Advertisement
E-Paper

বাতিল

রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি মন্তব্য করিলেন, কেন এই বৈঠক আপাতত বাতিল হইল ‘তাহা জানেন নরেন্দ্র মোদী’। বাক্যটিতে আলোর অপেক্ষা ছায়া ও ধোঁয়াই বেশি।

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
নিকি হ্যালি। ছবি: এএফপি।

নিকি হ্যালি। ছবি: এএফপি।

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম বার একই সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক— পরিভাষায় দুই+দুই বৈঠক— আরও এক বার স্থগিত হইল। বস্তুত, তৃতীয় বার। তবে এই বারের স্থগিত সিদ্ধান্তটি এমন ভাবেই লওয়া হইল যাহাতে নৈঃশব্দ্যের মাত্রা ও তাহার অবকাশে জল্পনাকল্পনার পরিমাণটি চোখে পড়িবার মতো। রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি মন্তব্য করিলেন, কেন এই বৈঠক আপাতত বাতিল হইল ‘তাহা জানেন নরেন্দ্র মোদী’। বাক্যটিতে আলোর অপেক্ষা ছায়া ও ধোঁয়াই বেশি। ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কোনও সমস্যার কারণে এই সিদ্ধান্ত হয় নাই— দুই দেশের পক্ষ হইতেই এই দাবি শোনা গিয়াছে বটে, কিন্তু তাহা অকপটে বিশ্বাস করিবার কারণ নাই। বিশেষত যখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারত-সফররত নিকি হ্যালির মুখে শোনা গিয়াছে গম্ভীর সতর্কবাণী: ৪ নভেম্বরের মধ্যে ইরান হইতে ভারতের তৈল আমদানির পরিমাণ ‘শূন্য’ করিতে হইবে। কূটনীতির দুনিয়ায় ইহাই ‘পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা’। ভারতের মতো আপাত-মিত্র দেশকে পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ফাঁসে জড়াইবার চেষ্টা করিলে তাহাকে মিত্রতার মহৎ দৃষ্টান্ত বলা মুশকিল।

বাস্তবিক, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের উষ্ণ আলিঙ্গন ও সজোর করমর্দনের ছবির পিছনে যে দেশটির কালো ছায়া অবিরত উঁকি দিয়া আসিতেছে তাহার নাম ইরান। ইরানকে পরমাণু প্রশ্নে কোনও ভাবেই বাগে আনিতে না পারিয়া ট্রাম্প প্রশাসন তাহাকে ‘পরবর্তী উত্তর কোরিয়া’ নাম দিয়া কূটনীতির খেলা খেলিতে চায়। ভারত-বিষয়ক সিদ্ধান্তের পিছনে ইরান নামক কারণটির অস্তিত্ব অস্বীকার করা অতএব অসম্ভব। মুশকিল হইল, সার্বভৌম দেশ ভারত কোথা হইতে কী আমদানি করিবে, তাহা তো ওয়াশিংটনের অঙ্গুলি নির্দেশে স্থির হইবার নয়। চিনের পরেই ভারত ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈল রফতানির ঠিকানা, দুই দেশের মধ্যে বহু কালের মৈত্রী সম্পর্ক। নূতন মিত্রের জন্য পুরাতন মিত্রের হাত ছাড়িতে খুব কম দেশই রাজি হইত। একই ধরনের সমস্যা রাশিয়া ও চিনকে লইয়াও। দুই দেশ বিষয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অস্বস্তি গভীর, তাহা প্রায় শত্রুতা রেখার চার পাশে ঘোরাঘুরি করে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সহিত ভ্লাদিমির পুতিন এবং শি চিনফিংয়ের সাম্প্রতিক লেনদেন নিশ্চিত ভাবেই ওয়াশিংটনকে উদ্বিগ্ন রাখিয়াছে। ইরানি তেল না কি রুশ যুদ্ধবিমান, ওয়াশিংটনের চোখে কোনটি বেশি বিপজ্জনক, তাহার মীমাংসা সহজ নয়।

অথচ ট্রাম্পও বিলক্ষণ জানেন, রাশিয়া বা চিনের সহিত সম্পর্ক স্থাপনে ভারতকে বাধা দান একবিংশ শতকের কূটনীতিতে চলে না। বিশেষত ভারতের মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বময় দেশকে, যাহার সম্পর্কে ওবামা প্রশাসনের অভিধা ‘দক্ষিণ এশীয় শক্তি’ বদলাইয়া ট্রাম্প প্রশাসনের অভিধা দাঁড়াইয়াছে ‘অন্যতম বিশ্বশক্তি’। সেই অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজেরই ফাঁদে নিজে জড়াইতেছে। ভারতকে তাহার প্রয়োজন, এই সন্ত্রাস-জর্জরিত বিশ্বে ভারতই ওয়াশিংটনের ‘স্বাভাবিক মিত্র’। কিন্তু অন্যান্য দেশের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘হয় উহাদের দলে নয় আমাদের দলে’ নীতিটি সেই মিত্রতার পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইতেছে। সঙ্গে জুড়িতেছে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য-শুল্ক দ্বৈরথ। মার্কিন পক্ষ শুল্ক ঘোষণা করায় ভারতও পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত লইয়াছে। ভারতের দিকে বাণিজ্য ঘাটতির কথাও একটু বেশি বার শুনাইয়া ফেলিয়াছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যাহা মিত্রতার অনুকূল নহে। মঙ্গলজনক নহে ট্রাম্পের ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধও, যাহা সরাসরি ভারতের স্বার্থের বিরোধী। শেষ অবধি জট খুলিবে, খুলিতেই হইবে। কিন্তু কবে কখন কোথায়, তাহা এখনও অবধি বড় প্রশ্নচিহ্ন।

United States India Nikki Haley Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy