E-Paper

রাজনীতির কাজ

২০০৫ সালের মনরেগা আইন প্রতিটি আবেদনকারীকে অন্তত একশো দিন কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। দুর্নীতির জন্য প্রকল্প স্থগিত রাখা যায়, এমন কথা আইনে নেই। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে তিন বছর প্রকল্প বন্ধ রয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ০৫:৪১

মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প ১ অগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফের শুরু করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। যে কথাটা এত দিন ধরে আইনজ্ঞ, সমাজকর্মী ও কর্মপ্রার্থীরা বলে আসছিলেন, কার্যত তা-ই বললেন বিচারপতিরা— দুর্নীতি প্রতিরোধের সব রকম ব্যবস্থা করা হোক, কিন্তু প্রকল্প চালু হোক। ২০০৫ সালের মনরেগা আইন প্রতিটি আবেদনকারীকে অন্তত একশো দিন কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। দুর্নীতির জন্য প্রকল্প স্থগিত রাখা যায়, এমন কথা আইনে নেই। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে তিন বছর প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। এতে কি নাগরিকের অধিকার লঙ্ঘন হয়নি? আদালত নির্দেশ দিয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রের। যেমন, যে চার জেলা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, সেই জেলাগুলি বাদ দিয়ে বাকি জেলায় কাজ চালু করা যেতে পারে। টাকা নয়ছয় এড়াতে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারে কর্মীদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু কাজ আটকে রাখা, কিংবা কর্মীদের বকেয়া টাকা আটকে রাখা যাবে না। বিচারপতিদের প্রতিটি কথাই যুক্তিপূর্ণ, আইনসম্মত এবং বাস্তবানুগ, সন্দেহ নেই। আক্ষেপ কেবল এই যে, এই রায়ের জন্য দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষা করতে হল রাজ্যবাসীকে। তাঁদের নির্বাচিত দুই সরকার দুর্নীতির মোকাবিলা করে প্রকল্প চালু রাখার মতো নিছক প্রশাসনিক একটি প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারল না। দু’টি দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে মজুরি কত কমেছে, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত বেড়েছে, দারিদ্র ও অপুষ্টি কত গভীর হয়েছে, তা যথারীতি অস্পষ্ট।

তাই এই রায়কে যখন বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষই নিজেদের ‘জয়’ বলে দাবি করে, তখন তা নিষ্ঠুর প্রহসন বলে বোধ হয়। বিজেপি নেতাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারে কেন্দ্র, এই নির্দেশই ইঙ্গিত করছে যে কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় হয়েছিল। আর তৃণমূলের দাবি, এই রায়ে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি প্রতিহত হয়েছে। এ সব অসার আস্ফালন বন্ধ করে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে দু’পক্ষকেই। ভোটের রাজনীতিতে কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে নেতা-আধিকারিকরা এক জটিল জট তৈরি করেছিলেন, যা থেকে বেরোনোর পথ পাচ্ছিলেন না। তৃণমূল কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বিজেপিকে অপদস্থ করতে চেয়েছে। অন্য দিকে, প্রকল্প চালু করলে মনে হতে পারে যে তৃণমূলের চাপের কাছে নতিস্বীকার করছে কেন্দ্র, সেই ভয় ছিল বিজেপি-র। এই অচলাবস্থার অবসান হল বিচারপতিদের দেওয়া সূত্রে। এ ভাবেই কি দলীয় রাজনীতির প্যাঁচ থেকে বার বার আদালত উদ্ধার করবে নাগরিককে?

রাজ্যটি যে-হেতু পশ্চিমবঙ্গ, তাই এই প্রশ্নটি বিশেষ ভাবে করা দরকার তৃণমূল সরকারকে। যা সরকারের নিয়ম-মাফিক কাজ, তাতে এত ত্রুটি থাকছে যে তা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে আদালতে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ মামলায় গোটা প্যানেলই খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের নির্মিত নয়া ওবিসি তালিকার উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সরকারি আবাস প্রকল্প, পানীয় জলের প্রকল্পের কাজে এত অনিয়ম, হিসাব গরমিল ধরা পড়েছে যে, কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি এ রাজ্যে স্থগিত হয়েছে বার বার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দোষারোপ করে প্রচারের রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। প্রতিস্পর্ধা করে রাজ্য নিজস্ব নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছে (বাংলা আবাস যোজনা, কর্মশ্রী) যার অর্থ গুনতে হচ্ছে রাজ্যের তহবিল থেকে। পাশাপাশি, খারিজ কর্মীদের ঘুরপথে নিয়োগ করা, কিংবা ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করে জনরোষ সামলাতে চাইছে। আদালত এই সব বেআইনি কৌশল খারিজ করে দিলে তৃণমূল নেতারা দোষারোপ করছেন ন্যায়প্রার্থীদের। এই অব্যবস্থা, অপেশাদারিত্ব রাজ্যের লজ্জা। ভোটের বাক্সে কতটুকু লাভের জন্য কতখানি ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের, তার হিসাব কষার সময় কি এখনও আসেনি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

100 Days Work Calcutta High Court BJP TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy