E-Paper

সরকারি আনাজ

বর্তমানে বাজারদর যে-হেতু সরকারি দরের প্রায় সমান, তাই চাষি বাড়তি ঝামেলা নিতে নারাজ। খেত থেকেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীকে।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৫:৫০

ফের শোরগোল উঠল আলুর দাম নিয়ে, তবে এ বার বিক্ষুব্ধ ক্রেতা নন, আলুচাষি। সরকার ন’টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু কিনতে চাইছে। তবে সেই সহায়ক মূল্য পেতে চাষিকে নথিপত্র দেখাতে হবে, হিমঘরে আলু সংরক্ষণের ‘স্লিপ’ সংগ্রহ করতে হবে সরকারি দফতর থেকে, নিজের খরচে হিমঘরে আলু পৌঁছেও দিতে হবে। বর্তমানে বাজারদর যে-হেতু সরকারি দরের প্রায় সমান, তাই চাষি বাড়তি ঝামেলা নিতে নারাজ। খেত থেকেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীকে। এই নকশা পরিচিত— সরকারি মূল্যে ধান ক্রয়ের সময়েও সরকারি সহায়তার এমন প্রত্যাখ্যান দেখা যায়। এমনকি সরকারি মূল্য কিছু বেশি থাকলেও, এবং পরিবহণের জন্য সহায়তা দিলেও, বহু ক্ষুদ্র চাষি সরকারি মান্ডিতে ধান নিয়ে যেতে চান না। হয়রানি এবং নানা দুর্নীতির শিকার হওয়ার চাইতে কিছু কম দাম নিয়ে মাঠ থেকে ব্যবসায়ীকে বিক্রি করে দেন ফসল। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি সহায়ক মূল্যের সুযোগ নিচ্ছে ফড়ে-ব্যবসায়ী? এই সঙ্কটের সমাধান অসাধ্য নয়। যেমন, কৃষি সমবায়গুলিকে দিয়ে শিবিরের আয়োজন, অথবা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ফসল ক্রয় করা যায়। তাতে চাষি দীর্ঘ অপেক্ষা এবং দালাল-চক্রের খপ্পর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এই কাজে নিযুক্ত হলে গ্রামের মহিলাদের কিছু বাড়তি অর্থসংস্থানও হয়। অথচ, এই উপায়গুলি সামান্যই কাজে লাগানো হয়। এখনও অবধি সরকারি ধান ক্রয়ের অধিকাংশই হয় কিসান মান্ডি থেকে। ধান, আলু প্রভৃতির ক্রয়ব্যবস্থা সংস্কার না করলে সংশয় থেকেই যাবে, সরকারি সহায়তার টাকা কি চাষির কাছে পৌঁছচ্ছে?

প্রশ্নটি নিয়ে ফের চিন্তা করা প্রয়োজন, কারণ সম্প্রতি রাজ্য সরকার পেঁয়াজ, টমেটোর মতো আনাজও চাষির থেকে সরাসরি ক্রয়ের পরিমাণ অনেক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা ‘সুফল বাংলা’-র দোকানের মাধ্যমে বিক্রি হবে। এর জন্য আনাজ সংগ্রহ কেন্দ্র প্রায় দ্বিগুণ বাড়াবে রাজ্য, আনাজ কিনবে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি। বিক্রির কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ‘সুফল বাংলা’ প্রকল্পটি এখনও অবধি বাজারের ওঠাপড়া থেকে চাষিকে বাঁচাতে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ দাম দেওয়ার লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ করেছে। এর প্রসার বাড়লে, প্রকল্পের সঙ্গে আরও চাষি যুক্ত হলে, ফসলের বাজারদরের হঠাৎ পতনে চাষির বিপর্যয়ের সম্ভাবনা কিছুটা কমতে পারে। পাশাপাশি, ক্রেতাকেও কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে এই প্রকল্প। ব্যবসায়ীদের চক্রান্তে আনাজের দর রাতারাতি চড়ে গেলেও ন্যায্য দাম নেবে সরকারি বিপণি, এমন আশা করা যায়। তবে প্রশ্ন ওঠে, এর শেষ কোথায়? ধান-আলুর পরে আদা-টমেটোও কি তবে সরকারের খাতায় অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকায় ঢুকে পড়ল? খাদ্যপণ্যের ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিক্রি ব্যবসায়ীর কাজ। তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো শিল্প-বাণিজ্য মহলের বিনিয়োগেই তৈরি হওয়ার কথা। তবে রাজকোষের বরাদ্দ বাড়ানো কেন?

অর্থনীতির নিরিখে এ কথায় হয়তো ভুল নেই, কিন্তু রাজনীতির হিসাব অন্য। আলু-পেঁয়াজের দর চড়তে শুরু করলে শাসক দলের আসনে টান পড়ে। অন্য দিকে, ফসল বিপণন এক স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি যে খসড়া নীতি কেন্দ্র প্রকাশ করেছে, সংযুক্ত কৃষক মোর্চা তার বিরোধিতা করেছে। আশঙ্কা, চুক্তি-চাষের পথ খুলে দিয়ে এবং মজুতের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে এই আইন ফসলের বাজার তুলে দেবে বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলির হাতে। তবে চিন্তা থাকে অন্য বিষয়েও। রাজ্য বাজেটের পরিসংখ্যান, চলতি অর্থবর্ষে আনাজ ও ফল মজুতের (‘স্টোরেজ অ্যান্ড ওয়্যারহাউজ়িং’) জন্য বরাদ্দ হয়েছিল আট কোটি টাকা, খরচ হয়েছে ছ’কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বরাদ্দ ছ’কোটি বাহাত্তর লক্ষ টাকা। নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে বৃহৎ অঙ্কের বরাদ্দ ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, খরচ করার সামর্থ্যও থাকা চাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kisan mandi Sufal Bangla Budget Potato Price

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy