E-Paper

কাবুলনামা

রাষ্ট্রপুঞ্জ আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের উপর ‘গুরুতর, ক্রমবর্ধমান, ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন’-এর বিষয়ে সতর্ক করেছে, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জনজীবন থেকে তাঁদের বাদ দেওয়ার নীতিগুলি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:২১

নারী-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তালিবানরা যে অন্ধকার যুগেই এখনও আবদ্ধ, সে কথা বিশ্বব্যাপী জ্ঞাত। প্রশ্ন হল, তালিবানের মিত্র দেশ হিসাবে ভারত ঠিক কী অবস্থান নিতে পারে। ভারতীয় অবস্থানে যে দ্বন্দ্ব বা দুর্বলতা অতীব গভীর, তা পরিষ্কার হয়ে গেল— আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির আলি মুত্তাকির সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক ঘণ্টা পরে আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে দেখা গেল তালিবান-সম লিঙ্গবৈষম্যের প্রতিফলন। আলোচনায় রইলেন না কোনও মহিলা সাংবাদিক! ঘটনার জেরে দেশময় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় সরকারকে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের সাফাই ছিল, এ বিষয়ে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। অথচ বৈঠকটি যখন ভারতের রাজধানীতেই অনুষ্ঠিত হল, তখন ভারত সরকার তার দায় এড়াতে পারে কি? প্রবল চাপে পড়ে শেষ অবধি মহিলা সাংবাদিকদের আফগান দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিতীয় বৈঠক করলেন তালিবান বিদেশমন্ত্রী। তালিবান সরকার যে ‘নারীবিরোধী’ নয়, তার প্রমাণ দিতে কিছু পরিসংখ্যানও তুলে ধরলেন তিনি, যদিও গত জুলাই মাসেই রাষ্ট্রপুঞ্জ আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের উপর ‘গুরুতর, ক্রমবর্ধমান, ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন’-এর বিষয়ে সতর্ক করেছে, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জনজীবন থেকে তাঁদের বাদ দেওয়ার নীতিগুলি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই সব দ্বন্দ্ব ও দ্বিধার কারণেই বৃহত্তর সহযোগিতা সত্ত্বেও ভারত এ-যাবৎ তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক ভূরাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার রণাঙ্গনে আফগানিস্তানের গুরুত্ব ভারতের কাছে ক্রমেই বাড়ছে। বাস্তবিক, চিন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্কের মতো বিশ্বের বহু বৃহৎ শক্তিই আজ তালিবান আফগানিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত গভীরতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আমেরিকাও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগরাম ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাবেই তা স্পষ্ট। সুতরাং কূটনীতির হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোণঠাসা ভারত এখন আঞ্চলিক সমীকরণের জন্যই আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত এবং কাবুলে পুনরায় ভারতীয় দূতাবাস চালু করতে উদ্যোগী। এও মনে রাখতে হবে, মুত্তাকি-র ভারত সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির পটভূমিতে। বহু কাল ধরেই আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাক সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং আফগানিস্তানকে পাক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করায় অসন্তুষ্ট কাবুল। ফলে পাকিস্তান-বিরোধিতার অক্ষেই দিল্লি ও কাবুল এখন স্বাভাবিক মিত্র।

বস্তুত ভারতের ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা বিস্তারের অন্যতম লক্ষ্য— নিরাপত্তা ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং ক্রমপরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। তবে দিল্লিকে অবশ্যই এই সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা এবং ঝুঁকির বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে, বিশেষত যেখানে সহযোগী মিত্র দেশটি মৌলিক ভাবেই অগণতান্ত্রিক। মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ থাকাই এই সঙ্কট স্পষ্ট করে দিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

afganistan Women Right

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy