Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Education

অধিকার-বঞ্চিত

সুযোগের অভাবে এক জন শিক্ষার্থীরও পড়া মাঝপথে স্তব্ধ হইলে, সেই লজ্জা সমগ্র দেশের।     

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৫৩
Share: Save:

অতিমারির আগমন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে পঠনপাঠনের সূচনা ভারতের ছাত্রসমাজকে দুই ভাগে ভাগ করিয়াছে। এক দিকে রহিয়াছে সুবিধা-প্রাপকরা, যাহারা উন্নততর পরিকাঠামো ব্যবহার করিবার সুযোগ পাইয়াছে। অন্য দিকে সুযোগ-বঞ্চিতরা, পরিকাঠামোর অভাবে যাহাদের পঠনপাঠন ভয়ঙ্কর ভাবে ব্যাহত হইয়াছে। ইহাদের এক বৃহৎ অংশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইলেও হয়তো আর কখনও শিক্ষাঙ্গনে পা রাখিবে না। এই কথাগুলি ইতিমধ্যেই বহু আলোচিত। শিক্ষাবিদদের সেই সতর্কবার্তাই সম্প্রতি শোনা গেল সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যেও। সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চ দিল্লির সরকারি সেন্টারকে নির্দেশ দিয়াছে, অনলাইন পঠনপাঠন হইতে যাহাতে গরিব ছাত্ররা বঞ্চিত না হয়, তাহার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করিতে হইবে।

এই নির্দেশ কোনও অ-সাধারণ ভাবনার ফসল নহে। বরং ইহা সংবিধান-বর্ণিত শিক্ষার অধিকারের কথাটি তুলিয়া ধরে। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ধর্ম-বর্ণ-আর্থিক সঙ্গতি নির্বিশেষে প্রত্যেক শিশুকে শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় লইয়া আসিতে সরকার দায়বদ্ধ। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে যে সেই কথাটি স্মরণ করাইতে হইতেছে— ইহা সবিশেষ লজ্জার। অতিমারির ন্যায় কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে সেই ব্যবস্থায় সাময়িক ছেদ পড়িতে পারে মাত্র। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরিয়া এক শ্রেণির পড়ুয়া শিক্ষার অধিকার-বঞ্চিত থাকিলে স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের সদিচ্ছা লইয়া প্রশ্ন উঠে। গত বৎসর মার্চ মাস হইতে এখনও পর্যন্ত দেশের কোথাও পূর্ণোদ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম শুরু করা যায় নাই। সুতরাং বিকল্প উপায় ভাবিবার পর্যাপ্ত সময় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি পাইয়াছে। কেরলের ন্যায় কিছু রাজ্য প্রথম হইতেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং তাহার দ্রুত রূপায়ণের পথে অগ্রসর হইয়া সাফল্য পাইয়াছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অনেক রাজ্যই এই ক্ষেত্রে বহু পশ্চাতে পড়িয়া আছে। যেটুকু উদ্যোগ করা হইয়াছে, তাহাতে অহেতুক বিলম্ব এবং পরিকল্পনার অভাবের ছাপ স্পষ্ট।

এক্ষণে একটি কথা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিলেও অতিমারি-পূর্বের অবস্থায় পৃথিবী আর কখনও ফিরিবে না। সুতরাং, অনলাইন শিক্ষার পথে হাঁটিতেই হইবে। এই সত্যটিকে মানিয়া লইয়া এখন হইতেই প্রস্তুতির প্রয়োজন। কিছু দিন পূর্বে কেরল হাই কোর্ট ডিজিটাল পরিষেবাকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নটি তুলিয়াছিল। মৌলিক অধিকার না হউক, নাগরিক যাহাতে শিক্ষা-সহ বিভিন্ন দৈনন্দিন প্রয়োজনে ডিজিটাল পরিষেবাকে ব্যবহার করিতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা সরকারকে করিতে হইবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইহাই একমাত্র পথ। শিক্ষাব্যবস্থা যদি অনলাইনে চালাইতে হয়, তবে তাহার জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, ট্যাব, ডেটাপ্যাকের সুবিধা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট পৌঁছাইতে হইবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করিতে হইবে। আর্থিক সঙ্গতি নাই বলিয়া অথবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা বলিয়া এক শ্রেণির শিক্ষার্থী এই সুবিধা হইতে দীর্ঘ দিন বঞ্চিত থাকিবে, ইহা চলিতে পারে না। সুযোগের অভাবে এক জন শিক্ষার্থীরও পড়া মাঝপথে স্তব্ধ হইলে, সেই লজ্জা সমগ্র দেশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Online Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE