E-Paper

বিসর্জনের দূষণ

প্রশ্ন হল, কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলির প্রধান ঘাটগুলিতে দূষণ রোধে যে তৎপরতা দেখা যায়, সর্বত্র তা মানা হয় কি?

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৪৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মাটি দিয়ে গড়ে তোলা মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা, এবং পুজো-অন্তে জলেই তার বিসর্জন— এমন রীতি দেখেই অভ্যস্ত এই বঙ্গ। কিন্তু বিসর্জনের কারণে গঙ্গা-সহ অন্যান্য নদী, জলাশয়ের স্বাস্থ্যের অপরিসীম দুর্দশার বিষয়টিও গত কয়েক বছরে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় বার বার উঠে এসেছে। মূর্তিপুজোর রেওয়াজ মেনে সারা বছর ধরেই নদী-জলাশয়গুলিকে দূষণের সেই চাপ সহ্য করতে হয়, পান করতে হয় মূর্তির রঙে, সাজসজ্জায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর প্লাস্টিক, রাসায়নিকের গরলকে। আশার কথা, ক্রমবর্ধমান নদীদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টিতে সচেতনতা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আদালতের রায় অনুসারে গত কয়েক বছরে বিসর্জনের সময় বিশেষত কলকাতার প্রধান ঘাটগুলিতে প্রশাসনের তরফে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বছরও যেমন জলে প্রতিমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল পুরসভা। কাঠামোর কাদাজলে গঙ্গার ঘাট যাতে নোংরা না হয়, তার জন্য ক্রেন দিয়ে কাঠামো তুলে নেওয়ার পরেই তা পাইপের জলে ধুয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরসভার নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গাতে পুজোর সামগ্রী ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ, রীতি পালন এবং দূষণরোধ— উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়াস দেখা গিয়েছে।

প্রশ্ন হল, কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলির প্রধান ঘাটগুলিতে দূষণ রোধে যে তৎপরতা দেখা যায়, সর্বত্র তা মানা হয় কি? সংবাদে প্রকাশ, বসিরহাট মহকুমার পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদীতে বিসর্জনের পরে দ্রুত কাঠামো তোলার ব্যবস্থা করা হয়নি। একই অবস্থা পুকুরগুলির ক্ষেত্রেও। ফলে, নদীর জলে অবাধে মিশেছে থার্মোকল ও পলিথিনের সজ্জা। তদুপরি, নদীর পাড়ে স্তূপাকৃতি হয়ে থাকা পুজোর উপকরণও দূষিত করেছে পরিবেশকে। এই অবস্থা অন্য জেলার ছোট জলাশয়গুলিতেও প্রতি বছর দেখা যায়। মহানগর এবং গঙ্গার ক্ষেত্রে যে বিশেষ নজরদারি থাকে, শহরের সীমা পেরোলেই তা অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। পরিবেশ, জলদূষণ সম্পর্কিত সতর্কবাণী সেখানে যেন ব্রাত্য। তা ছাড়া কাঠামো তুলে ফেলা হলেও মূর্তিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক জলে মিশে যে দূষণ সৃষ্টি করে চলে, তা একই রকম বিপজ্জনক। জলজ বাস্তুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি মাছ-সহ অন্য প্রাণীদের জীবনহানির কারণ। অথচ, তা অ-দৃশ্য থেকে যায় বলে হামেশাই আলোচনার বৃত্ত থেকে বাদ পড়ে।

সুতরাং, সমস্ত বিষয়টিকে নিয়ে বিকল্প ভাবনা জরুরি, অবিলম্বে। শুধুমাত্র পরিবেশের স্বার্থে নয়, মানুষের স্বার্থেও। জল দূষিত হলে, সেই দূষণ শুধুমাত্র জলেই থমকে থাকে না, অচিরেই প্রবেশ করে মানবশরীরে। তা ছাড়া, উষ্ণায়নের করালগ্রাসে যখন পরিস্রুত জলের উৎসগুলি দ্রুত শুকিয়ে আসছে, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রতিটি নদী, জলাশয়কে সুস্থ শরীরে বাঁচিয়ে রাখা অবশ্যকর্তব্য। বিসর্জনের দূষণ সেখানে এক বাড়তি উপদ্রব। সম্প্রতি বেশ কিছু বড় পুজোকে বিসর্জন না দিয়ে প্যান্ডেলেই জলধারার মাধ্যমে গলিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু পুজো তাদের প্রতিমা সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে। উদ্যোগগুলি প্রশংসনীয়। কিন্তু এখনও তা যৎসামান্য। সময়ের সঙ্গে পুজোর ভাবনা, থিম, প্রতিমার আদল, আলোকসজ্জা পাল্টেছে। পরিবেশের প্রয়োজনে বিসর্জনের রীতিতেই বা সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া থাকবে না কেন?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Ganges

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy