E-Paper

অস্বীকারের অভ্যাস

শীত পড়লে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিষবাষ্পে ঢাকা পড়বে, তাকে সামলানোর জন্য সরকারের আপৎকালীন পদক্ষেপের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়বে, এবং দূষণক্লান্ত অ-সুস্থ নাগরিক হাসপাতালমুখী হবেন— এমনটাই ‘নিউ নর্মাল’।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৫৩

ফের ভয়ঙ্কর দূষণগ্রাসে ভারতের রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকা। গত অক্টোবর-নভেম্বরেই বায়ুদূষণে প্রায় দমবন্ধ অবস্থা দাঁড়িয়েছিল দিল্লির। বাতাসের সামগ্রিক গুণমান বা এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (একিউআই) খারাপ, অত্যন্ত খারাপ-এর পর্যায় পেরিয়ে কিছু জায়গায় মারাত্মক খারাপের স্তরটিও স্পর্শ করে ফেলেছিল। তার রেশ কাটার আগেই ফের এক প্রস্থ দূষণ-যন্ত্রণার সম্মুখীন দিল্লিবাসী। এ বারও বেশ কিছু জায়গায় একিউআই পৌঁছেছে ৫০০-র কাছাকাছি। অর্থাৎ, ফের এক অ-স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে সঙ্গী করে বাঁচা। কিছু দিন পূর্বেই দিল্লির দূষণ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ধরা পড়েছিল সর্বোচ্চ আদালতের কথায়। সাধারণত স্কুলগুলিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য শীতের মাসগুলিকে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু দিল্লির দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য বছরের অন্য সময় বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের মন্তব্যটি এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য— এই দূষণ-পরিস্থিতিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের অর্থ, স্কুলপড়ুয়াদের ‘গ্যাস চেম্বার’-এ ঠেলে দেওয়া।

শীত পড়লে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিষবাষ্পে ঢাকা পড়বে, তাকে সামলানোর জন্য সরকারের আপৎকালীন পদক্ষেপের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়বে, এবং দূষণক্লান্ত অ-সুস্থ নাগরিক হাসপাতালমুখী হবেন— এমনটাই ‘নিউ নর্মাল’। এই সমগ্র বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণটিও চমকপ্রদ। সম্প্রতি যেমন কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বায়ুদূষণের নিরিখে বিশ্বতালিকায় শহরগুলির স্থাননির্ণয় কোনও ‘অফিশিয়াল অথরিটি’ দ্বারা সম্পন্ন হয় না। উল্লেখ্য, এই বছরের মার্চে সুইস কোম্পানি আইকিউএয়ার কর্তৃক বিশ্বের বাতাসের গুণমান সূচক রিপোর্টে পৃথিবীর সর্বাধিক দূষিত দেশগুলির মধ্যে পাঁচ নম্বরে ছিল ভারত। বলা হয়েছিল, বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত ১০০টি শহরের মধ্যে ৭৫টিই ভারতে অবস্থিত। ২০২৪-এর এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইন্ডেক্স-এও ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ২৭.৬ পয়েন্ট পেয়ে ১৭৬-এ। প্রসঙ্গত, এই সমস্ত সূচকই প্রস্তুত হয় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে, সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত পদ্ধতি ব্যবহার করে। অথচ, ভারত ক্রমাগত এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে নিজ অবনমন-চিত্রটিকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আশ্চর্য নয়, এ দেশেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং কমিটিগুলির প্রায় ৪৫ শতাংশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক পদ খালি। এত সংখ্যক পদ খালি রেখে দেশে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজটি কত দূর সফল হতে পারে? বায়ুদূষণ এবং মানুষের মৃত্যুর মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা যায়, এমন কোনও জাতীয় পরিসংখ্যান নেই— সংসদে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বক্তব্য। অথচ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে ভারতে প্রায় ১৭ লক্ষ মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। অন্য সরকারি নথিপত্রেও একাধিক বার উভয়ের মধ্যে সংযোগ টানা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সেই তথ্য-পরিসংখ্যান অস্বীকার করা হচ্ছে, বৈশ্বিক সূচকগুলিকে বলা হচ্ছে বিভ্রান্তিমূলক, অবৈজ্ঞানিক। অথচ, পরিবর্তে যে ‘দেশীয়’ পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বহু গোঁজামিলের প্রমাণ উঠে আসছে। পরিবেশ নিয়ে এই কুনাট্যের ফল ভুগছেন দেশের নাগরিক, জীবন ও জীবিকার বিনিময়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Environment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy