E-Paper

ঢক্কানিনাদই সার

সন্দেহ নেই, অপরাধস্থলে প্রাপ্ত দাঁতের দাগ, হাতের ছাপ, আক্রোশের চিহ্ন, রক্তের ছিটের বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা, ডিএনএ ম্যাচিং প্রভৃতি কৌশল যত দ্রুত তত সুপ্রযুক্ত হবে।

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

উনিশশো নব্বইয়ের দশকে একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল দেখিয়েছিল, পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ একযোগে জটিল রহস্যের কিনারা করছেন, অপরাধীর চক্রান্ত বিফলে যাচ্ছে। সেই দুঁদে ও কর্মতৎপর আদর্শ রক্ষকের পৃথিবী থেকে বাস্তব যে পঁচিশ বছরে পরেও কত দূরে— চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় এ রাজ্যের ফরেন্সিক বিভাগের দৈন্য। গত দশকে বহু ঢক্কানিনাদে, গৌরবময় প্রতিশ্রুতি এসেছিল, ফরেন্সিকে শুধুমাত্র বেলগাছিয়ার অতিব্যস্ত গবেষণাগারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা নয়, তদন্ত নিশ্ছিদ্র, গতিশীল করতে, লালবাজারের নিজস্ব ফরেন্সিক ইউনিট তৈরি হবে, আধুনিকতম প্রযুক্তি বহাল থাকবে। কিন্তু বছরের পর বছর কাটলেও পরিস্থিতির উন্নতির বদলে অবনতিই দৃশ্যমান। সরকারি সিলমোহরের পাঁচ বছর পরও ‘ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের কাজ শুরু করাই যায়নি। অপরাধের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস অতিক্রান্ত, অকুস্থলে ফরেন্সিক-এর দেখা দুষ্কর। কোথাও ফরেন্সিকের চাহিদাপত্র ‘অপ্রয়োজনীয়’ লিখে বাতিলের ঝুড়িতে, কোথাও পুলিশের আনা নমুনাতেই দায় সারা। কারণ নির্দেশ করা হয়েছে লোকবলের, পরিকাঠামোর অভাব।

সন্দেহ নেই, অপরাধস্থলে প্রাপ্ত দাঁতের দাগ, হাতের ছাপ, আক্রোশের চিহ্ন, রক্তের ছিটের বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা, ডিএনএ ম্যাচিং প্রভৃতি কৌশল যত দ্রুত তত সুপ্রযুক্ত হবে। অপরাধী শনাক্তের সম্ভাবনা দৃঢ় হবে। এটিতে প্রণিধান না দেওয়ার অর্থ বিচারপ্রার্থীকে ন্যায় থেকে বঞ্চিত করা এবং অপরাধীদের মনোবল শক্ত করা, প্রমাণবিলোপের সুযোগ দেওয়া। আইনপ্রণেতারাও সতর্ক। তাই, ১৯৭৩-এর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ নম্বর ধারায় আইনে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের গুরুত্ব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা ছিলই। ২০২৪-এর জুলাইয়ে আইনটিকে কঠোর করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৭৬(৩) ধারায় অকুস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। বিশেষজ্ঞের নমুনা সংগ্রহের কাজটি ভিডিয়ো বা অন্য বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সহযোগিতায় নথিভুক্ত করে রাখারও কথা, রাজ্যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের অপ্রতুলতায় প্রতিবেশী রাজ্যের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ। প্রসঙ্গত, ঠিক এক বছর আগে গত অগস্টে রাজ্যের আর জি কর কাণ্ডে দেখা গেল, প্রমাণ রক্ষায় প্রশাসন কতখানি ব্যর্থ।

অগ্নিকাণ্ড, বোমা বিস্ফোরণের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ কাণ্ডেও ফরেন্সিকের দেরিতে পৌঁছনো ও ততক্ষণে সাক্ষ্য লোপাটের অভিযোগ বহমান। দেশের বহু রাজ্য, বিশেষত দিল্লিতে কিন্তু তদন্তকারীদের সঙ্গে ফরেন্সিক দল পৌঁছয়, তারা না আসা পর্যন্ত, বিদেশের মতোই অপরাধস্থলকে ঘিরে রক্ষা করতেও দেখা যায়। রাজ্যেও নাগরিক সুরক্ষা ও দুষ্কৃতী দমনের স্বার্থে বিভাগটিকে পোক্ত, স্বচ্ছ করতেই হবে। ফরেন্সিক গবেষণাগারের সংখ্যা, কর্মী, যানবাহনের সংখ্যা ইত্যাদি জরুরি পরিকাঠামোকে জেলাস্তর থেকেই উপযুক্ত রাখতে হবে। এ আই ইত্যাদি প্রযুক্তিতে সিদ্ধহস্ত থাকা ও পুলিশকর্মীদের ফরেন্সিক বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক পাঠে ওয়াকিবহাল রাখাও আবশ্যিক। বিজ্ঞান এ ক্ষেত্রে অকল্পনীয় উন্নতি করেছে, এ বার দরকার মানসিকতার উন্নয়ন। তার জন্য তিনটি ধাপের সহায়তা প্রয়োজন। আইনি সংস্কার, প্রোটোকলে অন্তর্ভুক্তি, ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি। এর ব্যবহারিক প্রয়োগে বিলম্ব না করলে প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস কিছুটা ফিরতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Forensic

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy