Advertisement
E-Paper

কঠিন পথ

যে সব পণ্য দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি পণ্যের চাহিদা সঙ্কোচনের কারণে ধাক্কা খেয়েছে এই বৃদ্ধি।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩১
জুলাইতে দেশের রফতানি বৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে।

জুলাইতে দেশের রফতানি বৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে।

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল ২২ শতাংশ। এই আপাতদৃষ্টিতে চড়া বৃদ্ধির হারের পিছনে গত অর্থবর্ষের শ্লথ বৃদ্ধির হারের প্রভাব ছিল। কিন্তু, প্রথম ত্রৈমাসিকের আপাত-স্বস্তিও হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক চাহিদায় হ্রাস এবং পণ্যমূল্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি রফতািনর বর্তমান গতিভঙ্গের অন্যতম কারণ। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, জুলাইতে দেশের রফতানি বৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে। এবং অগস্টে তা গত বছরের অগস্টের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১.২ শতাংশ। রফতানি মূল্যও গত বছরের অগস্টের ৩,৩৩৮ কোটির থেকে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩০০ কোটিতে, যা গত ন’মাসে সর্বনিম্ন। তুলনায়, গত বছর অগস্ট থেকে চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত পণ্য আমদানি প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত পেট্রোপণ্য, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র এবং কয়লার ক্রয়বৃদ্ধির কারণে। এ ছাড়াও দেশের বাজারে তামা, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়ামের মতো প্রাকৃতিক পণ্যের পাশাপাশি সোনা, রুপো এবং দামি পাথরের মতো পণ্যের চাহিদার কারণেও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে আমদানি। যদিও আমদানি কর বৃদ্ধির কারণে সোনার আমদানি কম হয়েছে। সুতরাং, এক দিকে দুর্বল রফতানি এবং অন্য দিকে জোরালো আমদানির ফলে গত বছরের এপ্রিল থেকে অগস্টের তুলনায় এ বছর একই সময়ে দু’গুণেরও বেশি বেড়েছে পণ্য বাণিজ্য খাতে ঘাটতি।

অন্য দিকে, যে সব পণ্য দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি পণ্যের চাহিদা সঙ্কোচনের কারণে ধাক্কা খেয়েছে এই বৃদ্ধি। যেমন, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, সুতো, হিরে ও অন্যান্য পাথর বসানো গয়না, ওষুধপত্র, রেডিমেড বস্ত্র ইত্যাদির চাহিদা উন্নত দেশগুলিতে সে ভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও পেট্রোপণ্য, রাসায়নিক, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র এবং চালের রফতানি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার তার জুলাইয়ে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক রিপোর্টে বৈশ্বিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস নামিয়ে এনেছে ৩.২ শতাংশে। ২০২১ সালে এই পূর্বাভাস ছিল ৬.১ শতাংশ। এই অর্থবর্ষের ক্ষেত্রে আগে ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল। মূলত বিশ্ববাজারে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, চিন, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপানের মতো উন্নত দেশগুলিতে মন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারে আর্থিক কাজকর্মে সঙ্কোচনের ফলে বৃদ্ধির মাত্রা নামিয়ে এনেছে তারা। তাদের ধারণা, আগামী বছর এই হার ২.৯ শতাংশে নেমে যেতে পারে। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার পণ্য ও পরিষেবার বৈশ্বিক বাণিজ্যের বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাসও ২০২১-এর ১০.১ শতাংশের তুলনায় এ বছর ৪.১ শতাংশ নামিয়ে এনেছে। আগে যদিও এ বছরের পূর্বাভাস ছিল ৫ শতাংশ। আগামী বছর এই বৃদ্ধির হার আরও সঙ্কুচিত হয়ে ৩.২ শতাংশ হবে বলে অনুমান।

তবে পরিষেবার ক্ষেত্রে আমদানিতে ভাটা পড়লেও, রফতানিতে সন্তোষজনক বৃদ্ধি অব্যাহত থেকেছে। অনুমান করা চলে যে, ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়লেও চাহিদা বেশি থাকায় পরিষেবা খাতে রফতানি বাবদ উপার্জিত অর্থের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেশি থাকবে। তা সত্ত্বেও, পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতির জোরালো অবনতির অর্থ হল, চলতি খাতে ঘাটতির আরও খারাপ পরিস্থিতি। এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা আরও অবনতির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিশ্বজোড়া সঙ্কুচিত আর্থিক অবস্থায়, পরিস্থিতি ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও নিঃসন্দেহে বেশ কঠিন। আন্তর্জাতিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ প্রতিরোধ হতে পারত দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের সুস্বাস্থ্য। কিন্তু হরেক ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত সেই বাজারের মেরুদণ্ডটিকে ভেঙে দিয়েছে। আপাতত বিশ্ববাজারে ভেসে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই বিধেয়।

Export India Economy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy