E-Paper

টক্কর

চিনা এআই-এর নবতম সংস্করণটি বাজারে আসার পরেই তা ‘অ্যাপল স্টোর’-এ ডাউনলোড হয়েছে সবচেয়ে বেশি, নজর কেড়েছে বিশ্বের এআই-বিশেষজ্ঞদের, তার অভিঘাত পড়েছে প্রযুক্তি ও শেয়ার বাজারের।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:৪৮

এআই-এর মতো ভবিষ্যৎ পাল্টে-দেওয়া প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কি এ বার চিন ছাড়িয়ে যাবে আমেরিকাকে? চ্যাটজিপিটি-র সহজলভ্য ও সস্তা চিনা বিকল্প কি চলে এল এই অল্প দিনেই? গত দু’সপ্তাহে চিনা এআই চ্যাটবট ‘ডিপসিক’ নিয়ে যে হইচই পড়েছে পশ্চিমি বিশ্বে, তার নিরিখে এই প্রশ্নগুলি অসঙ্গত নয়। ২০ জানুয়ারি এই চিনা এআই-এর নবতম সংস্করণটি বাজারে আসার পরেই তা ‘অ্যাপল স্টোর’-এ ডাউনলোড হয়েছে সবচেয়ে বেশি, নজর কেড়েছে বিশ্বের এআই-বিশেষজ্ঞদের, তার অভিঘাত পড়েছে প্রযুক্তি ও শেয়ার বাজারের। বিশেষত শেয়ার বাজারে ডিপসিক-এর ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি— আমেরিকার যে সংস্থাটি এআই-এর প্রাণভ্রমরা সর্বাধুনিক চিপ তৈরিতে সবচেয়ে খ্যাত ও বড়, তার বাজারমূল্য পড়ে গেছে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার, দেশটির ইতিহাসে এক দিনে সর্বাধিক পতন!

স্বাভাবিক ভাবেই মনে হচ্ছে, চিনের এ এক নতুন ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। এআই ক্ষেত্রটি প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন, আমেরিকা-সহ প্রথম সারির দেশগুলি এআই-গবেষণায় বিস্তর সময়, শ্রম ও অর্থ ঢালছে। বলা হচ্ছে, এআই যার ‘হাত’-এ থাকবে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি তো বটেই, অর্থনীতি রাজনীতি সমাজ-সহ মানবমন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত ও চালনা করার রাশও থাকবে তার হাতে। যে প্রযুক্তি এ কাজ করতে পারে তাকে কতটা সূক্ষ্ম, নিখুঁত ও আধুনিক হতে হবে সহজেই অনুমেয়, তা নিশ্চিত করতে কী বিপুল অর্থ প্রয়োজন, তা-ও। ডিপসিক এখানেই ধাক্কা দিয়েছে। সংস্থাটির দাবি, এআই-শিল্পক্ষেত্রে এখন যে মডেলটি নেতৃস্থানীয়, সেই ‘ওপেনএআই’ তৈরির মাত্র ভগ্নাংশ পরিমাণ খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরিতে। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির এআই সংস্থাগুলি যেখানে অতি উচ্চ মান ও দামের অ্যাডভান্সড চিপ নিয়ে গর্ব করে, ডিপসিক সেখানে একই মানে পৌঁছনোর দাবি করছে অনেক কম সংখ্যক অ্যাডভান্সড চিপের ব্যবহারে— অর্থাৎ সে দামে কম, কিন্তু মানে ভাল।

যা কিছু সস্তা তার গুণমান নিয়ে মানুষের একটা সংশয় কাজ করে। বিশ্ববাজারে চিনা পণ্য সম্পর্কেও এই সংশয় বহুবিদিত, যদিও তা হেলায় পেরিয়ে, বিশ্ব জুড়ে পণ্য পরিষেবা ও শ্রমের বিশাল বাজার ধরতে চিন নিঃসংশয় ও আগ্রাসী। এ বার এআই-এর মতো যুগান্তকারী প্রযুক্তির বাজারেও তার আবির্ভাবটি প্রায় বৈপ্লবিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপসিক-কে তৈরি করা হয়েছে অতি কৌশলী ভাবে, সে রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতাও জানে-বোঝে বিলক্ষণ, তিয়েনআনমেন স্কোয়ার নিয়ে প্রশ্ন করলে সে সবিনয়ে উত্তর দিতে প্রত্যাখ্যান করছে। ডিপসিকের গুণমান বা তার ভবিষ্যৎ প্রভাব সময়ই বলবে, কিন্তু আপাতত সে যে এআই-প্রযুক্তির প্রতিযোগিতামুখর বিশ্বে চিনকে এগিয়ে দিল তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তার প্রমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য, তিনি বলেছেন আমেরিকান সংস্থাগুলি এ বার তেড়েফুঁড়ে উঠুক, এআই-প্রতিযোগিতায় জয় ছিনিয়ে আনায় মন দিক। প্রতিযোগিতা, জয়— শব্দগুলিতেই পরিষ্কার, প্রসঙ্গ এআই-প্রযুক্তি হলেও আসল প্রশ্নটি রাজনীতি তথা ক্ষমতার, আমেরিকার সদ্যলব্ধ গর্বের জায়গাটিতে চিনের ‘অনুপ্রবেশ’-এ ক্ষমতার লড়াই চেগে উঠেছে। চিনে এআই-প্রযুক্তির অ্যাডভান্সড চিপ রফতানি আমেরিকা আগেই বন্ধ করেছিল, তাতেও শেষরক্ষা হল না— ডিপসিক-ই প্রমাণ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

AI China

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy