E-Paper

স্বাগত সংস্কার

জিএসটি কমায় জিনিসপত্রের দামও কমবে, ফলে অর্থশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে চাহিদা বাড়বে, বিক্রিও বাড়বে।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।

আয়কর দিতে হয় তাঁদেরই, যাঁদের আয় একটি ন্যূনতম স্তরের উপরে। ভারতে যেমন এখন বছরে বারো লক্ষ টাকা অবধি আয়ে কোনও আয়কর দিতে হয় না। জিএসটির মতো পরোক্ষ করে এই সুবিধা নেই— ভারতের ধনীতম ব্যক্তি একটি পণ্য কেনার সময় যে টাকা জিএসটি দেন, দরিদ্রতম ব্যক্তিও সেই পণ্যের উপর ঠিক সেই পরিমাণ জিএসটি দিতে বাধ্য। কাজেই, জিএসটি বাবদ কাকে তাঁর আয়ের অনুপাতে কত টাকা দিতে হচ্ছে, সে হিসাব কষলে দেখা যাবে, যাঁর আয় যত কম, তাঁর ক্ষেত্রে অনুপাতটি তত বেশি। এ সমস্যা শুধু ভারতের জিএসটি-র নয়, যে কোনও দেশের যে কোনও পরোক্ষ করই চরিত্রে এমন— অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায়, রিগ্রেসিভ। কাজেই, পরোক্ষ করের হার হ্রাস সব সময়ই সুসংবাদ। ভারতে জিএসটি-র গড় হার ধারাবাহিক ভাবে কমেছে— বর্তমান সিদ্ধান্তের ফলে তা আরও কমবে। এখানে একটি অন্য প্রশ্ন ওঠে— জিএসটি-র হার কমার ফলে কর রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণেও যে ঘাটতি পড়বে, তার কী হবে? কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাব, ২০২৩-২৪ সালের মূল্যস্তরের ভিত্তিতে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮,০০০ কোটি টাকা। কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয় সরকারের কোষাগারেই টান পড়বে। একটি উপায় হতে পারে এই যে, অতিধনীদের থেকে অন্তত সাময়িক ভাবে হলেও বাড়তি হারে কর আদায় করা। বস্তুত, দেশে আর্থিক বৈষম্য যে রকম ভাবে বাড়ছে, তাতে অতিধনীদের থেকে কর আদায় করে সবার জন্য জিএসটি ছাড়ের ব্যবস্থা করলে তা বৈষম্য হ্রাসের কাজও করবে।

জিএসটি কমায় জিনিসপত্রের দামও কমবে, ফলে অর্থশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে চাহিদা বাড়বে, বিক্রিও বাড়বে। বিহারের নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত নিছক সমাপতন কি না, সে প্রশ্ন আপতত বকেয়া থাকুক। করের হার কমায় যতখানি রাজস্ব ক্ষতি হবে, তার একটি অংশ পুষিয়ে যাবে এই বাড়তি চাহিদার ফলে। কয়েক মাস আগেই আয়করও কমেছে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ফলে দুইয়ে মিলে বাজারে চাহিদা বাড়বে বলেই সরকারের আশা। এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া আমদানি শুল্ক এবং জরিমানার ফলে রফতানির বাজারে ঘাটতি দেখা দেবে। সেই ঘাটতি প্রকৃত পক্ষে যতখানি মারাত্মক, বাজারের প্রতিক্রিয়া তার তুলনায় বেশি হয়েছে। এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়লে তা বাজারকে আশ্বস্ত করবে। কিন্তু, একই সঙ্গে এ কথাটিও মনে রাখা প্রয়োজন যে, করের হার কমানোর মাধ্যমে মানুষের হাতে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির পথে বাজারের চাহিদা ফেরানোর একটি স্বাভাবিক সীমা রয়েছে। যথেষ্ট কর্মসংস্থান না ঘটলে যথেষ্ট চাহিদাও তৈরি হবে না। আয়করে ছাড় বা জিএসটি-র হার কমানোর মাধ্যমে চাহিদা যতটুকু বাড়বে, তাতে কর্মসংস্থানও নিশ্চিত ভাবেই বাড়বে— কিন্তু, সেটুকু যথেষ্ট হবে কি? তবে, একই সঙ্গে তুলনামূলক কম করের হার এবং কম সুদের হার— দুইয়ে মিলে অর্থব্যবস্থায় গতি সঞ্চার করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিতান্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে না-চলে যায়, তবে অর্থব্যবস্থার পক্ষে মুহূর্তটি ইতিবাচক।

জিএসটি-র বর্তমান সংস্কারকে স্বাগত জানানোর আর একটি কারণ হল, এত দিন ভারতে যে করকাঠামো প্রচলিত ছিল, তা ছিল গোটা দুনিয়ায় কার্যত অদ্বিতীয়। এত বহুস্তরীয় এবং এমন জটিল করকাঠামো গোটা প্রক্রিয়াটিকে আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতের ফাঁসে জড়িয়ে রেখেছিল। করের ধাপ কমিয়ে পাঁচ এবং আঠারো শতাংশের দু’টি হারে নিয়ে আসায় সেই জটিলতা কমবে। দ্বিতীয়ত, এই সংস্কারে এমন বহু পণ্য ও পরিষেবার উপরে করের হার কমেছে, যেগুলি নিত্যপ্রয়োজনীয়, অথবা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামকে নিঃশুল্ক ঘোষণা করা। এ বিষয়ে এখনও কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে— আশা করা যায়, অর্থ মন্ত্রক তা দূর করতে সচেষ্ট হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

GST Income Tax

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy