Advertisement
E-Paper

শপথ ও পথ

এক সময়ে মাওবাদী রাজনীতির মধ্যে আমূল প্রবিষ্ট মেয়েটি যখন বছর দেড়েক আগে দমদম জেলে আসে, তাহার পর হইতেই এক আলাদা খাতে বহিতে শুরু করে তাহার জীবননদী।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১০
ঠাকুরমণি মুর্মু।—ফাইল চিত্র

ঠাকুরমণি মুর্মু।—ফাইল চিত্র

ঠাকুরমণি মুর্মুর সংবাদটি অনেক দিক হইতেই আলোড়নকারী। মাধ্যমিকে তিরাশি শতাংশ নম্বর পাওয়া এই সাঁওতাল কিশোরীটির পশ্চাৎজীবন ও বর্তমান জীবনের মধ্যে পার্থক্য এতখানি যে সংবাদের দুনিয়ায় সে আলাদা করিয়া নজর কাড়িবেই। এক সময়ে মাওবাদী রাজনীতির মধ্যে আমূল প্রবিষ্ট মেয়েটি যখন বছর দেড়েক আগে দমদম জেলে আসে, তাহার পর হইতেই এক আলাদা খাতে বহিতে শুরু করে তাহার জীবননদী। কিছু দিনের মধ্যে বিপজ্জনক শালবনি স্কোয়াডের নেত্রীকে নানাবিধ অন্য কার্যক্রমের মধ্যে ঢুকিতে দেখা যায়। সেই কার্যক্রমের মধ্যে ছবি আঁকাও ছিল, সাঁওতালি ভাষায় গানও ছিল, নাচের আগ্রহও ছিল, কিন্তু সর্বাপেক্ষা বেশি করিয়া ছিল বিদ্যালয়-পাঠ্যক্রমে মনোনিবেশের আকাঙ্ক্ষা। আকস্মিক ভাবে তাহাকে বোমাবন্দুকের দুনিয়া হইতে মন সরাইয়া লইয়া বিদ্যাচর্চায় আগ্রহী হইতে দেখা গেল। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মেয়েটিকে সহায়তা করিয়াছেন তাঁহাদের কৃতিত্ব ভুলিবার নহে। যে সহবাসীরা মেয়েটিকে সর্ববিধ উপায়ে পড়ায় মন দিতে উৎসাহ দিয়াছিলেন, তাঁহাদের কথাও স্মরণ করিতে হয়। কিন্তু এই সকলের উপরে বলিতে হয় ঠাকুরমণির নিজেরই কথা। নিজের ভিতরে বিরাট আত্মিক জোর ও উৎসাহের বিস্ফোরণ না থাকিলে এই ভাবে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দুনিয়ায় প্রবেশ করিয়া তাহার নূতন রীতিপদ্ধতি শিখিয়া জয়ী হইয়া বাহির হওয়া সামান্য বিষয় নহে। এমন মেয়েদের দেখিয়া মনে হয়, বীরাঙ্গনা ইহারাই। বীরত্ব তো কেবল অস্ত্রশস্ত্র সহযোগেই প্রকাশের বিষয় নহে, বীরত্ব থাকে প্রতিকূলতাকে আনুকূল্যে পরিণত করিবার মানসশক্তির মধ্যে।

অনেকেই ঠাকুরমণির সঙ্গে বাল্মীকির তুলনা করিবেন। তুলনাটি আকর্ষক, কিন্তু অন্য একটি গুরুতর কথাও বলিবার আছে। ঠাকুরমণিরা তো কেবল দুর্বৃত্তগিরির জন্য দস্যুতা করিত না, মাওবাদী রাজনীতির একটি মহত্তর আদর্শ তাহাদের তরুণ মনকে টানিয়াছিল। সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জিয়া উঠিবার পথ ছিল তাহাদের সহিংস রাজনীতি। সেই পথ একেবারেই ভ্রান্ত ও অনৈতিক, কিন্তু বহু শতকের অন্যায়-অত্যাচার-অনাচারই ঠাকুরমণিদের এই বিভ্রান্তিতে টানিয়া লইয়া গিয়াছিল। মেয়েটি তাহার পরিচিত চৌহদ্দি দেখিয়া ছেলেবেলাতেই বুঝিয়া লইয়াছিল, পরিবর্তন আনিবার শপথ ছাড়া জীবন অতিবাহন অসম্ভব। আজ যে সে সংগ্রামের পথ ছাড়িয়া শিক্ষালাভের পথে আসিয়া পড়িল, তাহাতে কি তাহার শপথ মিথ্যা হইতে বসিল? ঠাকুরমণি নিজে কী ভাবিতেছে, বলা কঠিন। কিন্তু শপথটিকে সত্যে পরিণত করিবার সম্ভাবনা, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করিবার সম্ভাবনা এই পথ-পরিবর্তনে বাড়িল বই কমিল না। কৃতী মেয়েটি আরও পড়াশোনা করিয়া জীবিকাপথে কাজ খুঁজিয়া লইয়া যদি উজ্জ্বলতর কৃতিত্বের অধিকারী হয়, তবে তাহার দেখাদেখি তাহার সমাজের আরও অনেক ছেলেমেয়ে স্বনির্ভর হইতে আগাইয়া আসিবে। নিজের গ্রাম/অঞ্চলকে উন্নত করিতে পারিবে। সরাসরি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে শিক্ষাবিস্তার ও কর্মসুযোগ-সৃজনের কথা ভাবিতে পারিবে। স্ব-বলী হইয়া উন্নয়নের নামে অত্যাচার কিংবা প্রযুক্তির নামে প্রবঞ্চনা ঠেকাইতে পারিবে। ইহা এক অন্য যুদ্ধের ভিন্ন অস্ত্র, যাহার নাম— শিক্ষাস্ত্র।

Leader Maoist Madhyamik Letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy