Advertisement
E-Paper

উদ্বেগপ্রহর

মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, পুলিশের কাজ শুধুমাত্র ‘প্রণাম’ উদ্যোগটির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য নিশ্চিত করা নয়, সার্বিক ভাবে শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যাতে শুধুমাত্র প্রবীণরা নন, অন্য নাগরিকরাও এমন বিপদে না পড়েন।

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৪:৩২
Share
Save

শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের নিরাপত্তা দান, দৈনন্দিন প্রয়োজনে পাশে থাকা এবং আইনি সহায়তা— এমন ভাবনা থেকেই ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশ চালু করেছিল ‘প্রণাম’। বর্তমানে তার সদস্যসংখ্যা কুড়ি হাজার অতিক্রম করেছে। আরও এমন নিঃসঙ্গ প্রবীণদের দ্রুত এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্তকরণের জন্য সম্প্রতি আবেদন জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। এই আবেদন করা হয়েছে এমন এক সময়ে যখন একাধিক ঘটনায় শহরের প্রবীণ নাগরিকেরা বিপদে পড়েছেন। কখনও তাঁদের বেঁধে রেখে, কখনও গলায় ছুরি ঠেকিয়ে অবাধে লুটপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। স্মার্টফোন, ডিজিটাল লেনদেনে অস্বচ্ছন্দ এই শ্রেণির নাগরিকরা ডিজিটাল জালিয়াতির কবলেও পড়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁরা বাড়িতে একা, পরিজনরা কর্মসূত্রে অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত। তাঁদের নিরাপত্তা মহানগরে কতটুকু, সে প্রশ্ন উঠছেই।

মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, পুলিশের কাজ শুধুমাত্র ‘প্রণাম’ উদ্যোগটির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য নিশ্চিত করা নয়, সার্বিক ভাবে শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যাতে শুধুমাত্র প্রবীণরা নন, অন্য নাগরিকরাও এমন বিপদে না পড়েন। নিঃসন্দেহে ‘প্রণাম’ কলকাতা পুলিশের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু এর বাইরেও এক লক্ষণীয় সংখ্যক প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা প্রণামের সদস্য নন, হয়তো এই মুহূর্তে হতেও ইচ্ছুক নন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও পুলিশেরই দায়িত্ব। শহরে একাধিক ঘটনা যে দায়িত্বপালন বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পুলিশের অন্দরমহলেরই অভিযোগ, থানায় অফিসারদের বদলির প্রভাব পড়ে প্রবীণদের দেখাশোনা করার কাজটিতে। সাধারণত প্রত্যেক থানায় এক জন করে অতিরিক্ত সাব ইনস্পেক্টর, তাঁর অধীনে দু’জন করে হোমগার্ড বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে নোডাল অফিসারদের একটি দল প্রস্তুত রাখার কথা। কিন্তু, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-এর ঘটনায় নোডাল অফিসার দু’বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কাউকে সেই জায়গায় কার্যভার দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে, এবং আর কোথায় এই ফাঁক রয়েছে, তার অনুসন্ধান করাও পুলিশ প্রশাসনের কাজ। প্রবীণদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষমহল থেকে যে নির্দেশাবলি দেওয়া হয়, সেগুলি যথাযথ পালন হচ্ছে কি না, খুঁজে বার করাও আবশ্যক।

মূল কথা, পুলিশের কাজে জনমনোরঞ্জনকারী উপাদানের চেয়েও বেশি জরুরি, তার নির্দিষ্ট কর্তব্যগুলি ত্রুটিহীন ভাবে পালন করা। প্রবীণরা যে কোনও প্রয়োজনে যাতে পুলিশকে পাশে পান, তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবে যদিও সর্বদা সেই আশ্বাস মেলে না। পাড়ায় জলসায় তীব্র শব্দদূষণে, শব্দবাজির তাণ্ডবে অসহায় প্রবীণ হেল্পলাইনে বার বার ফোন করেও সাহায্য পাননি, এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত শোনা যায়। এই বিষয়গুলির সঙ্গেও প্রবীণদের ‘ভাল থাকা’র বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। অবশ্যই এই দায়িত্ব শুধু আইনরক্ষকদের নয়, বৃহত্তর সমাজেরও। যে আগ্রহ নিয়ে কোভিডকালে প্রবীণদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল যুবসমাজকে, পুলিশকেও, সেই আগ্রহ স্বাভাবিকতা ফেরার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্হিতপ্রায়। সমাজ ফের কতকগুলি ক্ষুদ্র স্বার্থসর্বস্ব বৃত্তে আবদ্ধ। এই বৃত্তগুলির বাইরে এক কোণে একাকী অশক্ত প্রবীণদের উদ্বেগের প্রহর গোনা ভিন্ন অন্য পথ আছে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police pranam Security Senior Citizens

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}