Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Congress

বিদ্বেষদুষ্ট

এত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্যকে বাদ রাখিয়া কমিটি গঠন করিবার যে সিদ্ধান্ত কংগ্রেস লইয়াছে, তাহার ভিতর একটি ভয়ানক অন্যায্যতা বর্তমান।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০১
Share: Save:

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বাংলা প্রদেশের ভূমিকা যদিও অনস্বীকার্য, তবুও তাহাকে অস্বীকার করিবার রাজনৈতিক অপচেষ্টা অব্যাহত। গুরুত্বের নিরিখে মহারাষ্ট্র, পঞ্জাবের সহিত বাংলার নাম এক নিশ্বাসে উচ্চারণ না করিয়া উপায় নাই। অথচ, স্বাধীনতার ৭৫ বৎসর পূর্তি উদ্‌যাপন করিতে যখন সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কমিটি গঠন করিল, তখন বঙ্গের কোনও প্রতিনিধি ডাক পাইলেন না। ১১ সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যানের পদে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, যিনি অবিভক্ত পঞ্জাবের সন্তান। কমিটির আহ্বায়ক মুকুল ওয়াসনিক মহারাষ্ট্রের লোক। কমিটিতে জায়গা পাইয়াছেন কেরল, কাশ্মীর, বিহার, অসমের প্রতিনিধিরাও। অথচ, বাংলা সেখানে নাই।

এত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্যকে বাদ রাখিয়া কমিটি গঠন করিবার যে সিদ্ধান্ত কংগ্রেস লইয়াছে, তাহার ভিতর একটি ভয়ানক অন্যায্যতা বর্তমান। তবে, কংগ্রেসের ইতিহাস দেখিলে এই সিদ্ধান্তকে অভূতপূর্ব বলিবার কারণ নাই। স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে কংগ্রেসি নেতৃত্বের মত ও পথের সহিত বারংবারই বাংলার নেতাদের সংঘাত বাধিয়াছে। সহিংস সন্ত্রাসবাদের সহিত গাঁধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের আদর্শগত বিরোধ, এবং সেই কারণে বঙ্গ রাজনীতির এই ধারার সহিত কংগ্রেসের দূরত্বের কথাকে যদি বাদও রাখা যায়, তবুও ইহা সত্য যে, কংগ্রেসের মূলধারায় যে বাঙালি নেতারা ছিলেন, তাঁহারাও যথাযথ গুরুত্ব পান নাই। চিত্তরঞ্জন, সুভাষচন্দ্র-সহ বাংলার নেতাদের ছক-ভাঙা ভাবনা দলেই বিরোধিতার সম্মুখীন হইয়াছিল। কর্মসূচি নিরূপণে গাঁধীর সঙ্গে সুভাষের বিরোধ এবং শেষাবধি সুভাষের ইস্তফাকে এই আঙ্গিকেই দেখা বিধেয়। বস্তুত, বঙ্গ-রাজনীতিতে কিন্তু তাহা স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ঘটনা। পরবর্তী কালেও যে সেই বিমাতৃসুলভ মনোভাব বজায় আছে তাহা আশ্চর্যের, বিশেষত এই সময়ে, যখন নিয়ত ইতিহাসকে বিকৃত করিবার প্রয়াস চলিতেছে।

প্রসঙ্গ যখন স্বাধীনতা, তখন কংগ্রেসের উচিত ছিল সকলকে পাশে লইয়া চলা। কারণ, গৈরিক শাসনে স্বাধীনতার ইতিহাসটিই সর্বাপেক্ষা পরীক্ষানিরীক্ষার বস্তু। যে দল স্বাধীনতা আন্দোলন হইতে নিজেদের সচেতন দূরত্ব বজায় রাখিয়াছিল, হিন্দু ভারতে তাহার অবদান তুলিয়া ধরিতে বিষম প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত। ইতিহাস পুনর্নির্মাণের সেই প্রক্রিয়ায় বাংলা ও বাঙালির প্রান্তিকায়ন বিজেপির পক্ষে অপরিহার্য, কারণ এই রাজ্যের স্বদেশি রাজনীতি যে পর্যায়ে হিন্দুধর্মকে আশ্রয় করিয়াছে, তখনও তাহা হিন্দুত্বের অন্ধ পথে হাঁটে নাই। বস্তুত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বাদ রাখিলে হিন্দুত্ববাদীদের বঙ্গ-ভাঁড়ারে এমন কোনও নেতা নাই, ঔপনিবেশিক আমলে যাঁহার ভূমিকা কোনও অর্থেই আলোচনার যোগ্য। ফলে, বাংলাকে মুছিয়া ফেলিবার রাজনৈতিক তাগিদ বিজেপির থাকিতেই পারে। এমতাবস্থায় ঠিক ইতিহাসটি যুক্তিতথ্য- সহ তুলিয়া ধরা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাকে ব্রাত্য রাখিলে সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকিবে। ইতিমধ্যেই সেলুলার জেলের ইতিহাস হইতে বাঙালি বিপ্লবীরা নীরবে বাদ পড়িতেছেন, দেশপ্রধানের ভাষণে মাতঙ্গিনী হাজরার ভুল পরিচয় উঠিয়া আসিতেছে। এই অবজ্ঞা, এবং অ-জ্ঞানতা অক্ষমণীয়। প্রতিরোধের বদলে কংগ্রেস সেই ধারারই শরিক হইলে, তাহা দুর্ভাগ্যজনক হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Congress Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE