সুষমা স্বরাজ
কিন্তু কার্ল মার্কসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বলশেভিক বিপ্লব করলেন লেনিন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের কী পরিণতি দেখলাম আমরা। দুনিয়া থমকে দেওয়া সেই তিন দিনটি মনে করুন, শুধু দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন মনে রাখলে হবে?
গোরবাচেভ তিন-চার দিনের জন্য ছুটি উপভোগ করছিলেন তাঁর স্ত্রী, জামাতা-কন্যা ও নাতনিদের নিয়ে। এ সময় সন্ধ্যের দিকে একটি সোভিয়েত টোপোলেভ ১৩৪ প্লেন ক্রিমিয়াতে নামল। এলেন কেজিবি-র জেনারেল ইউরি প্লেখানভ। গোরবাচেভ তাঁকে আসতে বলেননি, কিন্তু কেজিবি-র নির্দেশে তিনি এসেছেন। এবং তাঁকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ নিয়ে। গোরবাচেভ দেখলেন, তিনি যে প্রাসাদে আছেন তার সমস্ত টেলিফোনের লাইন কাটা। স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করলেন এবং তারপর ইয়ানায়েভ ক্ষমতাসীন হলেন। প্রাভদা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর গন্ডগোল, এলেন ইয়েলেৎসিন।
ভারতের ইতিহাস সুপ্রাচীন। ভারতীয় সভ্যতাও সুপ্রাচীন। মোগল সাম্রাজ্য, তার পর ব্রিটিশরাজ, তার পর স্বাধীন ভারতের পথ চলা। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার দেখিয়েছেন, মোগল সাম্রাজ্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি যা-ই হোক, ভারতে এই দীর্ঘ শাসন এক অখণ্ড বিস্তৃত কিন্তু কেন্দ্রীভূত ভারত নামক এক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। সম্রাট অশোক যেমন একদা অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, ঠিক সে ভাবে আকবরও সম্ভব করেছিলেন। আর এই দু’টি ক্ষেত্রেই ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভাবনার বহুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখেছি। দারার মুসলিম ধর্ম পরিত্যাগ না করেও উপনিষদ পড়া এবং তা অনুবাদ করা খুব ছোট ঘটনা নয়।
আব্রাহাম লিঙ্কন
কার্ল মার্কস
মিখায়েল গোরবাচেভ
বরিস ইয়েলেৎসিন
ব্রিটিশ জমানাতেও প্রশাসনিক দক্ষতার বিশ্লেষণ এখন নানা দিক থেকে হচ্ছে। যদুনাথ সরকারের রচনা থেকেও জানছি, মোগল সম্রাটদের নিযুক্ত গোয়েন্দা রাজকর্মচারী ছিলেন, তাঁরা নিয়মিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে রাজকর্মচারীরা ঘুষ নিচ্ছেন কি না তা জানাতেন। ব্রিটিশ জমানাতেও, এমনকী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনেও গোয়েন্দাবিভাগ ছিল খুব কার্যকর।
কাজেই এক দিকে প্রজাবৎসল রাজা, অন্য দিকে প্রশাসনিক দক্ষতা— এই দুই-ই প্রয়োজন। প্লেটোর রিপাবলিকের কথোপকথনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের দু’টি ধর্ম, প্রথমত- মিতাচার আর দ্বিতীয় ন্যায়। মিতাচার হচ্ছে আনন্দ আর আকাঙ্খাকে শৃঙ্খলায় আনা বা নিয়ন্ত্রণ করা। রাজা চাকরও বটে, আবার চাকরদের কর্তাও বটে।
সুষমা স্বরাজকে নিয়ে বিতর্ক। রাজাকে জবাব দিতে হবে। রাজা নীরব কেন? মায়ানমার নিয়ে নিজের ঢাক নিজে পেটাবেন না বলছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধানেরা। রাজা নীরব কেন? এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যদি মানুষের মনে আসে অসন্তোষ, জাগে প্রশ্ন, তবে তার উত্তর দিতে হবে রাজাকেই। বিশু জবাব দেবে না, নন্দিনীর ও দায় নেই, দায় কিন্তু রাজার। গণতন্ত্রের দাবি, অদৃশ্য রাজাকে সত্যিকারের দৃশ্যমান হতে হবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয়।