Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Artificial Intelligence

বুদ্ধির নিয়ন্ত্রণ

শুধুমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই নহে, সার্বিক ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৭
Share: Save:

বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহিতেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। যন্ত্রের বুদ্ধি। একদা ভাবা হইত, বুদ্ধি এবং অনুমানের ক্ষমতাই যন্ত্রের তুলনায় মানুষকে এক ধাপ আগাইয়া রাখিবে। যন্ত্র জটিল সমস্যার সমাধানে অভ্যস্ত। তাহার স্মরণশক্তিও অসাধারণ। কিন্তু যন্ত্র নিজে ভাবিতে পারে না। পরিস্থিতি আঁচ করিয়া সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও করিতে পারে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর আবির্ভাব সেই ধারণাকে অনেকাংশেই পাল্টাইয়া দিয়াছে। সে দেখাইয়াছে, যন্ত্রও অনুমান করিতে পারে। মানুষই তাহাকে অনুমান করিতে শিখাইয়াছে বিভিন্ন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে। এবং সেই উন্নততর প্রযুক্তিবিদ্যায় ভর করিয়াই বর্তমানে মানবসভ্যতা প্রবেশ করিয়াছে এক ডিজিটাল যুগে। সেখানে জীবনের নানা ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করিতেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষমতা অসীম বলিয়া মানিয়া লইলে বিপদ। তাহার অপপ্রয়োগ হইতে সময় লাগে না। হইতেছেও। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ইইউ এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আইনি পথে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব করিয়াছে।

নিয়ন্ত্রণের এই প্রস্তাবকে ‘মধ্যপন্থা’ হিসাবে গণ্য করা হইতেছে। ইহাতে এক দিকে যেমন নাগরিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত থাকিবে, তেমনই অন্য দিকে উদ্ভাবনী ধারাটিও অক্ষুণ্ণ থাকিবে। এই প্রস্তাবে ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলিকে স্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা হইয়াছে। যে সকল এআই সিস্টেম নাগরিক নিরাপত্তা, অধিকার এবং জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক, সেগুলি অবিলম্বে নিষিদ্ধ হইবে। যেমন— চিনে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া নাগরিকের গতিবিধির উপর নজরদারি করা হয়, এবং ‘সামাজিক মূল্যায়ন’-এর মাধ্যমে স্থির করা হয় তিনি কোনও পরিষেবা গ্রহণ করিতে পারিবেন কি না, সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হইবে না। ‘ফেশিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম’ প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সাবধানি পদক্ষেপ করিবার কথা ভাবা হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়িবে। তালিকাটি দীর্ঘ। চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলিতে তথ্যের অপব্যবহার করা হইলে কড়া শাস্তির মুখে পড়িতে হইবে।

এই নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। শুধুমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই নহে, সার্বিক ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করিয়া ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গবৈষম্যকে উস্কাইয়া দেওয়া হইতেছে, এমন উদাহরণ প্রচুর। ভারতেও তথ্য সুরক্ষা লইয়া বহু বার প্রশ্ন উঠিয়াছে। রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে সুরক্ষা নিশ্চিত করিতে যথেষ্ট পদক্ষেপ করা হয় নাই। ইতিপূর্বে সাড়ে পাঁচ লক্ষ ভারতীয়ের ফেসবুক তথ্য চুরির অভিযোগ উঠিয়াছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-র বিরুদ্ধে। আবার, গত জানুয়ারি মাসে পরিষেবা সংক্রান্ত সুরক্ষা বিধিতে পরিবর্তনের কথা জানাইয়াছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠিয়াছিল, ইহার ফলে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত কথোপকথনের তথ্য ফাঁস হইয়া যাইতে পারে। এই সংক্রান্ত এক মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার কথাটি স্মরণ করাইয়া দিয়াছিল। সুতরাং, ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলিকে সর্বাগ্রে চিহ্নিত করিয়া নিয়মাবলি স্থির করা প্রয়োজন। প্রযুক্তির অগ্রগতি রোধ করাও যেমন কাম্য নহে, তেমনই ব্যক্তিস্বাধীনতা কথাটি অর্থহীন হইয়া পড়িলে মুশকিল। গণতন্ত্রের পক্ষে তাহা সুসংবাদ নহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Artificial Intelligence European union
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE