E-Paper

ন্যায়ের আশায়

প্রসঙ্গত, প্রত্যর্পণের চুক্তি থাকা সত্ত্বেও, হেডলির ক্ষেত্রে আমেরিকার তরফে সে সুযোগ মেলেনি দিল্লির, যদিও ২৬/১১ হামলায় তাঁর ভূমিকা ছিল আরও বেশি।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রায় সতেরো বছর অতিক্রান্ত। সে দিনের সেই ক্ষতচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। আর যাঁরা স্বজন হারিয়েছিলেন, তাঁদের প্রশ্ন
ছিল একটাই— ন্যায়বিচার কি মিলবে কোনও দিন? সম্প্রতি ভারত সরকারের উদ্যোগে আমেরিকা থেকে ওই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানা-র প্রত্যর্পণ তাই আশা জাগাচ্ছে স্বজনহারা পরিবারগুলির মধ্যে। পেশায় চিকিৎসক রানা আদতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হলেও বর্তমানে কানাডার নাগরিক। তিনি এক সময়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন। অভিযোগ, পাক বংশোদ্ভূত আমেরিকান সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। হেডলির সঙ্গে মিলেই ২৬/১১ মুম্বই হামলার ছক কষেছিলেন রানা, যাতে প্রায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার এক বছর পরে শিকাগো থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও সেখানকার আদালতে তাঁকে কিন্তু মুম্বই জঙ্গিহানার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। বরং কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যোগসাজশ এবং ডেনমার্কের এক দৈনিকের অফিসে হামলার পরিকল্পনার কারণে বেশ কিছু কাল সেখানকার জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। বস্তুত, ভারতের গোয়েন্দা, আইন এবং কূটনৈতিক বিভাগের প্রয়াসে শেষ পর্যন্ত রানাকে ভারতে আনা যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরকালে রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সে দেশের শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান রানা, যে আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, প্রত্যর্পণের চুক্তি থাকা সত্ত্বেও, হেডলির ক্ষেত্রে আমেরিকার তরফে সে সুযোগ মেলেনি দিল্লির, যদিও ২৬/১১ হামলায় তাঁর ভূমিকা ছিল আরও বেশি। ওই ঘটনার আগে থেকেই হেডলির উপর কূটনৈতিক নজর ছিল ভারত সরকারের তরফে। তা সত্ত্বেও কেন সেই নজর এড়িয়ে এমন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা তিনি করতে পেরেছিলেন, সেটাকে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা বললে অত্যুক্তি হবে না। বাস্তবিক, ২৬/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলায় এ-যাবৎ একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসভেরই বিচার করতে পেরেছে ভারত সরকার। ২০০৮ এবং তৎপরবর্তী কালে ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে মূল চক্রীদের বিচারের আওতায় আনতে পাকিস্তানের কাছে বারংবার সহযোগিতা চেয়েছে দিল্লি। অথচ, হাফিজ় সইদ, জাকিউর রহমান লাকভির মতো সন্ত্রাস ছড়ানোর মূল পরিকল্পনাকারীদের এত কাল আড়াল করে এসেছে ইসলামাবাদ। এমতাবস্থায় রানার প্রত্যর্পণ এই হামলাগুলির নেপথ্যে থাকা পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় এবং রাষ্ট্র-বহির্ভূত শক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের সুযোগ করে দিচ্ছে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে। এই তথ্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে। এত কিছু মাঝেও অবশ্য পাকিস্তান রানা-কে ‘কানাডার নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে সমগ্র ঘটনা থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আপাতত স্বস্তি এইটুকুই, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই অব্যাহত রাখতে এবং ২৬/১১-র হানায় নিহতদের ন্যায়বিচার পেতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এখন ভারতের হাতে। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা ভারতের কূটনৈতিক পরীক্ষা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

26/11 Mumbai Attack Mumbai Attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy