E-Paper

নতুন কী

বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে কোনও অস্ত্রই গুরুত্বপূর্ণ— আন্তর্জাতিক আদালতের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যের তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ০৪:৪১

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সব দেশই দায়বদ্ধ, বলল রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক আদালত। সে কাজের জন্য তহবিল গঠন করার দায়িত্বও অনস্বীকার্য, আদালত জানাল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষত ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলির অবস্থান আদালতের এই রায়ে শক্তিশালী হবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলির কাছে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিও তীব্রতর হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে কোনও অস্ত্রই গুরুত্বপূর্ণ— আন্তর্জাতিক আদালতের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। কিন্তু, প্রশ্ন হল, এই রায়ে কি এমন কোনও কথা আছে, যা এত দিন জানা ছিল না? পরিবেশের প্রশ্নটিকে অবহেলা করা ‘অপরাধ’ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য— এই কথাটি নতুন বটে, কিন্তু তার গুরুত্ব কতখানি? কোনও বিষয় ‘অপরাধ’ হিসাবে স্বীকৃত হওয়া তখনই তাৎপর্যপূর্ণ, যখন সেই অপরাধের প্রত্যক্ষ শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। শাস্তি হবে, এই আশঙ্কাই সম্ভাব্য অপরাধীদের সংযত করে। আন্তর্জাতিক আদালতের বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা যে কোনও দেশের পক্ষেই বাধ্যতামূলক নয়, আদালতই তা জানিয়ে দিয়েছে। ফলে, পরিবেশের প্রশ্নটিকে অবহেলা করার অপরাধেরও কোনও প্রত্যক্ষ শাস্তি নেই। কেউ যদি সেই অপরাধের ‘নৈতিক বোঝা’র কথা তোলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতারা সম্ভবত হীরক রাজ্যের বিদূষকের সুরে বলবেন, ‘ন্যাকা’।

রাষ্ট্রপুঞ্জ নামক একদা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা তার জন্মের আট দশক অতিক্রম করে এখন কতখানি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে, পরিবেশের প্রশ্ন তার মোক্ষম প্রমাণ। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিষ্ঠান; বাৎসরিক কনফারেন্স অব পার্টিজ়-এর (সিওপি) আয়োজনকারী ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-ও তাই। এই প্রতিষ্ঠানগুলি বারে বারেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের কথা বলেছে, ভবিষ্যৎ পথনির্দেশ স্থির করেছে। বার্ষিক সভায় ছোট দেশগুলি জোটবদ্ধ ভাবে লড়েছে— কখনও কাগজকলমে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছে, কখনও সেটুকুও পারেনি। কিন্তু, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিবেশের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়াকে তারা গুরুত্ব দিতে নারাজ। প্যারিস চুক্তির থেকে দু’বার সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প— তাঁর শাসনের দু’দফায়। গত বছর বাকুতে আয়োজিত সিওপি-তে ক্লাইমেট ফাইনান্স বিষয়ে গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের আসরে অনুপস্থিত ছিলেন বহু উন্নত দেশের প্রথম সারির প্রতিনিধিরা। শেষ অবধি যে অর্থসংস্থান হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা তিলমাত্র। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপুঞ্জের যাবতীয় উদ্বেগ, সদিচ্ছা এবং উদ্যোগের মিলিত প্রভাবও কার্যক্ষেত্রে অতি সীমিত।

এর অর্থ অবশ্যই এই নয় যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের আর প্রয়োজন নেই। বরং, সেই প্রতিষ্ঠানের হৃত শক্তি কী ভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, ভাবতে হবে সে কথা। এই শক্তিক্ষয়ের যুক্তিটিকে ধরতে হবে, এবং তার অভিমুখ পাল্টাতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ মান্য করার আইনি বাধ্যবাধকতা কোনও দেশের নেই, তার কার্যকারিতা রক্ষা করার একমাত্র পথ সমস্বার্থভিত্তিক ঐক্য। ১৯৬০-এর দশক অবধি আন্তর্জাতিক কূটনীতি সে পথেই চলেছিল। পরবর্তী পর্যায়ে বাণিজ্য বিশ্ব প্রথমে আমেরিকা-নির্ভর একমেরু এবং তার পর দ্বিমেরু হয়ে ওঠায়, এবং ক্রমশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনির্ভর বাণিজ্য বাড়ায় অর্থনৈতিক স্বার্থই চালনা করেছে কূটনীতির মঞ্চকে। জোট-নিরপেক্ষ কূটনীতি, ‘বৈশ্বিক দক্ষিণ’-এর সংগঠন ইত্যাদি ক্রমে আর্থিক যুক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে। এখন এমনকি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও নিতান্ত নখদন্তহীন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিসরটিকে পুনরুদ্ধার করতে চাইলে অর্থনীতির পথ ধরেই যেতে হবে। কী ভাবে, তা নির্ধারণ করা ‘বৈশ্বিক দক্ষিণ’-এর নেতাদের কর্তব্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Climate Crisis Global Warming

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy