E-Paper

অনুপস্থিত

আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুপস্থিতি দরিদ্র দেশগুলির প্রতি তাদের উপেক্ষাকেই প্রমাণ করল। গত বছরের বাকু সম্মেলনে তার একটি ইঙ্গিত মিলেছিল।

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২০

যে  কোনও আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতাদের মূল আলোচ্য হয়ে ওঠার কথা ছিল জলবায়ু সমস্যার। অথচ, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকেই ব্যস্ত অন্য কাজে, নয়তো নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির খোঁজে। তেমনটিই ঘটেছে সম্প্রতি ব্রাজ়িলের বেলেম-এও। এই বছরের ৩০তম কনফারেন্স অব পার্টিজ়-এর আসর বসেছে এই শহরে। কিন্তু, সেখানে অনুপস্থিত বহু রাষ্ট্রনেতাই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমেরিকা, চিন, রাশিয়া এবং ভারত। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চরম বিতৃষ্ণা প্রকট, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি প্রত্যাশিতই। এই প্রথম বার আমেরিকা থেকে উপস্থিত থাকবেন না কোনও গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকও। জলবায়ু বিষয়ে চিনের মনোভাবও আমেরিকার তুলনায় বেশি আলাদা নয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ততাকে। লক্ষণীয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুপস্থিতিও। একদা দুবাই-এ অনুষ্ঠিত সিওপি-র ২৮তম সম্মেলনটিতে এই ভারতই ঘোষণা করেছিল জলবায়ুর প্রশ্নে ‘দক্ষিণ বিশ্ব’-এর কণ্ঠ হয়ে ওঠার। আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, ২০২৮ সালের সিওপি-র বার্ষিক সম্মেলনটি দেশের মাটিতেই আয়োজন করার। কিন্তু গত বছরের বাকু সম্মেলন থেকেই ভারতের তুলনামূলক মিতবাক উপস্থিতিটি নজর কেড়েছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে উপস্থিত থাকবেন তাঁর প্রতিনিধিরা।

এই বছর নজরে থাকবে, শতাব্দী-শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে, এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে যোগদানকারী দেশগুলি সদর্থক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছয়। সম্প্রতি এর সুরটি বেঁধে দিয়েছেন ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। বলেছেন, “কথাবার্তা যথেষ্ট হয়েছে। সে সব এ বার কাজে করে দেখানোর পালা।” অনুমান, ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্যকে সুরক্ষিত রাখতে ব্রাজ়িল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে এক বৈশ্বিক আর্থিক তহবিল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমাজ়ন বৃষ্টি-অরণ্যের বৃহৎ অংশকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। বেলেম-কে আমাজ়নেরই প্রবেশদ্বার বলা হয়। সেই শহরে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য, বৃষ্টি-অরণ্যের পরিস্থিতির প্রতি রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ বৃদ্ধি।

কাজ বাকি আরও। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের সামনে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উন্নত বিশ্বের কাছে আরও সাহায্যের দাবি তুলবে অনুন্নত অর্থনীতির দেশগুলি। বিস্তারিত বিবরণ চাইবে, কী ভাবে ২০৩৫ সালের মধ্যে জলবায়ু সংক্রান্ত অর্থবরাদ্দের পরিমাণকে বাৎসরিক ১৩০,০০০ কোটি আমেরিকান ডলারে ঠেলে তোলা যাবে। গত বছর বাকু-তেই সম্মতি মিলেছিল এ বিষয়ে একটি পথনির্দেশিকা নির্মাণের। সেই কাজ কত দূর এগোল, উত্তর খুঁজবে দক্ষিণ বিশ্ব। ঠিক এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতি জরুরি ছিল। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুপস্থিতি দরিদ্র দেশগুলির প্রতি তাদের উপেক্ষাকেই প্রমাণ করল। গত বছরের বাকু সম্মেলনে তার একটি ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু ভারতের মতো দেশ এই সম্মেলনকে গুরুত্বসহকারে না নিলে তার নিজেরই স্বার্থহানি হওয়ার আশঙ্কা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Climate Weather Environment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy