Advertisement
E-Paper

শুদ্ধিকরণ

২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিধানসভা বা লোকসভার মতো কোনও নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করেনি, এমন দলকেই ‘নিষ্ক্রিয়’ ঘোষণা করা হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪০
এ-হেন পদক্ষেপের কারণ মূলত আর্থিক অনিয়ম আটকানো।

এ-হেন পদক্ষেপের কারণ মূলত আর্থিক অনিয়ম আটকানো।

খাতায়-কলমে নথিভুক্ত, অথচ বাস্তবে অস্তিত্বহীন— সম্প্রতি এমন ৮৬টি রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে ২৫৩টি দলকে ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিহার, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্য নির্বাচক আধিকারিকদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এমন ব্যবস্থা। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিধানসভা বা লোকসভার মতো কোনও নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করেনি, এমন দলকেই ‘নিষ্ক্রিয়’ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি দলগুলি তাদের উদ্দেশে প্রেরিত চিঠি বা নোটিসেরও কোনও জবাব দেয়নি। শেষের অভিযোগটি অবশ্য ‘অস্তিত্বহীন’ দলগুলির ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত। তবে, এ-হেন পদক্ষেপ এই প্রথম নয়। এই বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৩৭টি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করেছে কমিশন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে এই ধরনের পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছিল।

এ-হেন পদক্ষেপের কারণ মূলত আর্থিক অনিয়ম আটকানো। এই ভুয়ো রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির ক্ষেত্রে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। বস্তুত, এই ধরনের ভুয়ো রাজনৈতিক দল কালো টাকা সাদা করার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সুতরাং, এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হলে টাকা নয়ছয়ের অন্যতম একটি উৎসমুখ বন্ধ করা সম্ভবপর হয়। অন্য দিকে, ভুয়ো রাজনৈতিক দলগুলিকে সরিয়ে দেওয়া হলে নির্বাচনী ক্ষেত্রে অনর্থক ভিড়, অনাবশ্যক প্রার্থী তালিকা বৃদ্ধি এবং তার দরুন ভোটারদের বিভ্রান্তি এড়ানো সহজ হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন দ্বারা নথিভুক্ত হলে সে যে বিশেষ সুযোগসুবিধাগুলি পেয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হল, নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান, যা সারা ভারতে অন্য কোনও দল নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবে না। বাস্তবে অস্তিত্বহীন বা নিষ্ক্রিয় দলগুলি যাতে এই সুবিধাটি আত্মসাৎ করতে না পারে, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ সেটিও নিশ্চিত করবে।

কোনও রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ন্যূনতম ভোটপ্রাপ্তি, আসন সংখ্যা প্রভৃতির বিচারে জাতীয় বা রাজ্য স্তরে উন্নীত হয়, তখন সে আরও নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। জাতীয় দলগুলি সরকারের কাছ থেকে তাদের পার্টি অফিস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জমি ও বাড়ি পেয়ে থাকে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল— সমস্ত ধরনের নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলের, সে স্বীকৃত হোক বা না-হোক, অনুদান সংগ্রহ, সম্পত্তি থেকে আয় প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলি আয়করের আওতার বাইরে থাকে। অভিযোগ যে, এই নানাবিধ সুবিধা ব্যবহার করার জন্যই অনেক সময় স্বীকৃত রাজনৈতিক দলও ভুয়ো দল সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করে। অতএব নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের তাৎপর্যটি সহজবোধ্য। যারা শুধুমাত্র আয়কর ছাড় এবং লক্ষ্মীলাভের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয়, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা আখেরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটির প্রতি নাগরিককে শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। তবে, প্রশ্ন থেকেই যায়— বড় দলগুলির যে সব দুর্নীতি অব্যাহত, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থাগ্রহণ নিতান্তই প্রসাধনিক নয় কি?

Election Commission Of India Political parties
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy