—প্রতীকী চিত্র।
চতুর্থ শ্রেণির এক জন শিক্ষার্থী মাতৃভাষায় সাবলীল ভাবে পড়তে পারবে, এমনটাই স্বাভাবিক শিক্ষা-চিত্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটির শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমানে হামেশাই সেই স্বাভাবিকতা উধাও হয়ে উল্টো পথে যাত্রার নিদর্শন মিলছে। সম্প্রতি জানা গেল, রাজ্যে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫.২ শতাংশের বাংলা অক্ষরজ্ঞানটুকুও নেই। ১৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অক্ষর চিনতে পারলেও শব্দ পড়তে পারে না। ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট, রুরাল’ (এএসইআর)-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা এই ছবি তুলে ধরার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। যেমন— তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাও চেনে না। প্রথম শ্রেণির ক্ষেত্রে এই হার ১৪.৩ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে এই হার কম মনে হলেও গোটা রাজ্যে যে বিপুল পরিমাণ ছাত্রছাত্রী প্রাথমিকে পাঠরত, সেই হিসাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটি লক্ষণীয় রকম বেশি।
এই পরিস্থিতি অতিমারির পরিণাম নয়। ২০২২ সালে অতিমারির পর সদ্য স্কুল খোলার সময়ে তৃতীয় শ্রেণির মাত্র ৩২.৬ শতাংশ পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণির কোনও পাঠ্যবই পড়তে পারত। তার দু’বছর পর এই হার বেড়ে হয়েছে ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ, বৃদ্ধি নামমাত্র। অথচ, এই দু’বছরে নিয়মিত ক্লাস হয়েছে। অতিমারি পর্বের ক্ষতি সেই সময়কালে কেন পুষিয়ে নেওয়া গেল না, প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। এখনও কেন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৭.৫ শতাংশ সাধারণ বিয়োগ অঙ্ক করতে পারবে? অতিমারির পর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছিল পিছিয়ে পড়া, শিক্ষাবঞ্চিতদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার। সেই কাজ কতটুকু হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে বেনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ঠিক না থাকা, সামান্য অজুহাতে ছুটির ধাক্কায় ধুঁকছে প্রাথমিক স্কুলগুলি। এ রাজ্যের প্রান্তিক দরিদ্র পরিবারগুলি সন্তানের শিক্ষার জন্য বিনামূল্যের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার উপরেই অনেকাংশে নির্ভর করে। সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন যথাযথ হচ্ছে না, বেসরকারি স্কুলে সন্তানকে পড়ানোর সামর্থ্য নেই— এমতাবস্থায় এই পরিবারগুলি যাবে কোথায়?
এই দুর্বিষহ চিত্র পাল্টাতে হলে সর্বাগ্রে প্রাথমিক স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি করতে হবে। নিয়ম মেনে শিক্ষক নিয়োগ তো বটেই, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষাকর্মীও নিয়োগ করতে হবে যাতে শিক্ষকরা অন্যান্য কাজ থেকে মুক্ত হয়ে শিক্ষায় মনোযোগ দিতে পারেন। রাজ্যের ৮২.৩ শতাংশ স্কুলে শৌচালয় থাকলেও ১৯.৫ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় নেই। বহু স্কুলবাড়ির ভগ্নদশা। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে জল পড়ায়, প্রবল গ্রীষ্মে পাখা না থাকায় কোনও ক্রমে ক্লাস চালাতে হয়। এই পরিবেশ কি আদৌ শিশুশিক্ষার উপযোগী? তদুপরি, দীর্ঘ দিন আটকে থাকার পর সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি কম্পোজ়িট গ্রান্টের ২৫ শতাংশ টাকা পেলেও বাদ থেকে গিয়েছে প্রাথমিক স্কুলগুলি— এমন অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের। অথচ, এই অর্থেই স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালানো হয়। নিঃসন্দেহে স্কুলগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, গ্র্যাজুয়েশন উৎসব— সবেরই প্রয়োজন আছে, কিন্তু একই সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষাদানের কাজটি যাতে গুরুত্ব সহকারে সম্পাদিত হয়, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy