Advertisement
E-Paper

এপিক মুহূর্ত

যেখানে ভোটার কার্ডে ১০ সংখ্যা-সম্বলিত নম্বরটি প্রতি ভোটারের জন্য বিশেষ ও ইউনিক হওয়ার কথা, সেখানে আর সব স্থান ছেড়ে দিলেও কেবল মহারাষ্ট্রে যে পরিমাণ এপিক-জালিয়াতি ঘটেছে, তা একাই দেখিয়ে দেয় এই কেলেঙ্কারির গুরুত্ব কত বড়।

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৬
Share
Save

তালিকায় যদি ভুল নেই তা হলে গোলমালগুলি ঘটছে কেন? অথবা, তালিকায় যদি ভুল থাকে তা হলে গোলমালগুলি ঘটল কেন? মোল্লা নাসিরুদ্দিনের ধাঁচে এই সাঁড়াশি প্রশ্ন নির্বাচন কমিশনের সামনে তুললে তার থেকে কোনও মতেই কমিশন নিস্তার পেতে পারে না। কমিশনের তা বুঝতে ভুল হয়নি। ফলত, ভালয় ভালয় ভোটার তালিকা বিষয়ে নিজ দায়িত্ব মেনে নিয়েছে তারা। জানিয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ভোটার কার্ডের বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে, এবং ক্রমে দেশ জুড়ে নতুন ভোটারদের জন্য জাতীয় ইউনিক নম্বর চালু হবে। সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের হইচই-এর মধ্যে স্পিকার ওম বিড়লা যতই বলুন যে এতে সরকারের কী-ই বা করার আছে, সরকার তো আর ভোটার তালিকা হাতে করে তৈরি করে না— আসল কথা হল, যাঁরা সেই তালিকা তৈরি করেন, তাঁদের ‘ভুলত্রুটি’র দায়িত্ব সরকার নেবে না তো কে নেবে? ভুলই হোক, আর কারচুপিই হোক, তালিকার যে কোনও গোলযোগের দায়িত্ব সরাসরি নির্বাচন কমিশনের উপরেই বর্তায়। এবং সেই সূত্রে সরকারের উপর— বিশেষত নতুন কমিশনার যখন বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বতনমন্ত্রকের সচিব, এবং সেই সূত্রে নিকট ব্যক্তি ছিলেন। ভোটার তালিকা বস্তুটি গণতন্ত্রের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য অত্যন্ত জরুরি: গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কোনও সরকার এর গুরুত্ব একচুলও খাটো করে দেখতে পারে না।

যেখানে ভোটার কার্ডে ১০ সংখ্যা-সম্বলিত নম্বরটি প্রতি ভোটারের জন্য বিশেষ ও ইউনিক হওয়ার কথা, সেখানে আর সব স্থান ছেড়ে দিলেও কেবল মহারাষ্ট্রে যে পরিমাণ এপিক-জালিয়াতি ঘটেছে, তা একাই দেখিয়ে দেয় এই কেলেঙ্কারির গুরুত্ব কত বড়। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে সে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৩৯ লক্ষ নতুন ভোটার যোগ হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ভোটার তালিকায় যে সংখ্যায় নতুন ভোটার যোগ হয়েছে, তার মোট সমষ্টির থেকেও এই কয়েক মাসের বাড়তি সংখ্যাটি অনেকটা বড়! কেবল মহারাষ্ট্র নয়, একই ধরনের গরমিলের ঘটনা ঘটেছে হরিয়ানা ও দিল্লির ভোটার তালিকাতেও, এবং এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকেও একই অভিযোগ উঠে আসছে বিপুল ভাবে। প্রসঙ্গত— সাম্প্রতিক অতীতে আর কোনও ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এত দ্রুত ভুল স্বীকার করেছে বলে মনে পড়ে না।

সেই সঙ্গে স্বীকার করতে হয়, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের এই পদক্ষেপকে ‘নৈতিক জয়’ বলে দাবি করে যে উৎফুল্লতা প্রকাশ করেছেন, সাম্প্রতিক কালে তাঁরও এর চেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক জয় ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, আপ-এর নেতারা, সকলেই বিষয়টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোরালো সুরে সুর মিলিয়েছেন, মহারাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্যে ভোটার-কারচুপি বিষয়ক প্রভূত পরিমাণ নোটিস জমা দিয়েছেন, সংসদে বিস্তারিত আলোচনার দাবিতে লাগাতার চাপ দিয়ে চলেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপিকে তাদের দুর্বল আসনগুলিতে সুবিধা করে দিতেই এই ব্যাপক ‘জালিয়াতি’ ঘটানো হয়েছে। এই অভিযোগ এখন সংসদীয় আলোচনায় যে ভাবে একটি বড় জায়গা নিচ্ছে, তাতে বিরোধী জোটের জয় হিসাবেই একে দেখতে হবে। ‘ইন্ডিয়া মঞ্চ’-র অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা যখন নিজেই বিরাট প্রশ্নচিহ্ন হয়ে ওঠার উপক্রম, সেই সময়ে অন্তত সাময়িক ভাবে ওই মঞ্চের কিছু ঐক্য ও উপযোগিতা সংসদের দুই কক্ষেই স্পষ্ট হয়ে উঠল। ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে এমন আশাব্যঞ্জক মুহূর্ত ইদানীং দুর্লভ। কেন্দ্রীয় শাসক দল সংসদে বিষয়টির স্পষ্ট ও নির্বাধ আলোচনায় শামিল হবে, গণতন্ত্রের দিক থেকে এই প্রত্যাশাও রইল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

EPIC Number Fake Voter Card Voter Card EPIC Card

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}