Advertisement
E-Paper

নির্বাসনের শিক্ষা

সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের তৎপরতায় সমস্যা মিটল ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি এআইএফএফ-এর ‘উচিত শিক্ষা’ও হল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২২ ০৫:০৯
উঠল নির্বাসন।

উঠল নির্বাসন।

গত ১৫ অগস্ট মধ্যরাতে ভারতের জাতীয় ফুটবল সংস্থা এআইএফএফ-কে নির্বাসিত করেছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা, পরবর্তী ঘটনাক্রম ও পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সে নির্বাসন এগারো দিনে উঠেও গিয়েছে। অক্টোবরে ভারতে হতে চলা মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ, এএফসি কাপে বড় ফুটবল দলের মাঠে নামা ইত্যাদি সবই পড়ে গিয়েছিল অস্তিত্ব সঙ্কটে, সর্বোপরি একটি দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থার নির্বাসনপ্রাপ্তি মানে বিশ্বের দরবারে ভাবমূর্তি চুরমার ও কলঙ্কিত হওয়ার শামিল— সেই আশঙ্কাই স্বল্পকালের জন্য হলেও সত্য হয়েছিল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ক্ষেত্রে। সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের তৎপরতায় সমস্যা মিটল ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি এআইএফএফ-এর ‘উচিত শিক্ষা’ও হল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই শিক্ষা প্রয়োজন ছিল। ফিফা কেন এআইএফএফ-কে নির্বাসিত করল, কী ছিল তাদের মূলগত আপত্তি, তার গভীরে গেলে এই দণ্ডপ্রাপ্তির ন্যায্যতা বোঝা যাবে। সাম্প্রতিক কালে এআইএফএফ পরিচালিত হচ্ছিল ‘কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস’ (সিওএ) দ্বারা, যাকে নিযুক্ত করেছিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। পরিচালন সমিতিরই যেখানে এআইএফএফ-এর চালিকাশক্তি হওয়ার কথা, সেখানে তাকে সরিয়ে প্রশাসক কমিটিকে বসিয়ে দেওয়ার কারণ বিস্তর: দীর্ঘ কাল কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দখল করে থাকা, নির্বাচন না হওয়া, মোট কথা যে নিয়ামক সংস্থা তারই গাফিলতি ও নিয়মভঙ্গের কারণে সংস্থার শাসনতন্ত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া। যার কাজ করার কথা সে তা করছিল না বলেই সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে সিওএ-র আসা; কিন্তু বিশ্ব ফুটবল সংস্থা সিওএ-কেই এআইএফএফ-এর কাজে ‘তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ’ মনে করেছে, অবিলম্বে সিওএ বাতিল করে দ্রুত ফেডারেশনের নির্বাচন করাতে বলেছে। এরই জেরে নির্বাসন, কেন্দ্রীয় সরকারের আসরে নামা, সুপ্রিম কোর্টের নিজেদের নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়া, এআইএফএফ-এর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া।

নির্বাসন উঠল, কিন্তু সমস্যার প্রকৃত সমাধান হল কি না, তা সময়ই বলবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও সিওএ সমস্যার কারণ নয়, তার শিকড় এআইএফএফ-এর পরিচালন সমিতির গাফিলতিতে। সেই গাফিলতিরও অন্তর্ভেদে বেরিয়ে পড়বে আসল সত্য: ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাকে রাজনীতির কুক্ষিগত করে রাখার দুরভিসন্ধি। ভারতের ক্রীড়া-পরিসরের দুর্ভাগ্য, এখানে ফুটবল ক্রিকেট হকি ইত্যাদির জাতীয় সংস্থাই হোক কিংবা অলিম্পিক্সের জাতীয় কমিটি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনীতিকদের দ্বারা শুধু অধ্যুষিত বা প্রভাবিতই নয়, কার্যকালে তাঁদের কথাই শেষ কথা। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোয় যাঁরা প্রকৃত পথ দেখাতে পারতেন, েসই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় স্তরের প্রাক্তন ক্রীড়াবিদদের প্রতিনিধিত্ব ক্রীড়া প্রশাসনে কহতব্য নয়, রাজনীতি আর ক্ষমতাই এখানে নিয়ন্তা, ক্রীড়া সংস্থাগুলি ক্রীড়নক মাত্র। ক্ষমতার যথেচ্ছাচারের কারণেই এ দেশে সুপ্রিম কোর্টকেও ক্রীড়া প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতে হয়, সিওএ-কে দায়িত্ব দিতে হয়, যেমন এর আগেও হয়েছে ক্রিকেটে, এই মুহূূর্তে হকি বা টেবিল টেনিসের জাতীয় সংস্থার ক্ষেত্রেও। ফুটবলে সাময়িক নির্বাসনদণ্ড ভারতের ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতির সার্বিক ছেলেখেলাই বুঝিয়ে দিয়ে গেল।

fifa ban AIFF football India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy