মামলার ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির পক্ষে রায়টি স্পষ্টতই তাৎপর্যপূর্ণ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রায়ের পরোক্ষ এবং এক অর্থে গভীরতর তাৎপর্য রহিয়াছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নেও। সাংবাদিক যদি কোনও ‘গোপন’ নথি বা তথ্য পাইয়া থাকেন, তবে তিনি গোপনীয়তা ভঙ্গ করিয়াছেন বলিয়া অপরাধী, এমন কোনও পাইকারি ধারণা গণতন্ত্রে চলিতে পারে না। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সেই নথি জনসমক্ষে প্রকাশ করা চলিবে না, এমন দাবিও বাক্‌স্বাধীনতার কষ্টিপাথরে কঠোর ভাবে যাচাই করা জরুরি। নিরাপত্তার স্বার্থ অবশ্যই তুচ্ছ করিবার নহে, কিন্তু তাহাকে ক্ষমতাবানের ক্ষুদ্রস্বার্থের অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করিয়া বিরোধী মত দমন করিলে নিরাপত্তার ভিতটিই ভিতর হইতে দুর্বল হইয়া পড়ে, কারণ— মার্কিন বিচারপতির উপরোক্ত মন্তব্য আবার স্মরণ করিতে হয়— গণতান্ত্রিক অধিকারের চরমতম স্ফূর্তিতেই সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা। শাসকরাও এই সত্য জানেন, না জানিবার কোনও কারণ নাই। কিন্তু জনসভায় গণতন্ত্রের কথা সাতকাহন বলিয়া এবং সংসদ ভবনের সিঁড়িতে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম ঠুকিয়া তাঁহারা কাজে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করিবার কৌশল খোঁজেন। আপাতত সুপ্রিম কোর্ট সুস্পষ্ট ভাষায় তাঁহাদের একটি কৌশল নস্যাৎ করিয়া দিয়াছে। আপাতত।

Sedition Law Freedom of Speech Modi Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy