Advertisement
E-Paper

জরুরি দায়িত্ব

অত্যন্ত সতর্ক ভাবে সমস্যাটির সমাধান না করলে খুব বড় বিপদের মধ্যে পড়তে পারে এই রাজ্য, এই দেশ, এমনকি এই মহাদেশ।

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫১
Share
Save

বা‌ংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার কারণে জঙ্গি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের একটি বড় মঞ্চ হল পশ্চিমবঙ্গ, এমন কথা বহু দিন ধরেই শোনা যায়। অধিকাংশ সময়ে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচিত হওয়ার সুযোগ পায় না, মাঝখান থেকে রাজনীতির রুক্ষ মরুপ্রান্তরে হারিয়ে বসে। গত মাসখানেক ধরে যে ভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী ও রাজ্য স্পেশাল ফোর্সের সক্রিয়তায় এই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান মিলছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিষয়টি আসলে গুরুতর, রাজনৈতিক দলাদলির থেকে অনেক বড়। অত্যন্ত সতর্ক ভাবে সমস্যাটির সমাধান না করলে খুব বড় বিপদের মধ্যে পড়তে পারে এই রাজ্য, এই দেশ, এমনকি এই মহাদেশ। মহাদেশের কথা উঠছে কেন, বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার অনেক মৌলবাদী সংগঠনই ভারতে তাদের উগ্রপন্থী কার্যকলাপ চালাতে সদাগ্রহী, এবং পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত বরাবর যে পাহারাদারি অনেক কঠিন, সে কথা সকলেই ভালমতো অবহিত। বাংলাদেশের সীমান্ত তুলনায় পারাপার অভিলাষী জঙ্গিদের পক্ষে সুবিধাজনক, তার একটি কারণ দুই দেশের মধ্যে এক বড় পরিমাণ নদীপথ, যাকে কাঁটাতারে বাঁধা যায় না, এবং দ্বিতীয়ত, স্থলভাগেও বড় অংশে কাঁটাতার নেই, কিংবা তা নেহাত দুর্বল, প্রহরাহীন। একটি তৃতীয় কারণও আছে, যা আধা-রাজনৈতিক, আধা-সামাজিক। উনিশশো একাত্তরের পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এতই মিত্রসুলভ থেকেছে যে, আইনানুগ চলাচলের পাশাপাশি বেআইনি পারাপারও এই অঞ্চলে বহুলপ্রচলিত, এমনকি দুই দেশের সরকারের পরোক্ষ স্বীকৃতিতে পুষ্ট, এমনটা মনে করা যেতে পারে।

এমতাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ তিন রাজ্যকে কেন্দ্র যে ভাবে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে, তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবিক, গত অগস্টে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানকার রাজনীতি ও সমাজের উথালপাথাল এখন এক বিরাট সঙ্কটের রূপ নিয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিষ্পেষণ যে স্তরে উঠেছে, বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে তেমন আর দেখা গিয়েছে কি না বলা যায় না। ভারতবিরোধিতা এবং হিন্দুবিরোধিতা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এক দিকে যেমন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে আন্তর্জাতিক সঙ্কট। সংখ্যালঘুর উপর লাগাতার আক্রমণের কারণে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, এবং তার সঙ্গে নাশকতামূলক কাজকর্মে যুক্ত মানুষও সীমান্ত পেরোচ্ছে। অসম ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, এবং উত্তরবঙ্গের কুখ্যাত ‘চিকেন নেক’ অঞ্চল বা শিলিগুড়ি করিডর জঙ্গিদের নিশানায়, পাকা ঘাঁটি গড়তে তারা এখন ব্যস্ত, যাতে প্রয়োজনে বাংলাদেশে কিংবা ভারতের ভূখণ্ডে জনারণ্যে দ্রুত মিশে যাওয়ার সুযোগ থাকে। সে দেশের প্রশাসনে যে-হেতু জামায়াতে, হুজি, হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠনের প্রভাব এখন যথেষ্ট, এবিটি বা আনসারুল্লা বাংলা টিম কিংবা জেএমবি বা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের মতো জঙ্গি সংগঠনের এই ঘাঁটি তৈরির কাজে সরকারি প্রণোদনা থাকাও অস্বাভাবিক নয়।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের দায়িত্ব বিরাট। বহু দিন ধরে বিরোধী দলগুলির, বিশেষত বিজেপির অভিযোগ যে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ইসলামি জঙ্গিদের বসবাস ও কাজকর্মের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদাসীন। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন হলেও বলতেই হয় যে বিষয়টিতে বৃহত্তর মনোযোগ দেওয়া সরকারের কর্তব্য। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ থেকে সম্প্রতি ক্যানিং অঞ্চলের জঙ্গি ঘাঁটি আবিষ্কারে পরিস্থিতির গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। জঙ্গি ঘাঁটির অনুসন্ধান ও নিষ্ক্রিয়করণের কাজটি দক্ষ ভাবে করতে হবে, কোনও ভোটমুখী রাজনীতি যেন তা পথভ্রষ্ট করতে না পারে। সন্ত্রাসের সঙ্গে আপস তো নয়ই, সন্ত্রাস-সমর্থনকারী কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেও এক বিন্দু ছাড় দেওয়া চলবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Terrorist India-Bangladesh Border

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}