Advertisement
E-Paper

সঙ্কট কাটাতে মরিয়া হয়ে উঠছে বিরোধী শিবির

যে পথে এগোচ্ছে রাজনীতি তাতে প্রাসঙ্গিক থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলগুলির সামনে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই কারণেই যে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে সংশয় নেই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৪

আপাতদৃষ্টিতে যা বেশ খানিকটা অসম্ভব বলে মনে হত এ দেশের রাজনীতিতে, তেমনটাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে পর পর। উত্তরপ্রদেশে ভোট ময়দানে হাত মিলিয়ে লড়ার কথা ঘোষণা করছেন মায়াবতী ও মুলায়ম-অখিলেশ। একক শক্তিতে কেউই জিততে পারবেন না, তাই এই সিদ্ধান্ত— খোলাখুলি জানাচ্ছেন। রাজ্যরাজনীতি ছেড়ে জাতীয় ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হতে চাইছেন তেলঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে কথা বলছেন রাওয়ের সঙ্গে, আশ্বাস দিচ্ছেন পাশে থাকার। বিজেপির অনর্গল উত্থান ঠেকাতেই যে এই মরিয়া জোট-প্রয়াস, তা মোটামুটি স্পষ্ট করেই জানাচ্ছেন বিরোধী শিবিরের রথী-মহারথীরা।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী দিল্লির মসনদে বসার পর থেকে যতগুলি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, তার অধিকাংশতেই জয় পেয়েছে বিজেপি। পঞ্জাব, বিহারের মতো কয়েকটি রাজ্যে বিজেপির অপ্রতিরোধ্য গতি ধাক্কা খেয়েছে বটে। কিন্তু অধিকাংশ নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয় ঢেকে দিয়েছে ব্যর্থতাগুলো। বিরোধী শিবিরের ব্যর্থতা অবশ্য বেশ প্রকট, একের পর এক নির্বাচনে প্রকট। এই পরিস্থিতি কাটাতেই সক্রিয় ভাবে পরস্পরের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি।

ভারতীয় রাজনীতির ছবিটা এখন ঠিক কী রকম? দলগত অবস্থানের মানচিত্রটা দেখতে ঠিক কেমন লাগছে? সে মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে এক দিকে প্রবল প্রতাপশালী বিজেপি। অন্য দিকে কিছুটা অগোছালো হয়ে থাকা কংগ্রেস। এবং কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কয়েকটি বিরোধী শক্তি। যে পথে এগোচ্ছে রাজনীতি তাতে প্রাসঙ্গিক থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলগুলির সামনে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই কারণেই যে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে সংশয় নেই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কংগ্রেসই দেশে এখন প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু শাসক বিজেপির সামনে কংগ্রেস খুব বড় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে, এমনটা নয়। বাংলা, ওডিশা, কেরলও গেরুয়া তুফান এড়াতে চাইছে। যে সব রাজ্যের রং ইতিমধ্যেই গেরুয়া, সেই সব রাজ্যে অ-বিজেপি দলগুলি এ বার গেরুয়া ঝড় থামাতে চাইছে। বিভেদ ভুলে হাত মেলানোর মরিয়া চেষ্টা সেই প্রেক্ষাপটেই।

শাসক দলের বিরুদ্ধে গোটা দেশে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের প্রয়াস ভারত এই প্রথম বার দেখছে না। ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ হতে দেখা গিয়েছিল অনেকগুলি বিরোধী দলকে। শুধু হাত মিলিয়ে নির্বাচনে লড়া নয়, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সম্মিলিত ভাবে নতুন অভিন্ন রাজনৈতিক দলে সামিল হতেও দেখা গিয়েছিল বিরোধী শক্তিগুলিকে। অতএব দেশে বর্তমানে যে বিরোধী ঐক্যের প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, তা নতুন কিছু নয়। তবে পরিস্থিতিটা কিয়ত্ নতুন তথা অভূতপূর্ব। ইন্দিরার কংগ্রেস যখন ক্ষমতায়, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলি দেশে তখন ধুঁকছে, এমনটা ছিল না পরিস্থিতি। বিরোধী শক্তিগুলি এবং বিরোধী নেতারা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আর আজ প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেস কোনও ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে নেই, বিজেপির বিরুদ্ধে নজরকাড়া নির্বাচনী সাফল্য পাচ্ছে কংগ্রেস— এমনটা নয়। অন্যান্য বিরোধী শক্তিগুলিও গেরুয়া চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় খুব সফল, এমন কথাও বলা যায় না। কিন্তু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় দায় সব দলেরই রয়েছে। ঘরে আগুন লেগে গিয়েছে যখন, নিজেদের ঝগড়া মুলতুবি রেখে তখন হাতে হাত মিলিয়ে আগুন নেভানোই যে সর্বাগ্রে জরুরি সে কথা মায়াবতী-মুলায়মরা উপলব্ধি করেছেন।

আরও পড়ুন: আমাদের টার্গেট দিল্লির লালকেল্লা, হুঙ্কার মমতার

উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা এক হওয়ায় ফুলপুর ও গোরক্ষপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল কী হয়, সে দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের। প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেসকে আপাতত দূরে রেখে জাতীয় স্তরে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার যে প্রয়াস বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল, তামিলনাড়ুর কমল হাসন বা তেলঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও-রা শুরু করেছেন, সে প্রয়াস কতটা দানা বাঁধে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা তা-ও সাগ্রহে খেয়াল রাখছেন। বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়ার লাগামটা টেনে ধরার প্রশ্নে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কতটুকু সাহায্য করতে পারবেন চন্দ্রশেখর রাও, তেলঙ্গানার রাজনীতিতে কী ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক হবেন, কেজরীবাল দ্রাবিড় ভূমিতে কমল হাসনের হয়ে কতটুকু সমর্থন জোটাতে পারবেন, দিল্লিতেই বা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন কী ভাবে কমল হাসন— সে সব নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে, বিস্তর চর্চাও হতে পারে। কিন্তু যাবতীয় তর্ক-বিতর্ক পাশে সরিয়ে রেখে বিরোধী শক্তিগুলি আজ যে এক ছাতার তলায় আসার চেষ্টা শুরু করেছে, রাজনৈতিক ভাবে সে খুব কম তাত্পর্যের বিষয় নয়। শাসকের বিজয়রথ থামবে কি না, সে অন্য প্রশ্ন। দেশজুড়ে বিজেপির এই অভূতপূর্ব জয়যাত্রা যে বিরোধী রাজনীতিতেও এক নতুন মাত্রা এনে দিল বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় সেটাই। এক দিকে অপ্রতিরোধ্য বিজেপি, এক দিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, আর এক দিকে অন্যান্য বিরোধী দল তথা আঞ্চলিক শক্তিগুলির সমাবেশ— এই বিন্যাস ভারতীয় রাজনীতিতে আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই রাজনৈতিক বিন্যাসে আদৌ গেরুয়া ঝড় রোখা সম্ভব কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তবে পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে অসম্ভব সমীকরণও যে সম্ভব হয়ে ওঠে, মুলায়ম-মায়াবতীরা তা তো দেখিয়েই দিলেন।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Mamata Banerjee Mayawati Akhilesh Yadav Chandrasekhar Rao BSP SP Tmc TRS Telangana Rashtra Samithi Samajwadi Party Bahujan Samaj Party অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজবাদী পার্টি বহুজন সমাজ পার্টি মায়াবতী অখিলেশ যাদব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চন্দ্রশেখর রাও
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy