E-Paper

উদ্বেগ-চিত্র

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত দেশগুলির মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস’ বা এনডিসি জমা দিতে পেরেছে।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:২৬

শীর্ষে ভারত। তবে এই ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখলটি আনন্দ সংবাদ নয়, গভীর উদ্বেগের। উদ্বেগ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে, ভারত এবং বৃহত্তর অর্থে বিশ্বের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্টে প্রকাশ পেল, ২০২৩-২৪ সালে গ্রিনহাউস গ্যাসের সামগ্রিক নিঃসরণের পরিমাণে ঊর্ধ্বগতির সাপেক্ষে বিশ্বে ভারত সর্বোচ্চ স্থানটি দখল করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম-এর ‘এমিশনস গ্যাপ রিপোর্ট’ থেকে আরও জানা গিয়েছে, চিনই সর্বাধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থান এর পরেই। কিন্তু ভারতও ক্রমশ তালিকায় উপরে উঠে আসছে। ২০২৩-২৪ সালে ভারত যথাক্রমে চিন এবং রাশিয়াকে পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ ১৬.৫ কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে। স্বস্তি এইটুকুই, ভারতের মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণটি এখনও বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম। কিন্তু তাতে নিশ্চিন্ত হওয়া চলে না। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের যে কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত পরিকল্পনাটি জমা দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। কিছু দিনের মধ্যেই ব্রাজ়িলের বেলেম-এ শুরু হতে চলেছে ৩০তম কনফারেন্স। সেখানে এই দুই ঘটনার অভিঘাত ভারতকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চলেছে বলেই বিশেষজ্ঞদের অনুমান।

রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টটি নানা দিক থেকেই এক লাল সঙ্কেত। ব্যর্থতা শুধুমাত্র ভারতের নয়। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত দেশগুলির মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস’ বা এনডিসি জমা দিতে পেরেছে। ঘটনাচক্রে, প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত এই দেশগুলিই মোট নিঃসরণের ৬৩ শতাংশের জন্য দায়ী। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ‘এনডিসি’ আসলে জলবায়ু বিষয়ক পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি আগামী দিনে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইয়ের সুস্পষ্ট রূপরেখাটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অথচ, দেশগুলি বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও যথেষ্ট সক্রিয় হচ্ছে না। পরিণতি, প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বহু পিছনে পড়ে থাকছে বিশ্ব। কিন্তু বিপদ তো থেমে থাকছে না। অক্টোবরের শেষ দিকে ক্যাটেগরি-৫ হারিকেন মেলিসা বিপুল শক্তিতে তছনছ করেছে জামাইকা উপকূল।

রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক ধারা অনুযায়ী বিশ্ব শিল্প বিপ্লব-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির পথে হাঁটছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, প্যারিস চুক্তিতে উষ্ণতা বৃদ্ধিকে যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখার কথা বলা হয়েছিল, এই শতকের শেষে সেই বৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে বিশ্বের এক বিরাট অংশের জনজীবন। ভারতেরও কি রেহাই মিলবে তার থেকে? মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণ কম— এই পরিসংখ্যানে ঢাকা পড়ছে না সামগ্রিক নিঃসরণ বৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতিটি। বেলেম-এ ভারত অবশ্যই দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে উন্নত বিশ্বকে চাপ দেবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবিতে। বাস্তব পরিস্থিতির সাপেক্ষে তা একান্ত জরুরিও। কিন্তু এক ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং অন্যতম বৃহৎ নিঃসরণকারী হিসেবে তার নিজের ভূমিকাটিও যথাযথ পালিত হচ্ছে কি না, সেই আত্মসমীক্ষাটি ভারত করবে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

UN Environment Climate Change

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy