Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Kurmi Agitation

রাজ্যের দায়

মণিপুরের মেইতেইদের মতো, জঙ্গলমহলের কুড়মিরা ‘জনজাতি’ পরিচিতি পেতে রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৫:৩০
Share: Save:

ঝাড়গ্রামে কুড়মি নেতাদের গ্রেফতারের পরে ফের কুড়মি বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, বিপরীতে জনজাতি সংগঠনগুলিও শক্তি প্রদর্শনের জন্য তৈরি হচ্ছে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পরিস্থিতি কত ভয়ানক হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— তিনি বলেছেন, মণিপুরের জাতিহিংসার মতো আকার নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গের কুড়মি-জনজাতি সংঘাত। তুলনাটি অসঙ্গত নয়। মণিপুরের মেইতেইদের মতো, জঙ্গলমহলের কুড়মিরা ‘জনজাতি’ পরিচিতি পেতে রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। পাল্টা চাপ দিচ্ছে অন্য গোষ্ঠীগুলি, তুলনায় সচ্ছল, শিক্ষিত কুড়মিদের ‘জনজাতি’ হিসাবে স্বীকৃতি লাভকে যাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন। মণিপুরের মতো, পশ্চিমবঙ্গেও জাতপাতের ভিত্তিতে অস্থিরতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দায়ী করেছেন বিজেপিকে। এটা অপ্রত্যাশিত নয়— রাজনৈতিক ফয়দার জন্য জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ বার বারই উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভারতের ইতিহাস অবশ্য বলে, প্রায় সব দলই জাতি, সম্প্রদায়, ভাষা প্রভৃতির ভিন্নতার জন্য ক্ষোভ-বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ফয়দা তুলেছে। ঝাড়গ্রামের ঘটনাক্রম অবশ্য প্রশ্ন তুলে দেয়, কুড়মি-জনজাতি সংঘাত যাতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে, সে বিষয়ে শাসক দল তথা রাজ্য সরকার কি যথেষ্ট সতর্ক, সাবধান হয়েছে?

দলীয় কার্যসূচি উপলক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝাড়গ্রাম সফরের সময়ে তাঁর গাড়ির পিছনে থাকা মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়িতে পাথর ছোড়া হয়েছে। এ কাজ নিশ্চয় নিন্দনীয়, শাস্তিযোগ্য, দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা করা উচিত। সৌভাগ্যক্রমে ওই ঘটনায় গাড়ি, চালক বা আরোহীর মারাত্মক কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘটনাটিকে কিছু দুর্বৃত্তের অসংযত আচরণ বলে নিন্দা করা, এবং পুলিশকে নিয়মমাফিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করতে বলাই যথেষ্ট হতে পারত না কি? রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খল, উন্মত্ত আচরণ অনভিপ্রেত হলেও অপ্রত্যাশিত নয়, তা ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিও নানা জেলায় দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা গেল, পাথর ছোড়ার ঘটনাটিকে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভাবে বিশেষ রকমের গুরুত্ব দেওয়া হল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের কাছে কুড়মি নেতাদের জানাতে হবে যে, পাথর ছোড়ার অপরাধের সঙ্গে তাঁদের সংস্রব নেই। এতে প্রকারান্তরে কুড়মি সংগঠনগুলির উপরে শাসক দলের অনাস্থারই প্রকাশ ঘটল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শালবনিতে জনসভায় বললেন, কুড়মিরা এই ঘটনা জন্য দায়ী নয়, পিছনে রয়েছেন বিজেপি-সহ বিরোধীরা। তা সত্ত্বেও পুলিশ গ্রেফতার করল ন’জন কুড়মি নেতাকে, এবং জনজাতিদের উপর হিংসার মতো কঠোর ধারা-সহ নানা ধারা আরোপ করল। ফলে মামলাটি গিয়েছে বিশেষ আদালতে, স্থানীয় থানাকে সরিয়ে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সিআইডি-কে।

এই অতি-সক্রিয়তার ফল হল কী? গ্রেফতারের পর রাজেশ মাহাতো প্রমুখ কুড়মি নেতা সংবাদমাধ্যমে বার্তা দিলেন যে, তাঁদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে। গ্রামে গ্রামে কুড়মিদের বিক্ষোভ কর্মসূচি দানা বাঁধছে। জনজাতি সংগঠনগুলিও কুড়মি-বিরোধিতায় তৎপর হয়ে উঠেছে। দুই পক্ষই ঝাড়গ্রাম শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য তৈরি হচ্ছে। ভারতের রাজনীতি সম্পর্কে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা হয়, এই অশান্ত পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষই একে অপরকে দায়ী করতে থাকবে, এবং নিজের দলকে ‘পরিত্রাতা’ রূপে তুলে ধরে ভোটের জন্য আবেদন করতে থাকবে। উন্নয়নের রাজনীতির চাইতে মেরুকরণের রাজনীতি সহজ, তাই হয়তো তার আকর্ষণ বেশি। এই খেলায় পঞ্চায়েত ভোটে কোন দল কতটা লাভবান হবে, সময়ই বলবে। কিন্তু এমন অস্থিরতা শুরু হলে সহজে থামে না, তাই ক্ষতি হবে পশ্চিমবঙ্গের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi Agitation Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE