E-Paper

কড়া অবস্থান

বাকুতে নির্ধারিত পরিমাণ প্যারিস চুক্তিকে সম্পূর্ণত অগ্রাহ্য করছে। এবং তা হচ্ছে এমন এক সময় যখন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির দীর্ঘমেয়াদি অর্থ সরবরাহ প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২৩

চাঁছাছোলা এবং যুক্তিযুক্ত— সম্প্রতি ব্রাজ়িলের বেলেম শহরে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৩০তম আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে (সিওপি-৩০) ভারতের অবস্থানকে এই ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। বিগত কয়েকটি সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্থসাহায্য নিয়ে উন্নত দেশগুলি যে কুনাট্য প্রদর্শন করে চলেছে, তা ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পথ থেকে সরে আসার সমতুল— সেই কথাটি স্পষ্ট ভাবে জানানো প্রয়োজন ছিল। ‘সম-মনোভাবাপন্ন উন্নয়নশীল দেশসমূহ’ (এলএমডিসি)-র পক্ষ থেকে ভারত খানিকটা সেই কাজই করল। ভারতের সমালোচনার মূল লক্ষ্য ‘নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল’ (এনসিকিউজি)। গত বছর বাকু-তে সিওপি২৯-এ গৃহীত এই বার্ষিক আর্থিক সহায়তা দান প্রকল্পে স্থির হয়েছিল, এর ন্যূনতম পরিমাণ হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ত্রিশ হাজার কোটি আমেরিকান ডলার, যা উন্নত দেশগুলি দেবে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে। প্যারিস চুক্তির ৯.১ ধারাটিতে উন্নত দেশগুলির আইনি বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছিল। ৯.৩ ধারাটিতে উন্নত দেশগুলিকে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা নিতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু বাকুতে নির্ধারিত পরিমাণ প্যারিস চুক্তিকে সম্পূর্ণত অগ্রাহ্য করছে। এবং তা হচ্ছে এমন এক সময় যখন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির দীর্ঘমেয়াদি অর্থ সরবরাহ প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট দেখিয়েছে কিছু উন্নত দেশ আগের বছরের তুলনায় তার আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়েছে। হ্রাসের পরিমাণ ৫১-৭৫ শতাংশ থেকে ৭৬-১০০ শতাংশ অবধি। বস্তুত, এক কার্যকর বৈশ্বিক তহবিল গড়ে তোলায় উন্নত দেশগুলির অনীহা গত বছরের বাকু সম্মেলনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে বার নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছিল আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে এক দীর্ঘ এবং উত্তপ্ত দরকষাকষিতে। অবশেষে উন্নত দেশগুলি যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে তা উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রকৃত দাবির বহু কম। সে বারও ভারত এই পরিমাণকে ‘অস্বাভাবিক কম’ বলে কড়া বিবৃতি দিয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেলেমে জলবায়ু তহবিল প্রসঙ্গে ভারত ও চিনের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গিয়েছে। ভারতের অবস্থানকে বহু দেশ সমর্থন করেছে। চিনও একই সুরে জানিয়েছে, জলবায়ু সংক্রান্ত আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থাকে তার মূল উদ্দেশ্য, সর্বোপরি প্যারিস চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে।

উদ্বেগের বিষয় হল, আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জানা যাচ্ছে, এই বছর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সর্বকালীন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণটি দশ বছর আগে প্যারিস চুক্তির সময়ের তুলনায় দশ গুণ বেশি। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক স্তরে যতই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপদ এবং তাকে প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা ও দরকষাকষি চলুক, মূল বিপদ এখনও স্ব-স্থানেই রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কঠোর হাতে কমানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পরিবেশবান্ধব বিকল্পকে সার্বিক ভাবে গ্রহণ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যে বিষয়ে সদিচ্ছা এখনও দেখায়নি উন্নত দেশগুলি। এই বৃত্তেই আটকে থেকে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution Global Warming COP Climate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy