E-Paper

ক্ষুদ্র পদক্ষেপ

ভুললে চলবে না, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে বটে, কিন্তু তাদের কোনও ভোটাধিকার নেই।

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১২

গাজ়ায় ইজ়রায়েলি আগ্রাসন এবং চরম মানবিক সঙ্কট যত বাড়ছে, গোটা বিশ্বে ততই তীব্র হচ্ছে প্যালেস্টাইনকে পৃথক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি। ইজ়রায়েল এবং তার মূল সহযোগী আমেরিকার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে সম্প্রতি সেই পথেই হাঁটল পশ্চিমের তিন বৃহৎ শক্তি ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েল ও প্যালেস্টাইনের দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বার্তাও দেয় তারা। পরে ফ্রান্স-সহ আরও ছ’টি দেশ যোগ দিল পৃথক রাষ্ট্রের প্রস্তাবে। লক্ষণীয়, বহু কাল যাবৎ আমেরিকাও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের শর্তে রাজি ছিল। প্রধান ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিরও সেই অভিমতই ছিল। অথচ ২০১৪ সালের পর থেকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য কোনও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ দিকে, তাঁর উপরে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির মাঝে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র তিনি স্বীকার করবেন না। আগেকার অবস্থান পাল্টে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক সাধারণ সভাতেও প্যালেস্টাইন প্রসঙ্গে ইজ়রায়েলের সেই বক্তব্যেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলির সাম্প্রতিক ঘোষণা বাকি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, এ-যাবৎ প্যালেস্টাইনিদের যে অসম্মান, হত্যা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার হতে হয়েছে, তার তুলনায় এই ঘোষণাকে বলা চলে— নেহাতই ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ। ভুললে চলবে না, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে বটে, কিন্তু তাদের কোনও ভোটাধিকার নেই। আসলে, প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকে যতগুলি রাষ্ট্রই স্বীকৃতি দিক না কেন, আমেরিকার ভেটো ক্ষমতা অতিক্রম করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তার পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, নিরাপত্তা, শাসনব্যবস্থা, শরণার্থী এবং সীমান্ত নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি না করে কেবল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দ্বারা কোনও ‘প্যালেস্টাইন’ তৈরি হতে পারে না। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-এর অক্টোবরের পর থেকে ইজ়রায়েলের সামরিক আগ্রাসনে গাজ়ায় এ-যাবৎ ৬৫,০০০ বেশি নিহত এবং দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রায় গোটা অঞ্চলটাই এখন দুর্ভিক্ষের কবলে। এর মাঝে সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জেরে এই অঞ্চলে ইজ়রায়েলের সামরিক আগ্রাসন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল।

ফলত শুধু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিদানেই ক্ষান্ত থাকলে চলবে না, সঙ্গে আরও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার আছে। প্রথম কথাই হল, এই কালান্তক মারণযজ্ঞ থামানোর উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে গাজ়ার যুদ্ধ এবং সেই সঙ্গে গাজ়া এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজ়রায়েলের জাতিগত শুদ্ধিকরণের অভিযান বন্ধ করার দাবি তুলুক এই সব দেশ। প্যালেস্টাইনিদের প্রতি নীতি পরিবর্তনে ইজ়রায়েলের উপর গুরুতর চাপ সৃষ্টি করুক। বিবিধ দেশের সরকার, বিশেষত ইজ়রায়েলের পশ্চিমি সমর্থক দেশগুলিকে ভাবতে হবে সামরিক দিকটিও। তেল আভিভের উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা জরুরি হয়ে উঠেছে। ইজ়রায়েলের অনুমোদন প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার শর্ত হতে পারে না— এই সহজ ও সরল কথাটির উপর কি বিশ্বের শুভবোধসম্পন্ন দেশগুলি জোর দিতে পারে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

palestine israel america

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy