Advertisement
E-Paper

সঞ্জীবনীর খোঁজে

গান্ধী পরিবারের ভূমিকা নিয়ে অনন্ত টানাপড়েনও এই অস্বচ্ছতার অন্য দিক। এখনও নাকি রাহুল গান্ধীকে সভাপতির আসন গ্রহণে ‘রাজি করানো’র চেষ্টা চলছে!

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪৪
তিন বছর ধরে ‘অন্তর্বর্তী’ সভাপতি দল চালাচ্ছেন।

তিন বছর ধরে ‘অন্তর্বর্তী’ সভাপতি দল চালাচ্ছেন।

দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজ়াদ মন্তব্য করেছিলেন, দল এমন এক সর্বনাশের কিনারায় পৌঁছেছে যেখান থেকে ‘আর ফেরা যাবে না’। তাঁর সমালোচকরা কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন, সর্বনাশ আসন্ন বুঝেই কি তিনি নিজের আখের গোছানোর ব্যবস্থা করতে তৎপর হলেন? এত দিন যে দলের উপরতলায় বসে সমস্ত ক্ষমতা ও সুযোগ ভোগ করলেন, এখন দুর্দিনে তাকে পরিত্যাগ করা কি নির্লজ্জ অনৈতিকতার পরিচয় নয়? আজ়াদের নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক, তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও তথৈবচ। কিন্তু তিনি দলের নেতৃত্বের সম্পর্কে, অর্থাৎ সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি তুলেছিলেন, সেগুলিকে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও উপায় নেই। অস্বীকার করা যাবে না এই সত্যকেও যে, কংগ্রেস নিজেকে যেখানে এনে ফেলেছে, সেখান থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রত্যাবর্তন কঠিন বললে কম বলা হয়।

পাঁচ মাস ধরে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা এবং অক্টোবরের মধ্যে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দ্বৈত উদ্যোগ কি সেই কঠিন কাজকে সাধ্যের সীমায় আনতে পারবে? দু’টি উদ্যোগই প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয় উদ্যোগটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তো প্রশ্নই নেই— তিন বছর ধরে ‘অন্তর্বর্তী’ সভাপতি দল চালাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি কেবল বিসদৃশ নয়, চরম বিড়ম্বনার কারণ। নির্বাচন কত দূর সার্থক হবে, তা অবশ্য এখনও জল্পনার বিষয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে নেতৃত্ব স্থির করার জন্য যে পরিকাঠামো, পরিবেশ এবং মানসিকতার প্রয়োজন হয়, কংগ্রেসের অন্দরে তার অভাব আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক। ১৯৩৯ সালের ত্রিপুরী অধিবেশন সেই ইতিহাসের একমাত্র মাইলফলক নয়। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচকমণ্ডলীর তালিকা প্রকাশের দাবি নিয়ে কংগ্রেসি পরিমণ্ডল আপাতত সরগরম— শশী তারুরের মতো ‘সম্ভাব্য’ প্রতিদ্বন্দ্বী এই দাবি তুলে বাতাসের উত্তাপ বাড়িয়েছেন, দলের দুর্গরক্ষীরা সেই দাবি নস্যাৎ করে বলছেন, “এই নির্বাচন কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তালিকা প্রকাশ করতে হবে কেন?” এই তর্কই বলে দেয়, স্বচ্ছতা আজও দূর অস্ত্। গান্ধী পরিবারের ভূমিকা নিয়ে অনন্ত টানাপড়েনও এই অস্বচ্ছতার অন্য দিক। এখনও নাকি রাহুল গান্ধীকে সভাপতির আসন গ্রহণে ‘রাজি করানো’র চেষ্টা চলছে!

কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর যাত্রার প্রয়োজনটি এক অর্থে গভীরতর। এ-যাত্রায় ভারত কতখানি জুড়বে সে-কথা বলা শক্ত, কিন্তু হতোদ্যম কংগ্রেসের শরীরে ও মনে যদি ঈষৎ প্রাণের সঞ্চার হয়, দলের পক্ষে তার মূল্য অনেক, ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষেও কম নয়। যাত্রাপথটি প্রধানত সেই সব এলাকাতেই বিন্যস্ত হয়েছে, যেখানে কংগ্রেস তুলনায় সবল। রণকৌশল হিসাবে তা অস্বাভাবিক নয়। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি তার শক্তির হিসাব কষেই স্থির করা হয়। অনুকূল পরিবেশে দলীয় উদ্দীপনা জাগ্রত করার পরে যদি প্রতিকূল পরিবেশে তার বিস্তার ঘটানোর পরবর্তী পর্ব শুরু হয়, ২০২৪-এ তার প্রভাব পড়তেও পারে। কিন্তু এই রণনীতি ও কৌশলে সীমিত থাকলে কংগ্রেসের মূল সমস্যার সমাধান দলনেতারা খুঁজে পাবেন না। বর্তমান ভারতের রাজনীতির পরিসরে কংগ্রেস নামক দলটির স্বাতন্ত্র্য ঠিক কোথায়, এই দল কোন আদর্শ বা মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে— এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর তাঁদের জানা নেই। দু’হাজার মাইলের যাত্রাপথে কান পাতলে পাঁচ মাসে রাহুল গান্ধী এবং তাঁর সহযাত্রীরা সেই উত্তরের কিছু আভাস পেতে পারেন। তার জন্য অবশ্য শ্রবণশক্তি থাকা দরকার। এবং থাকা দরকার সেই বিরল ক্ষমতাটি— শোনবার ইচ্ছা, এক কথায় যার নাম শুশ্রূষা।

Congress Rahul Gandhi Bharat Jodo Yatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy