Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Tiananmen Square

শ্বাসরোধ

এখন আর পুরনো হংকং নেই। চিনের বজ্রকঠিন শৃঙ্খল সেখানে স্থাপিত হয়েছে। সুতরাং এখন সেখানেও তিয়েনআনমেন-এর স্মৃতিটুকু মুছে ফেলার যারপরনাই চেষ্টা চলছে।

An image of Chinese Control

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৫:৪২
Share: Save:

কয়েক দশক ধরে হংকং-এ তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারের গণতন্ত্রকামী ছাত্র-আন্দোলনের ভয়ঙ্কর সরকারি নিপীড়নের স্মরণে গণশোক পালিত হত। কিন্তু এখন আর পুরনো হংকং নেই। চিনের বজ্রকঠিন শৃঙ্খল সেখানে স্থাপিত হয়েছে। সুতরাং এখন সেখানেও তিয়েনআনমেন-এর স্মৃতিটুকু মুছে ফেলার যারপরনাই চেষ্টা চলছে। গত ৪ জুন, আন্দোলনের চৌত্রিশতম বার্ষিকীর জমায়েত থেকে মুখ্য বিরোধী দলনেতা, গণতন্ত্রকামী প্রতিবাদী এবং অভিজ্ঞ সাংবাদিককে রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। গণ-শান্তি ভঙ্গের সন্দেহে আটক করা হয় যোগদানকারীদের বেশ কয়েক জনকেও। হংকং-এর এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। এমনিতেই বেজিং নির্বাচিত প্রশাসন গত তিন বছর অতিমারিজনিত নিয়মবিধির অছিলায় শহরে যে কোনও ধরনের গণসভার উপরে দাঁড়ি টেনেছিল। তবু নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই ২০২০ সালে হাজার হাজার মানুষ এই শোক-সভা পালন করেছিলেন। তবে ওই বছরই চিন সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করার পর থেকে কার্যত যে কোনও ধরনের মতবিরোধকে অপরাধযোগ্য বলে গণ্য করা হচ্ছে। আগে যে ধরনের গণতন্ত্রকামী এবং সরকার-বিরোধী আন্দোলনে হংকং আন্দোলিত হত, আজ তার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেখানকার বহু দিনের বাক্‌স্বাধীনতার ঐতিহ্য এ ভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে মুছে দিতে সমর্থ হয়েছে চিন।

চিনের সরকার তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারের রক্তক্ষয়ী দমনের পক্ষে যতই যুক্তি খাড়া করুক, এটি তাদের কাছে চিরকালীন স্পর্শকাতর বিষয়। যে কারণে নিজেদের মাটিতেই ওই আন্দোলনের সবটুকু স্মৃতি অতি নৈপুণ্যের সঙ্গে মুছে ফেলতে চায় তারা। কোনও স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়ে পড়ানো হয় না, কোনও খবরে থাকে না এর উল্লেখ। এমনকি অনলাইনে কেউ আন্দোলন নিয়ে খোঁজ করলেও, অবিলম্বে তা আটকে দেওয়া হয়। ফলে ঘটনা-পরবর্তী সময়ে যাঁরা ও-দেশে জন্মেছেন, তাঁদের কাছে ইতিহাসের এমন ভয়ঙ্কর অধ্যায়টি অজ্ঞাতই থেকে গিয়েছে। সে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের অভিলাষী হলেও, যে ভাবে জনসাধারণের উপরে নিয়ন্ত্রণ কঠিন ভাবে কায়েম, তাতে কোনও ধরনের অভ্যুত্থানের কথা কল্পনাও করতে পারেন না তাঁরা। এবং এই কর্তৃত্ব বজায় রাখতেই চিন আজ প্রতিরক্ষার তুলনায় অন্তর্বর্তী নজরদারিতে বেশি খরচ করে— গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের যা এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

বিষয়টি জরুরি। কেননা, ১৯৯৭ সালে হংকং নামক এই পূর্বতন ব্রিটিশ উপনিবেশটি যখন চিনের হাতে আসে, তখন প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল যে, ‘এক দেশ, দুই তন্ত্র’ নীতির অন্তর্গত হংকং আগামী পঞ্চাশ বছর গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। বলা হয়েছিল, হংকং-এর অনন্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ধারাকে বজায় রেখে তাকে ধীরে ধীরে চিনা সংস্কৃতির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করা হবে। তা হয়নি। ২০২০ থেকে চিনের জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকং-এর উপর চাপানোর ফলে সেখানকার মানুষের কাছে এখন গণতন্ত্রের স্বপ্ন বিলীনপ্রায়। মুক্তি থেকে বজ্র আঁটুনি ও বাঁধুনিতে নিমজ্জিত হতে যে মোটেই বেশি সময় লাগে না, হংকং তার উজ্জ্বল প্রমাণ। সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অনুপস্থিতির পরিণতি কী হতে পারে, হংকং আজ তার ভয়ঙ্কর উদাহরণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Tiananmen Square Hong Kong
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE