E-Paper

সতর্কতা জরুরি

কোভিড যে পুরোপুরি মুছে যায়নি, আগামী দিনে বিবর্তনের মাধ্যমে উপপ্রজাতিগুলি ফের সংক্রমণের ঢেউ আনতে পারে— এমনটা পূর্বেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ০৪:৫৯

আতঙ্ক নয়, সতর্কতা। আপাতত দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কোভিড যে পুরোপুরি মুছে যায়নি, আগামী দিনে বিবর্তনের মাধ্যমে উপপ্রজাতিগুলি ফের সংক্রমণের ঢেউ আনতে পারে— এমনটা পূর্বেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন। তাঁদের অনুমান নির্ভুল প্রমাণ করে সম্প্রতি চিন-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের মাত্রা লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। ভারতেও কেরল, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গিয়েছে, এই নতুন ঢেউয়ের পিছনে রয়েছে এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭ নামক ওমিক্রনের দুই উপপ্রজাতি। প্রথমটি বেশি সংক্রামক, দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকেও সহজে এড়িয়ে যেতে সক্ষম। এই দু’টি উপপ্রজাতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নজরদারির আওতায় নিয়ে এসেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত তাদের ‘উদ্বেগজনক’ বলা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি মৃদু। গৃহচিকিৎসাতেই রোগ-নিরাময় সম্ভব হচ্ছে।

তবে সাবধানতা জরুরি— প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, নাগরিক ক্ষেত্রেও। অতিমারি কালের আতঙ্ক এখনও এ দেশের স্মৃতিপটে উজ্জ্বল। দীর্ঘ লকডাউন, তলিয়ে যাওয়া অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটাবস্থা এবং এক বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাবঞ্চিত থেকে যাওয়ার ক্ষত এত দ্রুত সারার নয়। সুতরাং, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। বিশেষত, সংক্রমণের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা প্রয়োজন। অতিমারি কালে তার অভাব প্রতি পদে অনুভূত হয়েছে। পরিসংখ্যানবিদ ও গবেষকরা দাবি করছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কোভিডে মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান পেশ করেছে, তাতে গোলমাল বিস্তর। প্রকৃত সংখ্যা, বিশেষত ডেল্টা-ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা সরকার-প্রদত্ত হিসাবের চেয়ে ঢের বেশি। আশঙ্কা যে সত্য, সম্প্রতি তার ইঙ্গিত মিলেছে তিনটি সরকারি রিপোর্টের বিশদ বিবরণে। ২০২১ সালে, যে বছর ডেল্টা ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল গোটা দেশ, নথিভুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২০২০-র তুলনায় প্রায় ২০ লক্ষ বেশি। শতাংশের হিসাবে ২৬%। কোভিড ছাড়া এক বছরে মৃত্যুসংখ্যায় এমন লক্ষণীয় বৃদ্ধির অন্য কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ঘটেনি। একই অস্বচ্ছতা দেখা গিয়েছিল টিকাকরণ কর্মসূচিকে ঘিরেও। বস্তুত সেই পর্বে সরকারি স্তরে চূড়ান্ত অ-প্রস্তুতি, অস্বচ্ছতা এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে নিদারুণ অক্ষমতা দেশকে কোন খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল, গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহ ও অবিরাম জ্বলতে থাকা চুল্লিগুলি তা সম্যক জানে। আর নয়, অতঃপর সরকারের দিক থেকে তথ্য স্বচ্ছতা চাই।

এই মুহূর্তে সচেতনতা প্রয়োজন নাগরিকদের মধ্যেও। মাস্ক পরা এখনও বাধ্যতামূলক হয়নি, জনসমাবেশেও নিয়ন্ত্রণ আসেনি। কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে বাধা কোথায়? কোভিডবিধি শুধুমাত্র কোভিড নয়, অন্য বেশ কিছু সংক্রামক রোগ ঠেকাতে যথেষ্ট কার্যকর। অসুখ হলে স্ব-চিকিৎসায় ভরসা না রেখে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের পরিচায়ক। তাতে নিজের সুরক্ষার সঙ্গে রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়াও প্রতিহত করা সম্ভব। পরিবর্তিত জলবায়ুর কল্যাণে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ কোনও ভাইরাস হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই স্বাস্থ্যসুরক্ষার প্রাথমিক বিধিগুলিকে দৈনন্দিনতায় মিশিয়ে নেওয়ার কাজটি আবশ্যক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

corona Corona virus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy