Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

ট্রাম্প ও মোদীর লাভ, ভারতের?

কয়েক মাস কেটেছে। মার্কিন মুলুকে এখন নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে। এরই মধ্যে স্বরাজ্য গুজরাতে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মার্কিন নেতাকে তুলে ধরতে বেজায় তৎপর হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

কৌশিক ভৌমিক
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০০:২৩
Share: Save:

চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কূটনীতির বেড়াজাল টপকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার লক্ষ্যে কি সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী?

মাত্র পাঁচ মাস আগে হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ সভায় পঞ্চাশ হাজার ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের উল্লসিত জনজোয়ারের মধ্যে মোদী ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে তাঁর ‘আমেরিকাকে উন্নতির শিখরে টেনে তোলার’ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে ঘোষণা করেছিলেন ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’। প্রায় ট্রাম্পকে জয়যুক্ত করার খোলা আবেদন আর কী।

কয়েক মাস কেটেছে। মার্কিন মুলুকে এখন নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে। এরই মধ্যে স্বরাজ্য গুজরাতে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মার্কিন নেতাকে তুলে ধরতে বেজায় তৎপর হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

ভারতের প্রথাগত কূটনৈতিক নিয়ম পালনে বিচ্যুতি ঘটল এইখানেই। বিদেশের কোনও নির্বাচনে ভারতের দিক থেকে কোনও প্রার্থীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন জানানো অথবা সেখানকার ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার কোনও পূর্ব নিদর্শন নেই। মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহ বিদেশে নির্বাচনের সময় সেই দেশে ভ্রমণ বা সেখানকার নেতাদের সঙ্গে মোলাকাত এড়িয়ে চলতেন।

এই প্রথম নয়। গত বছর ইজ়রায়েলে নির্বাচনের প্রাক্কালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মোদীর ছবিতে ছয়লাপ হয়েছিল তেল আভিভ। ব্রিটেনে নির্বাচনের সময়ও সে দেশে মোদীর দলীয় শাখা কনজ়ারভেটিভ দলের বরিস জনসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য সেখানকার ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচার চালায় বলে জানা গিয়েছিল। লেবার পার্টির জেরেমি করবিন কাশ্মীরে মোদীর নীতির সমালোচনা করেন, ফলে মোদী সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বেঁকে বসে।

এ বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে মোদী মোটেই ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন না। কিন্তু খোদ ট্রাম্পের ন্যাশনাল প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকএনানির টুইট অবশ্য জানাচ্ছে, ট্রাম্পের ঝুলিতে রয়েছে মোদীর হাত মিলিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুই সফরেরই লক্ষ্য ইন্ডিয়ান-আমেরিকান সম্প্রদায়কে ট্রাম্পের কাছে টানা, আর মোদী এতে সহযোগিতা করছেন। নিউ ইয়র্ক, স্যান হোসে ও হিউস্টনে মোদীর সভায় যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েক হাজার ইন্ডিয়ান-আমেরিকান সমর্থক। আগের বার ট্রাম্প এঁদের থেকে পেয়েছিলেন মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট। প্রসঙ্গত, মোদী সেই নির্বাচনে ট্রাম্পকে নিয়ে এত মাতামাতি করেননি। মোদীর এ বারের নীতির ফলে ভারত আগে যে ভাবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমান সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারত, তাতে অনেকটা ভাটা পড়বে। এ বার আমেরিকা ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পেলে ভারতের পক্ষে তা হয়তো সুখপ্রদ হবে না।

তবে মোদী কতটা ‘লাকি চার্ম’ হবেন, সেটা স্পষ্ট নয়। কানাডার স্টিফেন হার্পার এবং অস্ট্রেলিয়ার টনি অ্যাবট নির্বাচনের আগে মোদীর সঙ্গে সখ্য করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। হেরেছেন। তবে এর ফলে মোদী নিজের দেশে তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা অনেকটাই বাড়িয়ে নিচ্ছেন সন্দেহ নেই।

ট্রাম্পকে নিয়ে মোদীর এই মাতামাতির পিছনে আর একটা সমীকরণও হয়তো কাজ করছে: চিন। গত বছরের শেষ দিকে ভারত ঘুরে গিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। দক্ষিণ ভারতের মমল্লপুরমে মোদীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরেছেন। আগের তুলনায় বেশ কিছুটা বরফও গলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে। এটাও আজকাল শোনা যাচ্ছে, আমেরিকার পাঁড় শত্রু চিন নাকি ট্রাম্পকেই আবার হোয়াইট হাউসে দেখতে চান। কারণ চিনের কাছে ট্রাম্প এমন এক দুর্বল মার্কিন রাষ্ট্রনেতা যিনি বর্ষণের তুলনায় গর্জন করেন বেশি। গত বছর ডিসেম্বরের ‘ফরেন পলিসি’ পত্রিকায় পড়া গিয়েছে ‘‘ট্রাম্প ইজ় বেজিং’স বেস্ট অ্যাসেট’’। চিনাদের এক বড় অংশ মনে করেন ট্রাম্প কিছু ভ্রান্ত নীতি প্রণয়ন করে তাঁর দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমশ যে ভাবে দুর্বল করে তুলছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছতে পারবে চিন। তাদের মতে ট্রাম্প আরও চার বছর মার্কিন নেতৃত্বে থাকলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চিন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে অনায়াসেই। অর্থাৎ দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পকে নিয়ে ভারতের মতো দেশ হইচই করলে চিনের তাতে প্রচ্ছন্ন প্রসন্নতা হওয়ারই সম্ভাবনা, মনে হয়।

এই পরিস্থিতিতে মোদীর এই বিদেশনীতি কতটা ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে, এই হিসেবটাই তা হলে বাকি রইল। এইটুকু বলা যেতে পারে, কোনও ভিন্‌রাষ্ট্রের সরকারি নীতিকে সমর্থন করার থেকে সে দেশের বিশেষ কোনও দলের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে সহযোগিতা করা যে বেশ বিপজ্জনক একটা নীতি, এইটুকু ধরে নেওয়াই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE