Advertisement
E-Paper

খারিজ

ভোটাররা ব্যক্তিকে ভোট দেন, না কি দলকে, সেই প্রশ্নের সহজ উত্তর নাই।

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ০৪:৫৭

ভারতীয় রাজনীতিতে দলবদল এখন প্রাত্যহিকতায় পরিণত হইয়াছে। কিন্তু, কোনও এক দলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে জিতিয়া কেহ ভিন্ন দলে যোগ দিলেও তাঁহার নির্বাচিত পদটি থাকা উচিত কি না, সেই তর্কের মীমাংসা হয় নাই। কাহারও বিধায়ক পদ খারিজ হইবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত বিধানসভার স্পিকারের। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থাকিলে হয়তো আরও এক বার জানাইতেন যে, স্পিকারের কোনও দলীয় পরিচয় থাকিতে পারে না— কিন্তু, ভারতীয় রাজনীতি সাক্ষ্য দিবে যে, অধিকাংশ স্পিকারই দলীয় আনুগত্য ত্যাগ করিয়া উঠিতে পারেন না। ফলে, বিরোধী দলের জয়ী বিধায়ক দল পাল্টাইয়া শাসক দলে যোগ দিলে তাঁহার পদ খারিজ করিবার বিষয়ে স্পিকারের গড়িমসি ভারতের সব রাজ্যেই কার্যত একই রকম বাস্তব। যে দল যেখানে বিরোধী আসনে থাকে, সেই দল সেখানে এই প্রবণতার বিরোধিতা করে। এমনকি বিজেপিও— যাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, বিভিন্ন রাজ্যে তাহারা বিধায়ক কেনা-বেচাকে শিল্পের স্তরে লইয়া গিয়াছে— পশ্চিমবঙ্গে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করাইতে মরিয়া।

ভোটাররা ব্যক্তিকে ভোট দেন, না কি দলকে, সেই প্রশ্নের সহজ উত্তর নাই। কিন্তু, নির্দল প্রার্থীদের জয়ী হইবার উদাহরণ গোটা দেশেই এমনই বিরল যে, অনুমান করা চলে, ব্যক্তির জয়ের পিছনে দলের ভূমিকা কম নহে। কাজেই, দল ছাড়িলে বিধায়ক পদটিও ছাড়িতে হইবে, এই দাবিকে অনৈতিক বলা চলিবে না। বস্তুত, ভাবা যাইতে পারে যে, দলবদলের অধিকারকে নির্বাচন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হইবার পর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমায় বাঁধিয়া দেওয়া যায় কি না। সেই সময়কাল উত্তীর্ণ হইবার পূর্বে কেহ দলত্যাগ করিলে তাঁহাকে বিধায়ক পদটি ত্যাগ করিতে হইবে বটে, কিন্তু তিনি ফের সেই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবেন। সেই মেয়াদ অতিক্রান্ত হইবার পর যদি কাহারও দলে থাকিয়া কাজ করিতে অসুবিধা হয়, তবে তিনি স্বচ্ছন্দে পদত্যাগ করিতে পারিবেন, কিন্তু আইনসভায় প্রবেশাধিকার পাইবার জন্য পরবর্তী নির্বাচন অবধি তাঁহাকে অপেক্ষা করিতে হইবে। এই সংস্কার যদি এই মুহূর্তে করা অসম্ভবও হয়, তাহা হইলেও দলত্যাগী বিধায়কের পদ খারিজ করিবার সিদ্ধান্তটি স্পিকারের হাতে ছাড়িয়া রাখিবার অর্থ হয় না। দলত্যাগ করিলেই আসন খোয়াইতে হইবে, ব্যতিক্রমহীন ভাবে ইহাই নিয়ম হওয়া প্রয়োজন। নচেৎ, নির্বাচন নামক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটির আর কোনও মূল্যই থাকে না— মানুষের মতামতও অর্থহীন হইয়া যায়।

স্পিকার যাহাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলত্যাগী বিধায়কের আসন খারিজ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য থাকেন, সেই মর্মে নির্দেশ প্রার্থনা করিয়া সুপ্রিম কোর্টে মামলা হইয়াছিল। সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি যাহা বলিয়াছেন, তাহা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, এই সিদ্ধান্ত করিবার অধিকার এবং দায়িত্ব আইনবিভাগের। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত সরকারের। দেশের নীতি নির্ধারণের কাজটি বিচারবিভাগ করিতে পারে না, এই কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি ধন্যবাদার্হ। যে প্রশ্ন রাজনৈতিক, তাহার মীমাংসার জন্যও আদালতের দ্বারস্থ হইবার মধ্যে নিজেদের দায় ঝাড়িয়া ফেলিবার প্রবণতা প্রকট। কোনও রাজনৈতিক দল যদি মনে করে যে, দলত্যাগী বিধায়কের আসন খারিজ করিবার জন্য আইনের প্রয়োজন, তবে রাজনৈতিক ভাবে সেই দাবি পেশ করা জরুরি। আইনসভার অভ্যন্তরে, সভার বাহিরের গণপরিসরেও। এহেন দাবির মাধ্যমে দেশের কক্ষপথ নির্ধারণই রাজনীতির কাজ। সেই দায়িত্ব শাসকের, বিরোধীদেরও। তাঁহারা আইনের জন্য দািব পেশ করুন, সেই মর্মে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়িয়া তুলুন। আদালতের শর্টকাট ব্যবহার করিবার প্রবণতাটি ত্যাগ করা জরুরি।

BJP TMC Anti-Defection Law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy