Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

পোক্ত রাজনীতিক নন মানছি, তা বলে সাধারণ নীতিবোধটাও নেই!

মাননীয় সাংসদ দেব, আপনি বলেছেন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী অসামান্য কাজ করেছেন। আপনি বলেছেন, আপনি প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন। আপনি কি জানেন না এ বিষয়ে আপনার দলের অবস্থান কী?

আপনি অভিনেতা। পাকা-পোক্ত রাজনীতিক হয়তো এখনও হয়ে উঠতে পারেননি। ছবি সংগৃহীত।

আপনি অভিনেতা। পাকা-পোক্ত রাজনীতিক হয়তো এখনও হয়ে উঠতে পারেননি। ছবি সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৫
Share: Save:

মাননীয় সাংসদ দেব, আপনি বলেছেন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী অসামান্য কাজ করেছেন। আপনি বলেছেন, আপনি প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন।

আপনি কি জানেন না এ বিষয়ে আপনার দলের অবস্থান কী? আপনার সতীর্থরা কখনও সব্জির মালা গলায় নিয়ে, কখনও শূন্য থালা-বাটি হাতে নিয়ে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সংসদের অন্দরেও তাঁরা নোট সঙ্কট নিয়ে সরকারকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছেন। সে সব কি আপনার চোখে একেবারেই পড়েনি?

দেব, আপনি অভিনেতা। পাকা-পোক্ত রাজনীতিক হয়তো এখনও হয়ে উঠতে পারেননি। তাই আপনাকে কিছুটা ছাড় দেওয়া যাক। ধরে নিচ্ছি রাজনীতির প্যাঁচ-পয়জার আপনি সবটা বোঝেন না। তাই সংসদের ভিতরে-বাইরে সতীর্থরা যে ভূমিকা নিয়েছেন, তা দূর থেকে দেখে পুরোটা আঁচ করতে পারেননি। কিন্তু আপনি তো এ দেশের এক জন নাগরিকও। নোট সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে নিজের সহ-নাগরিকদের অবস্থা দেখে, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে, জনজীবনে হঠাৎ হানা দেওয়া দৈনন্দিন বিভ্রাট দেখে আপনার মনে কোনও প্রশ্ন জাগছে না? আচমকা মানুষের হাতে পয়সা নেই, ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারিবদ্ধ মানুষের ভিড়, এটিএম-এর সামনে মধ্যরাতেও ভিড়, হাট-বাজার খালি, ব্যবসা মার খাচ্ছে, চিকিৎসায় সঙ্কট হচ্ছে। এতেই শেষ নয়, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতার বাইরে। তাঁদের সামনে নোট বদলে নেওয়ার বা বাতিল নোট ব্যাঙ্কের খাতায় জমা করে দেওয়ার বা এটিএম থেকে টাকা তোলার সুযোগটাই নেই। ভারতবাসীর এই নিত্য হয়রানির ছবি তো নিশ্চয়ই আপনার চোখেও ধরা পড়ছে দেব। সর্বোপরি যাঁর প্রেরণায় আপনি রাজনীতিতে এসেছেন এবং সাংসদ হয়েছেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের নিত্য হয়রানির প্রতিবাদ জানাতে কী ভাবে দিল্লি গিয়েছেন, কী ভাবে রাজধানীর রাজপথে মিছিল করেছেন, কী ভাবে দু’দফায় রাষ্ট্রপতির দরজায় কড়া নেড়ে এসেছেন, কী ভাবে মোদী সরকারকে রাজধানীর বুকে দাঁড়িয়ে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং কী ভাবে তিনি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সাজাচ্ছেন, তাও তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন দেব। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করলেন কী ভেবে?

আপনি সৌভাগ্যবান। এমন মন্তব্যের পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে, কিন্তু দলের অবস্থানের বিরোধিতা করার অভিযোগ তুলে এখনও আপনাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়নি। প্রশ্নের মুখে আপনাকে দাঁড়াতে হোক বা না হোক, রাজনীতির বুনিয়াদি নৈতিকতাটা কিন্তু আপনাকে শিখতেই হবে দেব। দলে থেকে এবং সাংসদ পদ ধরে রেখে দলীয় অবস্থানের বিপরীতে হাঁটাটা যে নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না, সেটুকু বোঝার জন্য রাজনীতির খুব গভীরে যাওয়ার দরকারও পড়ে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE